মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জেনে নিন
মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় এর কথা মাথায় আসলেই আমাদের একটা গান মনে পড়ে যায়, ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে রে, তুই সে আমার মন’। আমি যেটা করতে চাই মন সেটা করতে চায় না কিন্তু মন যেটা করতে চায় আমার সেটা করতে ইচ্ছা করে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে মন এবং আমার মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? আসলে এখানে বিষয়টা পার্থক্যের নয়। আপনার এবং আপনার মনের মধ্যকার সম্পর্ক বোঝানোর জন্য আমি উদাহরণ দিচ্ছি।
মনে করুন আপনি একদিন বিকেলবেলা একটা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। যেতে যেতে হঠাৎ রাস্তায় একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখে খুব পছন্দ হযে গেল। কিন্তু সেই মেয়ের অবস্থা অনুযায়ী আপনাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়া কখনো সম্ভব নয়। আপনি জানেন যে যদি আপনি ঐ মেয়েটার পেছনে ঘুরঘুর করতে থাকেন তাহলে পরবর্তী জীবনে আপনাকে পস্তাতে হবে। কিন্তু আপনার মন সেটা মানতে চাইছে না যে মেয়েটিকে আপনি হারিয়ে ফেলেন। ঠিক এইখানেই আপনার এবং আপনার মনের সম্পর্কের বাস্তবতা উঠে আসে। এখন সেই মেয়েটির পেছনে ঘুরে নিজের বিপদ ডেকে আনা থেকে নিজের মনকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবেন? আজ আমরা ঠিক সেই বিষয়েই কথা বলব আর জানব মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলো কী কী?
মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
১. বোঝার চেষ্টা করুন
কোন কিছু শুনেই সেটা না বুঝে কখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন না। আপনি যদি কোন কোম্পানির সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মন যা চায় আপনি তাই করতে পারবেন। কিন্তু সেরকম তাহলে তো আপনার মনকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আপনার কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার মন যেটা চেয়েছিল সেটা হয়তো সম্পূর্ণরূপে ঘুরে দাঁড়াবে।
২. গুজব এড়িয়ে চলুন
আপনার অনেক সময় হয়তো এরকমটা হতে পারে যে কোনো কাজ আপনার করতে মন চাইছে কিন্তু আপনি চাইছেন না কাজটা হোক। সে ক্ষেত্রে কখনো খুব সাধারন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এগোবেন না। আপনার সমস্যা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য একটা সময় ঠিক করুন। এবং সেই সময়টুকু শুধু আপনার সেই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করুন যে কেন কাজটি করা আপনার ঠিক হবে না। যদি আপনি আপনার নিজের পক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য বের করে আনতে পারেন তাহলে সহজেই আপনি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
৩. আপনি পারবেন
আপনি যদি বিশ্বাস না করেন যে আপনি কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারবেন না তাহলে সফলতা কখনো আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নিজে নিজেই আত্মবিশ্বাসী হোন এবং পজিটিভ ধারনা পোষণ করুন। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন, সেটা যাই হোক যেকোনোভাবে আমি পরিবর্তন করতে সক্ষম হব। কারণ সৃষ্টিকর্তার এই সুন্দর পৃথিবীতে কোন কিছুই মানুষের পক্ষে অসম্ভব নয় সেটা হতে পারে আপনার পুরাতন অভ্যাস পরিবর্তন থেকে শুরু করে চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা পর্যন্ত।
আরো পড়ুনঃ হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়
৪. হতাশ হবেন না
হতাশা মানুষের জীবনের অন্যতম একটি বড় সমস্যা। নিজেরমনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যদি আপনি প্রথমবারেই সফলতা পেতে চান তাহলে তা সফলতার জায়গায় আপনাকে হতাশা এনে দেবে। তাই আশা রাখুন যে কখনো না কখনো আপনি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু হতাশ হয়ে গেলে সেখান থেকে উত্তোলন করা আপনার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
৫. পুনরায় মূল্যায়ন করুন
আপনার মন চাইছে এরকম কোন কাজ যদি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে অনেক সময় আপনার মনে হতে পারে যে কাজটা কি আসলে ও ঠিক হচ্ছে? ঠিক সেই কারণেই আপনার পরিবর্তন করার বিষয় গুলো বারবার মূল্যায়ন করুন। আপনি ঠিক পথেই এগোচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করে নিজেকে আগের তুলনায় দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলুন।
৬. আপনার মনকে বিশ্লেষণ করুন
