যেভাবে বুঝবেন হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন কিনা
হরমোন মূলত আমাদের শারীরিক সকল কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কযুক্ত। শরীরের যদি কোন একটি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা গ্রোথ ডেভেলপমেন্ট ঠিকমতো না হয় তবে বুঝতে হবে হরমোনের সমস্যা রয়েছে। যদিও এ ধরনের সমস্যা অন্যান্য কারণেও হতে পারে।
হরমোন কি
আমাদের শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি গুলোকে বলা হয় হরমোন যা থেকে বিভিন্ন কেমিক্যাল তৈরি হয়ে রক্তের মাধ্যমে সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু এই হরমোনের মাধ্যমেই শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয় সে ক্ষেত্রে হরমোনের সমস্যা হলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা যেতে পারে।
হরমোনের প্রভাবে কি কি হয়
শারীরিক ডেভেলপমেন্ট, প্রতিদিনের অভ্যাস, শরীরের কিছু সাধারণ কার্যক্রম, সন্তান জন্মদান, বেড়ে ওঠা ইত্যাদি ব্যাপারগুলো হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুলতানা মারুফা শেফিন বলেছেন যে আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে উঠতেও হরমোন ব্যবহার করি যাকে বলা হয় কেমিক্যাল মেসেঞ্জার। মূলত এই হরমোনগুলো শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে প্রেরিত হয় এবং মস্তিষ্কের মাধ্যমে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে বলে দেয় যে তাকে এই কাজটি পর্যায়ক্রমে করতে হবে।
হরমোনের এই শৃঙ্খলা বদ্ধতা আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা এবং আচরণের জন্য দায়ী। মানবদেহের ব্রেনের হাইপথেলামাস নামক একটি অংশে সর্বপ্রথম হরমোন তৈরি হয় এবং সেখান থেকে প্রিটোরিগ্রান্ট অংশে চলে আসে। এই অংশ দুটি ব্রেনের সামনে এবং পিছনে অবস্থিত যার ওজন ১০ থেকে ১২ গ্রাম।
এন্টিনকট্রিকো হরমোন ট্রাফিক আমাদের কিডনির সাথে সম্পর্কিতা। তাছাড়া পিটুইটার সামনের অংশ থেকে যে হরমোন তৈরি হয় তারা সরাসরি কাজ করে এবং অন্যান্য গ্রন্থিকে বার্তা পাঠায়।
এর ওপরে রয়েছে সুপার এনালগ্রেন্ড যার রয়েছে দুইটি অংশ। একটি কটেক্স এবং আরেকটি হচ্ছে প্রিনোটার। এগুলো শরীরের লবণের উপর কাজ করে এবং সেক্স হরমোন তৈরি করে।
সেক্স হরমোন এর শুরুটা প্রিটোরটারি হরমোন থেকে আসে যার মধ্যে রয়েছে প্রিটোটারি এইচএফএস এবং এলএস হরমোন। এই দুটি হরমোন মেয়েদের ওভারি এর ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে এবং ওভারি থেকেই ইস্ট্রোজেন প্রোস্টেশন তৈরি করে। আর এখান থেকে সৃষ্টি হয় ডিম্বাণু।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি অন্ড কোষের প্রভাব বিস্তার করে যার ফলে শুক্রাণু তৈরি হয়। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে কিছু পরিমাণ সেক্স হরমোন তৈরি হয় যার প্রভাবে মেয়েদের শরীরে কিছুটা ছেলেদের হরমোন থাকে। কিন্তু ভারসাম্যহীন হলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। মেয়েদের ডিম্বানু এবং ছেলেদের শুক্রানুতে প্রভাব বিস্তার করার কারণে এটি জেনেটিক হরমোন হিসেবে কাজ করে ও মেয়েদের বাচ্চা হওয়ার পরে ব্রেস্ট থেকে দুধ উৎপন্ন করে।
ঠিক এই কারণেই এই হরমোনের পরিমাণ শরীরে বেড়ে গেলে অবিবাহিত মেয়েদের কিংবা যে মেয়েরা গর্ভধারণ করেনি ই তাদের ক্ষেত্রে দুধ নিঃসরণ হতে পারে।
তাছাড়া শরীরের অন্যান্য যে সকল হরমোন রয়েছে সেগুলোর ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে ওজন বেড়ে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন সমস্যা জনিত উপসর্গ দেখা দেওয়া, বন্ধ্যাত্ব, ছেলেদের দুধ নিঃসরণ হওয়া, যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, আচার-আচরণে পরিবর্তন দেখা দেওয়া, ছেলেদের দাড়ি বের না হওয়া, শরীরের লোম না থাকা, মেয়েদের শরীরে লোম অতিরিক্ত হওয়া, ছেলেদের আচরণ মেয়েদের মত হওয়া বা মেয়েদের আচরণ ছেলেদের মত হওয়া, গলার কন্ঠস্বর পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সুতরাং শারীরিক কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার সমস্যা গুলো শেয়ার করতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।