শরীরের ভালো চর্বি ও খারাপ চর্বি কি কি

শরীরের অন্যতম একটি গঠন উপাদান হল চর্বি। অসংখ্য দেহকোষ প্রাচীর, হরমোন এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হল চর্বি। এই চর্বি আবার ভালো খারাপ হয় কিভাবে সেটি নিয়েই আলোচনা করবো আজ। চর্বির প্রকারভেদের ভিতরে কোলেস্টেরল একটি।

Ask Question
শরীরের ভালো চর্বি ও খারাপ চর্বি কি কি

আরও পড়ুনঃ কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়

কোলেস্টেরল কয়েক ধরনের হয়ে থাকে যেমনঃ

Honey Sponsored
  •  ট্রাইগ্লিসারাইড
  • এলডিএল (LDL)
  • এইচডিএল (HDL)
  • টোটাল কোলেস্টেরল।

এর মধ্যে এইচডিএল(HDL) কে বলা হয় ভালো চর্বি। এলডিএল কে বলা হয় খারাপ চর্বি।কেননা এইচডিএল চর্বি সারা দেহের দূরবর্তী স্থান থেকে আসে আমাদের লিভার বা যকৃতে।যকৃতকে বলা হয় আমাদের দেহের কারখানা। যেখানে প্রায় সমস্ত রকমের বিপাকীয় কার্যক্রম হয়। এখানে চর্বিগুলোর বিপাক হয়ে শরীর থেকে নির্গত হয়ে যায়। আর এলডিএল (LDL) কে খারাপ চর্বি বলার কারন হলো এরা যকৃত থেকে সারাদেহের দূরবর্তী স্থানগুলোতে যায় এবং সেখানে জমা হয়।

কোলেস্টেরল জমার ফলাফল

কোলেস্টেরল জমা হওয়ার প্রধান স্থান হলো রক্তনালী। রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমা হয়ে এথেরেসক্লেরোসিস হয়। যার কারনে রক্তনালীতে রক্তচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। স্রোতহীন জলাশয়ে কচুরিপানা জমলে তার চারপাশে আরো বেশি কচুরিপানা জমতে থাকে। ঠিক একই ভাবে রক্তনালীতে চর্বি জমলে সেখানে আরো বেশি জমতে থাকে চর্বি। ফলে স্বাভাবিক রক্তস্রোত বাধাগ্রস্ত হয়। হার্টের রক্তনালী আক্রান্ত হলে হার্ট অ্যাটাক,মস্তিস্কের রক্তনালীতে জমলে স্ট্রোক,প্যারালাইসিস এসব হওয়ার সম্ভাবনা বহু অংশে বেড়ে যায়।এসব স্থান ছাড়াও যকৃতে চর্বি জমে হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।

রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ার কারন

ডায়াবেটিকস,উচ্চরক্তচাপ, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ধুমপান,অতিরিক্ত মদ্যপান,স্থুল শরীর,কায়িক শ্রমের অভাব, শুধু শুয়ে বসে দিন কাটানো,পারিবারিকভাবে উচ্চ ব্লাড কোলেস্টেরল এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ ইত্যাদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এসব কারনে রক্তনালীতে ভালো চর্বি আর খারাপ চর্বির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কারো ওজন বাড়তে থাকলে, ডায়াবেটিকস হলে এইচডিএল কমে যেতে পারে। যে কারণে ভালো কোলেস্টেরল কমে যায় সেই একই কারনে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। এলডিএল বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি করে প্রদাহের। যার ফলে চর্বি দলা পাকিয়ে জমা হয় রক্তনালীর প্রাচীরে।

খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটি :আমাদের ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যভাসের কারনে প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। আমরা যদি কিছুটা হিসাব নিকাশ করতে পারি তবেই এর থেকে সহজে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু খাবারের চর্বির পরিমান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই চলুন।

