গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি জেনে নিন | ১৪ টি প্রাথমিক লক্ষণ
পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তবে এটি ছাড়াও গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড মিস হলে অনেক নারী ই মনে করেন যে তিনি গর্ভবতী। তবে এটি ছাড়াও আরও বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখে গর্ভধারণের ইঙ্গিত পেতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে পিরিয়ড মিস না হওয়া সত্বেও গর্ভধারণ করেছেন অনেক মহিলা।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো জেনে নিন
গর্ভাবস্থা এক দীর্ঘ কঠিন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যার ফলে শরীরে একেক সময়ে একেক উপসর্গ দেখা দেয়। তাই গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ অর্থাৎ শরীরে কোন কোন পরিবর্তন দেখে গর্ভধারণের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন আজকে আমরা সে বিষয়ে জানব। তবে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন অন্য একটি লেখা থেকে।
মুড সুয়িং
মুড সুইং হলো গর্ভধারণের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষণ। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মহিলাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। কখনো তারা ফুরফুরে থাকে আবার কখনো চড়া মেজাজ। এটি হরমোনের প্রভাবে হয়ে থাকে। তখন নানা ধরনের অহেতুক ইচ্ছা করে, যেমন খাবার নয় এমন জিনিষও খেতে ইচ্ছা করে। মেয়েদের এই পরিবর্তনকে মুড সুয়িং বলে। তবে পরিবারের লোকজন ও স্বামীর পর্যাপ্ত সহযোগিতায় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মর্নিং সিকনেস
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হল মর্নিং সিকনেস। মর্নিং সিকনেস কে প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। দিনে বা রাতে যে কোন সময় এমন হতে পারে। তবে সাধারণত গর্ভধারণের এক মাস পর থেকে এই সমস্যা দেখা দেয়। চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর বমি শুরু হয় এবং মহিলারাও অস্বস্তি অনুভব করেন। এ সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন স্তরের বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সকালে উঠে গা গুলায় বা বমি ভাব হয়ে থাকে। সাধারণত ৫০ শতাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ছয় সপ্তাহ বা তার আগে থেকে বমি ভাব অনুভূত হয়ে থাকে। কিন্তু ৮০% মহিলারা পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে থেকেই অর্থাৎ প্রথম সপ্তাহ থেকেই বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন।
ক্র্যাম্পিং
ক্র্যাম্পিং অর্থাৎ পেট আঁকড়ে ধরা যা প্রেগনেন্সি শুরুর দিকে হয়ে থাকে। এ সময় ব্যথা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের হতে পারে। আবার অনেক সময় এর সাথে কিছুটা ব্লিডিং বা রক্তপাত দেখা দিতে পারে। তবে মূলত ইম্প্লান্টেশন এর জন্য এটা হয়ে থাকে। উপসর্গ দেখা দিলে ভয় না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সাদা স্রাব
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব হওয়াকেও ধরা হয়। সাদাস্রাব এর ধরন যদি স্বাভাবিক হয় তবে এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে গর্ভাবস্থা ছাড়াও মহিলাদের বিভিন্ন কারণে সাদা স্রাব হতে পারে। সাদা স্রাব বন্ধের উপায় গুলো দেখে নিতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে।
ক্লান্তি বা অবসাদ
ক্লান্তি বা অবসাদ গর্ভাবস্থায় দেহের প্রথম স্বাভাবিক ও কমন একটি লক্ষণ। এ সময় প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা শরীরে অনেক বেশি থাকে যার কারণে ক্লান্তি বা অবসাদ বেশি দেখা দেয়। তবে পর্যাপ্ত ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এর মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ঘন ঘন প্রস্রাব করা
গর্ভাবস্থায় শরীরের হৃদপিণ্ড অত্যধিক পরিমাণে রক্ত পাম্প করে থাকে যার ফলে কিডনি অধিক পরিমাণে তরল ছাকতে বাধ্য হয়। আর এই তরল গিয়ে জমা হয় মূত্রথলিতে। এজন্য প্রেগনেন্সির সময় ঘনঘন প্রস্রাব আসতে পারে। চিকিৎসকরা এই সময় অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ৩০০ মিঃলিঃ লিটার পানি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
