চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম | Chia Seed In Bengali
চিয়া সিড এমন একটি খাদ্য যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু দান করবে। আজকে আমরা চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিডের উপকারিতা, ওজন কমাতে চিয়া সিড কিভাবে কাজ করে এ সব কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
চিয়া সিড কী?
চিয়া সিড দেখতে আকারে ছোট সাদা ও কালো রঙের হয়ে থাকে। এটি সালভিয়া হিস্পানিকা বা চিয়া উদ্ভিদের অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত এই বীজ মধ্যে আমেরিকার কিছু কিছু জায়গায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। আকারে ছোট হয়ে থাকলেও এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। শরীরের ওজন ঠিক রেখে আপনি যদি সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে চান তবে এর চেয়ে আদর্শ খাবার আর হতেই পারে না।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ – Chia Seed In Bengali
চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, দস্তা, তামা, পটাশিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ই, ডি এবং আইরন, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন এবং থায়ামিন সহ খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আকারে ছোট্ট এই বীজে এত বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকায় একে সুপারফুড ও বলা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ স্থায়ীভাবে পুরুষাঙ্গ বৃদ্ধির উপায় । পুরুষাঙ্গের ব্যায়াম | লিঙ্গ বড় করার উপায়
এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে চিয়া সিডে রয়েছে দুধের চেয়ে 5 গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে 7 গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, স্যালমন মাছের থেকে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে আপনি যদি সেলমন মাছ কিংবা কমলা কিনে খেতে না পারেন তবে স্বল্পমূল্যের এই বীজ সেবনের মাধ্যমেই তার থেকে বেশি পুষ্টি উপাদান পেতে পারেন।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়ায় এর রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা। শরীরের ওজন কমানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিনের চাহিদা পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সেবনের নিয়মের কারণে কমবেশি পেটের সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি। ঘরোয়া পদ্ধতিতে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিড মানবদেহে শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন থাকায় শরীরের জন্য একটি উপাদেয় খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
- তাছাড়া শরীরে পুষ্টি ও বিভিন্ন উপাদানের অভাব পূরণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে বহু গুনে।
- বর্তমানে ওজন কমানোর অন্যতম একটি আদর্শ খাদ্য হিসেবে চিয়া সিডের বিকল্প নেই। এতে চর্বি এবং আমিশের পরিমাণ কম থাকায় শরীরের ওজন কমায়, সেই সাথে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল এর ভারসাম্য রক্ষা করে কর্ম ক্ষমতা বজায় রাখে।
- চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- এতে এক গ্লাস দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- মলাশয় পরিষ্কার রাখে ফলে করুন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে দেয়।
- প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে।
- চিয়া সিড ইনসোমনিয়া বা নির্ঘুম রাত কাটানো থেকে দূরে রাখে। অর্থাৎ যাদের রাতে ঘুম হয় না তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান।
- ক্যান্সার রোধ করে।
- হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
চিয়াসিড যে শরীরের জন্য কতটা উপকারিতা উপরের কার্যকারিতার তালিকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চা নষ্ট করার পর কি কি সমস্যা হয়?
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড এবং হাফ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানিতে চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও চিয়া সিড খাওয়ার সময় রুটি বা ফলের রস এর সাথে খেতে পারেন। এভাবে যদি ৩০ দিন নিয়মিত খাওয়া যায় তবে শরীর ও সুস্থ থাকবে এবং শরীরের ওজন অনেক অংশে কমে যাবে।
আরো পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি? কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম। Garlic Benefits
বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড নির্দিষ্ট নিয়মে পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ছোট বাচ্চাদের মেধার বিকাশেএটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি বেড়ে ওঠার সময় বাচ্চাদের শরীরে ভিটামিন মিনারেল ও সব ধরনের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি খাবারেরই কিছু ক্ষতিকর দিক এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে বেশিরভাগ খাবারের ক্ষেত্রে এটি নির্ভর করে খাওয়ার নিয়মের ওপর। চিয়া সিড এ প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও রয়েছে কিছু অপকারিতাও যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি খেলে যে সকল সমস্যা হতে পারে সেগুলো হল–
- পরীক্ষায় দেখা গেছে যে চিয়া সিড অত্যন্ত বেশি পরিমাণে ব্যবহারে প্রোস্টেট ক্যানসার ও স্তন ক্যান্সার কে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই সীমিত পরিমাণে এটি সেবন করা উচিত। তাছাড়া আপনি যদি বিশেষ কোন কারণে চিয়া সিড সেবন করে থাকেন তবে তার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- চিয়া সিড এ ফাইবার থাকায় অতিরিক্ত সেবন করলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে খাবারের রুচি কমে যাওয়া এবং হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
- চিয়া সিড মূলত খাওয়া হয় ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটি যদি অত্যাধিক পরিমাণে সেবন করা হয় তবে শরীরের ওজন মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে কমে যেতে পারে। এতে করে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সতর্কতা
শারীরিক কোন সমস্যার জন্য নিজে থেকে কোন ওষুধ কিংবা বিশেষ কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায় হল বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম মেনে সেবন করলে সাধারণত কোন সমস্যা দেখা যায় না। তবে এটি খাওয়ার ফলে যদি পেটের সমস্যা কিংবা অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয় তবে যত দ্রুত সম্ভব এটি খাওয়া বন্ধ করুন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।