ভোজ্য তেল: সয়াবিন সহ অন্যান্য ভোজ্য তেল তৈরি হয় মেশিনে। ঘানি ভাঙা তেলের মত না সেটা।মেশিনে তৈরি তেলকে সুন্দর,বহুদিন স্বাদ গন্ধ অটুট রাখার জন্য হাইড্রোজেন মেশানো হয়। এই হাইড্রোজেন মেশানোকে বায়বীয় ফরমেটের ফরমালিন ভাবতে পারেন। তেলের সাথে হাইড্রোজেন মেশানোর কারনে তেলের চর্বিগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্সফ্যাটে পরিনত হয়। বাহিরে দোকানে যখন একই তেলে দিনের পর দিন সিঙ্গারা সামুচা,বেগুনী সব কিছু ভাজা হয়। তেল বেশি পুড়ে বাতাসের হাইড্রোজেন এর সাথে বিক্রিয়া করে ট্রান্সফ্যাটে পরিনত হয়।

একটি সমীক্ষামতে, ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ লোক বিনা কারণে হার্ট এটাক হয়ে মারা যাবার মূল কারণ হিসেবে ভোজ্য তেলে এই ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতিকে দায়ী করা হয়।

আমরা বাইরে থেকে যে খোলা তেল খাচ্ছি তার কারনে প্রতিদিন ৮-১০ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট আমাদের শরীরে যাচ্ছে। যেখানে দৈনিক লিমিট হলো ২ গ্রাম মাত্র।পরোটা,সিঙ্গারা,সমুচা,তেলচুপচুপে সবজি,ডাল এসবের মাধ্যমে প্রতিদিন শরীরে প্রবেশ করছে অনেক ট্রান্সফ্যাট।

গরু /খাসির মাংস: গরু /খাসির মাংস আসলে রেড মিট। খুব পুষ্টিকর খাদ্য। এতে প্রচুর পরিমানে লৌহ,ফসফরাস,জিংক থাকে। এতে চর্বিও আছে। এসবের  চর্বিতে আছে কিছুটা কোলেস্টেরল, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ট্রান্সফ্যাটও আছে। কিন্তু গরু খাসি প্রতিদিন খায় না সবাই। গরুর সিনার মাংসে ফ্যাট বেশি থাকে ৩০% এর মত। রানের মাংসে ফ্যাট ১০% এর মত।

চর্বির দলা ছাড়া মাংস দুই বেলা মিলিয়ে ৩৫০ গ্রাম যদি খান এক সপ্তাহে তাহলে রক্তনালী ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রায় ১০ টুকরা, মাঝারি পিছ খেতে পারবেন নির্দিধায়। চর্বি যুক্ত মাংস খেলে ১৫০ গ্রাম খান,সপ্তাহে একবার। কিন্তু মাংসের ঝোল, ঝোলে থাকা অতিরিক্ত তেল এসব পরিহার করুন। গরুর চর্বির চেয়ে ঝোলে থাকা সয়াবিন তেল বেশি ক্ষতিকর।

গরুর দুধ: দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। যদিও এটাতে যথেষ্ট ফ্যাট থাকে কিন্তু ট্রান্সফ্যাট নেই, স্যাচুরেটেড ফ্যাটও কম। দিনে এক কাপ পর্যন্ত খেতে পারবেন। দুধে আছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। দুধ থেকে আসা চিজও খেতে পারেন, দিনে একটা স্লাইস (৩০ গ্রাম)।

চিংড়ি মাছ: গরু খাসির থেকে ডাবল কোলেস্টেরল থাকে চিংড়িতে। কাজেই চিংড়ি মাছ খেতে পারবেন ২০০ গ্রাম প্রতি সপ্তাহে। এর বেশি নয়।

ঘি : ট্রান্সফ্যাট বেশি থাকার কারনে ঘি কম খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

ফাস্ট ফুড : ফাস্ট ফুডের আইটেমগুলোতেও স্যাচুরেটেড ফ্যাট ব্যবহার করে। যার ফলে বাইরের দোকানের সিঙ্গারা সমুচা,পরোটার মত এগুলোও পরিহার করা উচিত।