স্তনের পরিবর্তন
স্তন নরম হয়ে যাওয়া কিংবা ফুলে যাওয়া গর্ভধারণের অন্যতম একটি লক্ষণ। তাছাড়া অনেক সময় দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই স্তন কোমল ও ভারী হওয়া শুরু করে। পাশাপাশি স্তনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যদি এমন কিছু লক্ষ্য করেন তবে অবশ্যই প্রেগনেন্সি চেক করে নিন।
শরীরের তাপমাত্রা
প্রেগনেন্সির সময় শরীরের তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে। আবহাওয়া গরম থাকলে এবং শারীরিক ব্যায়াম করলে এই তাপমাত্রা আরো বেশি হয় যা নিয়ন্ত্রণে ঘন ঘন পানি খাওয়া প্রয়োজন।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
অনেক মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মাঝে মাঝে কিংবা গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হতে পারে। তবে হরমোন জনিত কারণ ছাড়াও যেকোন সংক্রমনের ফলেও এই ডিসচার্জ দেখা যায়।
মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি
গর্ভধারণের শুরুর দিকে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং হরমোনের স্তর বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শুরুর দিকে তীব্র মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি অনুভব হতে পার।
মুখের স্বাদ এর পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ নারীর মুখ এরশাদের পরিবর্তন ঘটে। তারা এমন কিছু শাকসবজি কিংবা খাবার খাওয়া শুরু করেন যা অতীতে মোটেও পছন্দ করতেন না। আবার এমনও হতে পারে যা অতীতে খেতে পছন্দ করতেন তা এখনকার খেতে চাইছেন না।
মাসিক বন্ধ
গর্ভবতী হওয়ার পর কি মাসিক হয়? এটা অনেকেই জানেন না। জেনে রাখা ভাল যে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া গর্ভধারণের অন্যতম একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে মাসিক মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাধারণত প্রকাশ পায় না। শারীরিকভাবে সুস্থ মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ২৮ দিন পর পর মাসিক হয়। কিন্তু কোন কারণে যদি এটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন। তবে গর্ভধারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পিরিয়ড নিয়মিত করার উপায় গুলো দেখে নিতে পারেন।
বমি বমি ভাব
মর্নিং সিকনেস এর পাশাপাশি গর্ভধারণের সাধারণ চার থেকে ছয় সপ্তাহের শুরুতেই বমি ভাব বা বমি হওয়া দেখা যায়। বমি হবার পেছনে কোন হরমোনের প্রভাব রয়েছে কিনা সেটি এখন পর্যন্ত জানা যায় নি। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং নোনতা জাতীয় খাবার যেমন পটেটো চিপস খাওয়া যেতে পারে। তবে গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয় সে সম্পর্কে আমাদের একটি লেখা রয়েছে।
রক্তচাপ
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে রক্তচাপ একেবারে কমে যায় যার ফলে অনেক সময় মাথা ঘোরার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। রক্তচাপ কমে যাবার ফলে শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। তবে যদি কারো উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হৃদপিন্ডের গতি
গর্ভধারণের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃদপিন্ডের গতি দ্রুত বাড়তে থাকে। এর ফলে শরীরের শান্তি না পাওয়া কিংবা বুক ধড়ফড় করার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত মনে করা হয় যে হরমোনের তারতম্যের কারণে এমনটি ঘটে থাকে।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশ পেতে দেখা যায়। লক্ষন ছাড়া গর্ভবতী হলেও এগুলো কখনও না কখনও প্রকাশ পাবেই। যদি আপনি এরকম কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার প্রেগনেন্সি চেক করিয়ে নিন। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মহিলা এবং গর্ভের সন্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এই সময় নিজের যত্ন নিন। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সময় সর্তকতা অবলম্বন করুন।
Sources: