৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় গুলো জেনে নিন
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় জানতে চান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। কারণ ঘরে বসে ওজন কমানোর উপায় আমরা সবাই জানতে চাই। কারণ শরীরের ওজন বাড়াতে ঘরে বসে শুধু বেশি বেশি খেলেও ওজন কমানোর জন্য আমাদের অনেক সময় ঘরের বাহিরে ও দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন বেশিরভাগ সময়েই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্ম দিয়ে থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে ই আমরা আপনাদের সামনে ওজন কমানোর উপায় গুলো তুলে ধরছি। তবে আপনি যদি প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য নয়। তাছাড়া এটি প্রায় অসম্ভবও বটে।
ওজন কমানো কেন দরকার?
শরীরের অতিরিক্ত ওজন সবসময়ই একটা বিব্রত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যানবাহনে কিংবা কোন জায়গায় যাতায়াতের সময় অথবা বিভিন্ন পরিস্থিতির সাপেক্ষে ওজন নিয়ে অনেকে সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। আবার অনেক সময় বিশেষ কোনো চাকুরি অথবা প্রমোশনের জন্য বাধ্যগতভাবেই ওজন কমাতে হয়। হালকা ওজন নিয়ে আপনি যতটা সহজে নড়াচড়া এবং কাজকর্ম করতে পারবেন ভারী ওজন নিয়ে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের কারণে কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, অলসতা ভাব চলে আসা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা ও আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই সকলের জন্যই ওজন কমানো জরুরী।
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
ঘরে বসে ওজন কমানোর এই উপায় গুলো অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই ৭ দিনে প্রায় ১০ কেজি কমিয়ে ফেলতে পারেন আপনার শরীরের বাড়তি ওজন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে ওজন কমানোর এই উপায়গুলো অবলম্বন করতে গিয়ে যেন শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অন্যান্য সমস্যায় পড়তে না হয়। চাইলে আপনি কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েও এই উপায় গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
শারীরিক ব্যায়াম
দ্রুত ওজন কমানোর অন্যতম একটি উপায় হল নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি সাত দিনে ১০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলাও সম্ভব। তবে স্বাভাবিকভাবে আপনি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে এক মাসে প্রায় ১০ কেজি কিংবা তারও বেশি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন। এজন্য প্রতিদিন আপনাকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা হাটাহাটি, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। এজন্য আপনাকে যে বিশাল কোন পার্কে যেতে হবে বিষয়টা এমন নয়। আপনি চাইলে আপনার ঘরের ভেতরেই ব্যায়াম করার বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে প্রতিদিনের শারীরিক ব্যায়াম সম্পন্ন করতে পারেন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
শরীর সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করা আমাদের সকলের জন্য জরুরী। একজন সুস্থ মানুষ যদি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় তবে তার শরীরের ওজন এমনিতেই বেড়ে যাবে। সুতরাং প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণের পাশাপাশি দিনের বেলা ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন। রাতে দ্রুত ঘুমাতে যান এবং ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। এতে করে ওজন ও বাড়বে না এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন
শরীরের ওজন বাড়াতে চর্বি বা তেল জাতীয় খাবার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। সুতরাং ওজন কমাতে হলে আপনাকে অবশ্যই তেল চর্বি জাতীয় খাবার একেবারে কমিয়ে দিতে হবে। আরও পড়ুনঃ মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
দ্রুত ওজন কমানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। অন্যান্য খাবার কম খেয়ে নিয়মিত শাক সবজি ফলমূল খেলে শরীরের ওজন একদিকে যেমন কমে যায় তেমনি অন্যদিকে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে। পাশাপাশি বাইরের তেল চর্বি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে।
পানি পান করুন
আপনি যদি তিন বেলা অল্প খাবার খেতে চান তবে খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে করে আপনার পেট একটু ভরে উঠে আপনাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে রক্ষা করবে। সেই সাথে আপনার হজম শক্তিও ঠিক থাকবে।
চাপ মুক্ত থাকুন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও বিষণ্যতা শারীরিক ওজন বাড়ায়। সুতরাং যতটা সম্ভব চাপমুক্ত থাকুন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করুন। নিয়ম তান্ত্রিক জীবনযাপন মানুষকে সবদিক থেকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
রাতে দ্রুত ঘুমান
আপনার যদি অতিরিক্ত রাত জাগার অভ্যাস থেকে থাকে তবে আজ থেকেই তা পরিহার করুন। অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে বেশি ক্ষুধা লাগে এবং শরীরে অতিরিক্ত খাবার চলে যায়। এতে করে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। সুতরাং রাতে দ্রুত ঘুমাতে যান এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ুন।
লেবু জল খান
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় হলো প্রতিদিন খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবু এবং মধু মিশিয়ে পান করুন। এর ফলে আপনার শরীর থেকে অনেকটা চর্বি ঝরে যাবে এবং মধু ও লেবু থেকে প্রাপ্ত শক্তি আপনার শরীরকে এনার্জেটিক রাখতে সহায়তা করবে।
সালাদ খান
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সালাদ গ্রহণ করুন। বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে সালাদ খেতে পারেন যা ভাতের অল্টারনেটিভ হিসেবে কাজ করবে। সেই সাথে যদি একটু টক দই মিশিয়ে নিতে পারেন তাহলে আরও বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব।
হালকা খাবার খান
সকাল ১১ টার দিকে আপনি হালকা কিছু খাবার গ্রহণ করতে পারেন যেমন ডাবের পানি, শসা, গ্রিন টি ইত্যাদি। এতে করে দুপুর বেলা অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
চিনি খাওয়া বন্ধ করুন
চিনিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যে কারণে এটি শরীরের ওজন বাড়ানোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক চামচ চিনিতে ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে। তাই খালি চিনি খাওয়া কিংবা চায়ের সাথে চিনি ও দুধ খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিন।
গ্রিন টি
শরীর থেকে ক্যালরি ক্ষয় করতে গ্রীন টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন চার কাপ করে যদি এক সপ্তাহ গ্রিন টি পান করা হয় তবে শরীর থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম ক্যালোরি দূর করা যায়। তাছাড়া এতে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় হিসেবে গ্রিন টি অন্যতম।
স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করুন
যে সকল অভ্যাসের কারণে আপনার শরীরের ওজন বেড়ে গেছে বলে আপনার মনে হয় সে সকল অভ্যাস থেকে নিজেকে বের করে আনার চেষ্টা করুন। বাইরের খাবার খাওয়া, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত চাক কফি, কোলড্রিংস শরীরের ওজন বাড়ায়। এ সকল অভ্যাস ত্যাগ করে নিয়ম তান্ত্রিক স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করুন এবং সুস্থ থাকুন।
সতর্কতা
প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় গুলো এখানে আলোচনা করা হয়েছে। তবে অনেক সময় দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে অনেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ওজন কমানোর উপায় গুলি অবলম্বন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে শারীরিক পরিস্থিতির উপরে। যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।