সামুদ্রিক মাছ :সামুদ্রিক মাছ খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার। সামুদ্রিক মাছের তেলে আছে এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল। রক্তনালীর ব্লক খুলে দিবে। তাই বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খান। নদী পুকুরের মাছও ভালো।

আরও পড়ুনঃগরমে ডায়ারিয়া বা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি

প্রতিরোধে যা করবেন

যদি বেশি ভাজাপোড়া,তেল সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে কিন্তু সিক্সপ্যাক নিয়েও আপনার রক্তনালীতে ব্লক হতে পারে। ট্রান্সফ্যাটের কারণে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে। কারণ আপনি ক্যালরি মেইন্টেইন করেই খাচ্ছেন কিন্তু ট্রান্সফ্যাট গিয়ে সব জমছে হার্টের আর্টারির মধ্যে।

সবার শুরুতে খাদ্যাভ্যাস বদলান। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন। উচ্চ রক্তচাপের জন্য যথাযথ চিকিৎসা নিন। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করুন। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সম্ভব না হলে নিয়মিত হাটুন অন্তত ৩০ মিনিট। এতে এইচডিএল (HDL)এর পরিমান বাড়বে। এমন ভাবে হাটবেন যাতে ঘাম বের হয় কিন্তু হাপানোর মত হাটা নয়। কোমড় বা হাড়ের ব্যাথা থাকলে আস্তে হাটা যায়। প্রচুর তাজা শাক সব্জি ,ফলমূল ,উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, মাছ খান। আহারে পরিমিত হোন। সম্ভব হলে রেস্তোরা বর্জন করুন,ঘরে তৈরি খাবার খান।

জেনে রাখা উচিত

যাদের পরিবারে ডিসলিপিডেমিয়া বা রক্তে চর্বি জনিত সমস্যার রোগী আছে তারা ৪০ বছরের পরে নিজেদের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করে নিবেন ডাক্তারের পরামর্শ মত। যদি নরমাল লেভেলে না থাকে তাহলে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করবেন ভবিষ্যতে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে। আর নরমাল লেভেলে থাকলে উপরিউক্ত পদ্ধতি মেনে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে সুস্থ থাকবেন।

RelatedPosts

দিনে কতবার মিলন করা যায়

এক রাতে কতবার মিলন করা যায় | দিনে কতবার মিলন করা যায়

এক রাতে কতবার মিলন করা যায় বা দিনে কতবার মিলন করা যায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি ব্যাপার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত এমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য... Continue

ইমকন ১ খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়

ইমকন ১ খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়

ইমকন ১ খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় ? ইমকন ১ মূলত এক ধরনের গর্ভ নিরোধক ঔষধ। অনিরাপদ যৌন মিলনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি সেবন করতে হয়। তবে... Continue

ফ্রিডম ইনটিমেট এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ

ফ্রিডম ইনটিমেট এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ

ফ্রিডম ইনটিমেট এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ । পিরিওড, ব্যায়াম কিংবা সহবাসের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  এটা মেয়েদের যোনি পরিষ্কার করার একটি সল্যুশন, যা বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি... Continue

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

সাদা স্রাব কী? মেয়েদের সাধারণ শারীরিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া। তবে এই সমস্যার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিশোরী মেয়েদের ক্ষেত্রে। পিরিয়ডের... Continue

food-calories

কোন খাবারে কত ক্যালরি তা জেনে নিন।

কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে তা আমাদের সকলের জন্যই জানা জরুরি। বিশেষ করে যারা ডায়েট করে থাকেন কিংবা খাবারের ব্যাপারে লাগাম এনেছেন তাদের জন্য এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।... Continue

Coral Condom

Coral Condom Uses Price in Bangladesh

PRECAUTIONS Never use oil-based lubricants such as petroleum jelly (Vaseline), baby oil, mineral oil, or hand creams, since these will damage the Coral Condom. Use only water-based lubricants.... Continue