আমরা সবাই জানি যদি আমাদের শত্রু কে আমরা সহজেই পরাজিত করতে চাই তাহলে সবচেয়ে প্রথম কাজটি আমাদের হতে হবে শত্রুর চলাফেরা বিশ্লেষণ করা। তাই এখানে আপনি যেহেতু আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে এটি করার আগে আপনার মনকে বিশ্লেষণ করুন। আপনার মন কোন কিছু কীভাবে চায় কতটা চায় সেই বিষয়গুলি বুঝতে শিখুন। এরপর কোন কাজগুলি করলে আপনি আপনার মনকে অন্যদিকে ঘুরে নিতে পারবেন সেই বিষয়গুলিও আবিষ্কার করতে শিখুন। এটি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করবে।
৭. চর্চা করুন
বড় কোন কাজে যোগদান করার পুর্বে আপনার যদি ছোট ছোট কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে সেটি আপনাকে খুব সহজেই সফলতা এনে দিতে পারে। তাই আপনার মন প্রচন্ডভাবে কোন কিছু চাইছে এরকম কিছু নিয়ন্ত্রণ করার আগে নিয়মিত নিজে নিজে চর্চা করুন। চর্চা করুন ছোট ছোট বিষয় গুলি নিয়ন্ত্রণ করা। ছোট ছোট বিষয় গুলি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে আপনি যে অভিজ্ঞতা বা ক্ষমতা অর্জন করবেন সেটি আপনাকে বড় কোন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সহযোগিতা করবে।
যেমন: আপনি যদি বড় কোন নেতা হতে চান তাহলে আপনাকে ছোট পর্যায় থেকেই এক এক করে উপরে উঠতে হবে। মনে রাখবেন এক লাফে কখনো কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না। কখনো সংসদসদস্য কখনো মন্ত্রী এবং শেষ পর্যন্ত হয়তো প্রধানমন্ত্রীর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন।
৮. খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন না
আরো পড়ুনঃ মাথা ঘোরালে যা করবেন
যেকোনো বিষয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা ছাড়াই হঠাৎ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো আপনার জীবনে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সময় নিয়ে আপনার সমস্যা গুলি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করুন এবং নিজে নিজে বুঝতে চেষ্টা করুন। গভীর চিন্তা ভাবনার পরে একমাত্র সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন। কখনো কোনো কাজ শুরু করেই উপসংহারে চলে যাবেন না।
৯. ভালো না লাগলেও হাসতে চেষ্টা করুন
আমাদেরকে এমন অনেক পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় যখন মনের ভেতরে খারাপ লাগা সত্ত্বেও ঠোঁটের কোণে সুন্দর একটি হাসি। সব সময় হাসতে চেষ্টা করবেন। কারণ যখন আপনি হাসাহাসি করবেন তখন আপনার মন খারাপ থাকলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে এবং হাসাহাসি আপনার মনের শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
১০. নিজেকে পুরস্কৃত করুন
যখন আপনি আপনার মনকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন তখন সেটা আপনার বন্ধুদের সাথে উদযাপন করুন। এছাড়া এই সফলতার জন্য নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করতে ভুলবেন না। কারণ আপনার এই ছোট ছোট উদযাপন এবং পুরস্কার গুলি আপনাকে পরবর্তীতে তীব্র গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রচন্ড উৎসাহিত করবে।
১১. নিজের উপর চাপ কমান
আপনি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন এই বিষয়টা নিয়ে কখনো নিজেকে চাপের মধ্যে ফেলবেন না। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে নিজের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কখনো কোনো কাজের সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং ধ্যান করুন। শারীরিক ব্যায়াম এবং ধ্যান আপনার চিন্তাভাবনা কে প্রখর করে তুলবে সেই সাথে আপনার ওপর চাপ কমিয়ে দেবে।
১২. অন্যকে দেখে উৎসাহিত হন
যখন কোনোভাবেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন না তখন অন্যদের দিকে তাকান। পৃথিবীর ইতিহাসে আপনি এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাবেন যারা নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন। এছাড়া নিজেকে মোটিভেট করতে ইন্টারনেট থেকে মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতে পারেন।
আমাদের এই জীবন টি হল ইচ্ছামত বয়ে চলা একটি নদীর মতো যা কাদা, মাটি, পাথর এবং জল দ্বারা পরিপূর্ণ। এই বয়ে চলা নদীকে যদি আপনি সোজা পথে নিতে চান তাহলে জলের স্রোত কাদামাটি পাথর এগুলো আপনাকে বাধা প্রদান করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধৈর্য ধরে যদি জীবনের নদী টা কে কোনভাবে হাতের মুঠোয় আনতে পারেন তাহলে এক সময় বয়ে চলা নদীর জলের স্রোত কাদামাটি পাথর সবকিছুই আপনার কথা শুনতে বাধ্য হবে। তাই কখনো চেষ্টা করতে ভুলবেন না। আশা করি মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি।
আরো পড়ুনঃ পুরুষাঙ্গে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম