গরমে ডায়ারিয়া বা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি ।

গরমের শুরুর দিকে যদি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে বুঝতে হবে যে ডায়রিয়া হয়েছে। পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি আজকে সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানব।

Ask Question

শীতকালে রোগব্যাধি কম হলেও গরম আবহাওয়া যত বাড়তে থাকে মানুষের শরীরে রোগ ব্যাধির পরিমাণও ততই বাড়তে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের যখন ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করে থাকে তখন ডায়রিয়া দেখা দেয়। রোটা ভাইরাস এবং নোরো ভাইরাস ডায়রিয়াজনিত পাতলা পায়খানার জন্য দায়ী। 

 

Honey Sponsored

ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার কারণ

মূলত দূষিত পানি পান করার ফলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এটি একটি পানিবাহিত রোগ হবার কারণে ডায়রিয়া রোগের জীবাণু পানির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে সংক্রমিত করে ফেলে। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে শহরে ট্যাংক কিংবা সাপ্লাইয়ের পানি পান করার ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। 

তবে শুধু পানের মাধ্যমে যে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় তাই নয়। গ্রীষ্মকালে বাসি পচা খাবার কিংবা বাহিরের হোটেলে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণে ও ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বাইরের খাবার পরিহার করে চলার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা জনিত বিভিন্ন রোগের কারণে ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলি দেখা দিতে পারে।

 

ডায়রিয়ার লক্ষণ গুলি

ডায়রিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া। তাদের পাতলা পায়খানার সঙ্গে অনেক সময় রক্ত কিংবা পিচ্ছিল এক ধরনের পদার্থ যেতে পারে। সেই সাথে যদি অত্যাধিক বিষ ক্রিয়া হয়ে থাকে তবে বমি হতে পারে। 

 

ডায়রিয়া বা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

পাতলা পায়খানা হলে প্রথমত প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন পান করতে হবে। প্রতিবার পায়খানা হবার পর অন্তত দুই থেকে তিন গ্লাস স্যালাইন পান করুন।

স্যালাইন তৈরি করার আগে পরিস্কার পানি এবং সাবান ব্যবহার করে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

প্রতিবার টয়লেট থেকে বের হয়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত এবং পা ধৌত করতে হবে।

যদি প্রসাবে জ্বালাপোড়া করে কিংবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় সে ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে যে শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেছে। তাছাড়া চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া কিংবা জিহবা বা ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 

পাতলা পায়খানার সাথে যদি প্রচন্ড জ্বর দেখা দেয়, রক্ত যায় কিংবা পেট ব্যথা করে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।

এসময় যতটা সম্ভব পারতপক্ষে পাতলা এবং নরম খাবার গ্রহণ করুন। এতে করে পেটের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

পাতলা পায়খানা হলে কখনো ভারী খাবার গ্রহণ করবেন না।

অবস্থা যদি গুরুতর মনে হয় তবে অবশ্যই যতো দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

 

৫ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক আলামিন মৃধা বলেন যে শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করে এমন শিশুরা অনেক সময় দিনে পাঁচ থেকে দশ বার পর্যন্ত পায়খানা করতে পারে। এক্ষেত্রে এটাকে ডায়রিয়া বলা যাবে না। শিশুর শারীরিক পরিস্থিতির যদি স্বাভাবিক থাকে অর্থাৎ হাসাহাসি বা খেলাধুলা করে তাহলে এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। 

কিন্তু যদি শিশুর চোখ বসে যায় বা মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে শরীরে পানি স্বল্পতা হয়েছে। এক্ষেত্রে বুকের দুধের পাশাপাশি বেশি বেশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। খাবার স্যালাইন খেতে না চাইলে পানি খাওয়াতে হবে কিংবা যা খেতে পারে তাই খাওয়াতে হবে। 

 

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে যে সকল খাবার খাওয়া যাবেনা

এখন প্রশ্ন হলো পাতলা পায়খানা হলে কি কি ফল খাওয়া যাবে? যে সকল ফল কিংবা শাকসবজি খেলে পেটে গ্যাস্ট্রিক এর সম্ভাবনা থাকে সেগুলো ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত অবস্থায় খাওয়া যাবেনা। এসকল খাবারের মধ্যে মোটর সুটি ব্রকলি, কর্ন, কুকিজ এবং কেক বিস্কুট জাতীয় মিষ্টি খাবার উল্লেখযোগ্য। 

তাছাড়া একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে ডায়রিয়া হলে ক্যাফেইন কিংবা অ্যালকোহল জাতীয় খাবার ডায়রিয়ার পরিমাণ বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পাতলা পায়খানা আবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায় কখনো ক্যাফেইন কিংবা অ্যালকোহল যুক্ত খাবার খাবেন না।

দুধ কিংবা দুধের তৈরি কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা। কারণ অনেক সময় দেখা যায় দুধের কারনে অনেকে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

কোন ধরনের মাছ মাংস ভাজি করে খাওয়া যাবেনা। তবে আপনি চাইলেই মাছ মাংস ঝোল করে রান্না খেতে পারেন। 

আপনি যদি ডায়েট করে থাকেন তাহলে ডায়রিয়ার সময় তা পরিহার করতে হবে। এমনকি এই সময় শারীরিক ব্যায়াম থেকেও দূরে থাকতে হবে। ডায়রিয়ার সময় এমনিতেই শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তার ওপরে শরীরচর্চা কিংবা ডায়েট করলে এগুলো আরো তীব্র হয়ে উঠবে।

আশা করি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে আমাদের কি কি করা উচিত সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। 

 

যেভাবে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা প্রতিরোধ করা যায়

ডায়রিয়া প্রতিরোধ করার অন্যতম উপায় হল মলত্যাগ করার পর সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে হাত ধৌত করে ফেলা। ইউনিসেফের একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে টয়লেট থেকে বের হয়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় 40 শতাংশ কমে যায়। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের কেউ এ ব্যাপারে সচেতন রাখতে হবে।

যতটা সম্ভব গরমের দিনে বাসি পচা খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। অত্যাধিক গরমের কারণে খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ সকল খাবার গ্রহণ করলে যে কেউই খুব সহজেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই চেষ্টা করতে হবে টাটকা খাবার গ্রহণ করার।

যতটা সম্ভব বাহিরের কিংবা হোটেলের খাবার পরিহার করে চলার চেষ্টা করতে হবে। বাইরের খাবার গুলো অত্যন্ত নিম্নমানের হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় যে হোটেল মালিকরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এক দিনের খাবার আরেকদিনের খাবারের সাথে চালিয়ে দিয়ে থাকে। এতে করে খাবারের বিষক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। 

বাড়িতে খাবার সবসময় ঢেকে রাখার অভ্যাস করতে হবে। কারণ খাবারে যদি ডায়রিয়ার জীবাণু বহনকারী মশার মাছি পড়ে তাহলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরেও মানুষের ডায়রিয়া আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিয়মিত হাতের নখ ছোট করে কাটতে হবে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। হাতের নখ ছোট রাখলে তার ভেতরের ময়লা জমতে পারে না। 

বাড়িতে সব সময় স্যালাইন এবং জিংক ট্যাবলেট রাখা প্রয়োজন। এতে করে ডায়রিয়া কিংবা পাতলা পায়খানার লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা সম্ভব হবে।

RelatedPosts

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয়

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয় | এন্টিবায়োটিক এর সাইড ইফেক্ট

অসুখ হলে বা শরীর খারাপ হলে অনেকেরই প্রায় সময় অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। এখন পর্যন্ত খুব কম ব্যক্তি কে খুঁজে পাওয়া যাবে যে কিনা কখনও অ্যান্টিবায়োটিক খায় নি। এখন... Continue

কালোজিরার তেল এর উপকারিতা

কালোজিরার তেল এর উপকারিতা

কালোজিরা কে বলা হয় ‘মৃত্যু ছাড়া সর্ব রোগের মহৌষধ’। রান্না ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকেই নানা অসুখ-বিসুখে কালো জিরার তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের জন্যই না, কালোজিরার... Continue

হৃদরোগ কি

হৃদরোগ কি | হৃদরোগ হওয়ার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত, রোগ ই হলো হৃদ রোগ। হৃদরোগ কে বলা হয় নীরব ঘাতক। আগে ধারণা করা হতো বয়স্ক মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।... Continue

 ১০ কেন খায়

মোনাস ১০ কেন খায় ?

মোনাস ১০ কেন খায়? মোনাস ১০ মূলত সেবন করা হয় অ্যাজমা, মৌসুমী এলার্জি এবং চিরস্থায়ী এলার্জি নিরাময়ে। মোনাস ১০ বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধ যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হল... Continue

স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায়

স্বপ্নদোষ কি ও কেন হয়? স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায়।

স্বপ্নদোষ হলো পুরুষদের ঘুমের মধ্যে ধাতু নির্গমন। অনেক সময় দেখা যায় যে ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সী পুরুষদের ঘুমন্ত অবস্থায় গভীর রাতে কিংবা ভোরের দিকে মনের অজান্তেই লিঙ্গ... Continue

সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার করা যাবে কি

সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার করা যাবে কি না

সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার ব্যবহার করা যাবে কিনা সেটা নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে। প্রাচীনকালে যখন লুব্রিকেন্ট জেল বলে কোন কিছু ছিল না তখন সহবাসের সময়... Continue