হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক এবং এর থেকে মুক্তির উপায়।
হস্তমৈথুন হল একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আজ আমরা হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক এবং এর থেকে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে জানবো। হস্তমৈথুন এর মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের হাত ব্যবহার করে বীর্য স্খলন বা অর্গাজমের মাধ্যমে যৌনসুখ লাভ করে থাকে। আমাদের সমাজে হস্তমৈথুন সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে।
হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক
বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে স্বাভাবিক হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে। বরং এর মাধ্যমে মানুষ মানসিক সুখ লাভের পাশাপাশি উৎফুল্ল মনের অধিকারী হতে পারে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় হস্তমৈথুন মানবদেহে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অধিক মাত্রায় হস্তমৈথুনের ফলে দেখা দিতে পারেঃ
- লিঙ্গের শিথিলতা।
- দ্রুত বীর্যপাত ঘটতে দেখা যায় যার ফলে সংসার জীবনে নেমে আসে অশান্তি।
- দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এর ফলে যেকোন ব্যাপার মানুষ দ্রুত ভুলে যায়।
- পড়াশোনা এবং অন্যান্য কাজে কোনভাবেই মনোনিবেশ করা যায় না।
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগ ব্যাধি এসে বাসা বাধে।
- শরীরের নার্ভাস সিস্টেম এবং ডাইজেস্ট সিস্টেম এর কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে।
- খাবার হজম ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ক্ষুধামন্দা দেখা যায়।
- শরীরের ওজন কমতে থাকে।
- মানসিক বিকৃতি ও অস্থিতিশীলতা দেখা যায়।
- শরীরে সর্বদা ঝিমুনী ভাব চলে আসে।
- গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত হস্তমৈথুনে বীর্যে শুক্রানুর সংখ্যা কমে যায়। জেনে রাখা ভালো যে সন্তান জন্মদানের জন্য বীর্যে শুক্রাণু দরকার হয়য় ২০ কোটি।
- শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় মেল ইনফারটিলিটি দেখা দেয়।
- সবসময় মাথা ব্যাথা অনুভূত হয়।
- বীর্য পাতলা হয়ে যায়। অল্প একটু উত্তেজনার বীর্য বের হয়ে আসে।
- শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।
- ইরেকটাইল ডিসফাংশন।
মহিলাদের হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক
মহিলাদের ও হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। পুরুষদের জন্য এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন কেউ অত্যধিক পরিমাণে হতমৈথুন করে থাকে। কিন্তু মহিলারা হস্তমৈথুন করলে তাদের সতিচ্ছেদ পর্দা ছিড়ে যায় এবং শারিরিক দুর্বলতা সহ শরীরের উজ্জলতা কমে যায়। পাশাপাশি এটি অবিবাহিত মহিলাদের ভেতরে যৌন ইচ্ছা প্রবল করে তোলে।
হস্ত মৈথুনের উপকারিতা কি ?
হস্তমৈথুনের যেমন অপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তবে উপকারিতা পাওয়া যাবে যদি না এটি অতিরিক্ত করা হয়ে থাকে। পরিমিত পরিমাণে হস্তমৈথুন করলে শারিরিক এবং মানসিক তৃপ্তির পাশাপাশি লিঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। সেই সাথে শরিরে তৃপ্তি বৃদ্ধিকারক রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় ফলে শরিরে ফুরফুরে ভাব অনুভুত হয়।
হস্তমৈথুন সম্পর্কে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ কি?
হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর দিক গুলো নিয়ে ইসলাম ধর্মেও বলা আছে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী হস্তমৈথুন কিংবা নিজে নিজে অর্গাজম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও পাপ কাজ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। যারা দুনিয়াতে নিজের হাত ব্যবহার করে হস্তমৈথুন করবে কেয়ামতের দিন তাদের হাতের আঙ্গুলগুলো গর্ভবতী হয়ে তার সামনে হাজির হবে এবং তাকে লানত করতে থাকবে।
হস্ত মৈথুনের পর কি নামাজ হবে
না। হস্ত মৈথুন করলে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী তার জন্য গোছল করা ফরজ হয়ে যায়। নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই তাকে ফরজ গোছল করতে হবে।
হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাচার উপায়
অতিরিক্ত হস্তমৈথূন্য জনিত সমস্যার একমাত্র সমাধান হল এটি থেকে দূরে থাকা। সার্বিক বিবেচনায় একজন মানুষের হস্তমৈথুন থেকে নিজেকে বিরত রাখা সবচেয়ে উত্তম। এটি একটি অভ্যাসজনিত কাজ এবং মাদকের নেশার মতো মারাত্মক। হস্তমৈথুন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- নিজ ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করুন।
- সব সময় মানুষের মধ্যে থাকার চেস্টা করুন। কখনো একা একা থাকবেন না।
- নিজেকে যথাসম্ভব কাজে ব্যস্ত রাখুন। শুধু শুধু বসে সময় কাটাবেন না।
- সকাল বেলা দ্রুত ঘুম থেকে উঠে শরীর চার্চা করুন।
- একটা নেশা কাটাতে আপনি আরেকটা ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ভিডিও গেম খেলা বা কম্পিউটারে কাজ করা ইত্যাদি।
- রাতে দেরি করে ঘুমাতে যান। এতে করে যতটুকু ঘুম হবে গভীর ঘুম হবে। রাতে জেগে থাকতে হবেনা।
- কোন কাজ না থাকলে বই পড়ুন অথবা মুভি দেখতে পারেন।
- বিকেলের পরে কফি কিংবা ক্যাফেইন যুক্ত কোন খাবার খাবেন না।
- যে সময় গুলোতে আপনার হত মৈথুন করতে মন চায় সেই সময় গুলো চিহ্নিত করুন। ঐ সময় একা একা থাকবেন না।
- কখনো অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করতে মন চাইলে সাথে সাথে শক্ত কোন কাজে লেগে পড়ুন। এতে আপনার ইচ্ছা কমে যাবে।
- সেক্সুয়াল ব্যাপার গুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কখনো এমন পরিবেশে যাবেন না যা আপনাকে উত্তেজিত করে তুলবে।
- ধৈর্য ধারণ করুন। কারণ দীর্ঘ দিনের একটা অভ্যাস দূর করতে আপনার একটু সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক।
- চ্যালেঞ্জ নিন। প্রথমে ২ দিন, তারপর ৫ দিন, তারপর ১০ দিন এভাবে দিন ঠিক করে নিজেকে হস্ত মৈথুন থেকে দূরে রাখুন।
- ফোন সেক্স বা মেয়েদের সাথে উত্তেজনামূলক কথা বার্তা এড়িয়ে চলুন।
- সবসময় বিছানায় যাবেন না।
- এটা একটা বিকৃত অভ্যাস যা আপনাকে বাদ দিতে হবে।এটা মাথায় রাখুন।
- ঘুমানোর আগে মোবাইলে কিংবা কম্পিউটারে উত্তেজনামূলক কোন ভিডিও বা ছবি দেখবেন না।
- বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বাজে দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করুন।
- পারতপক্ষে মোবাইলে বা কম্পিউটারে খারাপ ছবি এবং ভিডিও দেখবেন না।
- সর্বোপরি নিজের শরীর সুস্থ রাখতে আপনাকে এটা পরিহার করতে হবে এটা মাথায় রাখুন।
এগুলো মেনে চলার পাশাপাশি শারীরিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে নিজের মনকে বোঝাতে হবে। এরপরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে নিজের এবং পারিবারিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বিবাহ করা হবে সবচেয়ে উত্তম কাজ।