ইরেকটাইল ডিসফাংশন থেকে মুক্তির উপায়

ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা পুরুষত্বহীনতা বলতে বোঝানো হয় যৌন সঙ্গমের সময় লিঙ্গের উত্থান না হওয়াকে। অর্থাৎ কোন পুরুষ যদি তার সঙ্গিনীর সাথে যৌন সঙ্গমের সময় যোনিত লিঙ্গ প্রবেশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্ত অথবা উত্তেজিত করতে না পারেন তবে তিনি ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা পুরুষত্বহীনতায় ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া হয়। এ ধরনের সমস্যা যদি কারো মাঝে মাঝে দেখা যায় তবে সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু একই পরিস্থিতি যদি বারবার হতে থাকে তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আজকে আমরা জানবো ইরেক্টাইল ডিসফাংশন কেন হয় এবং এর থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি কি সে সম্পর্কে।

Ask Question
ইরেকটাইল ডিসফাংশন

ইরেকটাইল ডিসফাংশন কেন হয়?

ইরেকশন বলতে বোঝানো হয় লিঙ্গ উত্তেজিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে। লিঙ্গে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত ও স্নায়ু সরবরাহ হয় তবে ইরেকশন ঠিকঠাক মতো হয়ে থাকে। যৌন উত্তেজনা কালে লিঙ্গে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায় যার ফলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে সে সময় লিঙ্গ অত্যাধিক শক্ত হয়ে যায়। কোন কারণে যদি লিঙ্গে রক্তের প্রবাহ অথবা স্নায়ু সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় তখন লিঙ্গ আর উত্তেজিত হতে পারে না। এক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি ইরেকটাইল ডিসফাংশন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে এই ডিসফাংশন হতে পারে যেগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ গুলি হল

  • ডায়াবেটিস
  • অতিরিক্ত রক্তচাপ
  • কিডনি রোগ
  • যক্ষা
  • ধমনী শব্দ ও সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া
  • শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
  • শরীর অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া
  • লিঙ্গের আশেপাশের জায়গায় ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়া
  • লিঙ্গের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
  • বয়স বেড়ে যাওয়া
  • লিঙ্গের ব্যথা হওয়া
  • সিফিলিস
  • মাথা কিংবা মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়া
  • অতিরিক্ত বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা
  • যৌন মিলনে আগ্রহ না থাকা
  • ক্লান্তি
  • কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ
  • সংসারে ও দাম্পত্য জীবনে অশান্তি
  • সঙ্গিনিকে সন্তুষ্ট করতে না পারার ভয় ইত্যাদি।

মূলত এই সকল কারণেই পুরুষত্বহীনতা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর মত ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়াও পরিস্থিতি সাপেক্ষে অনেক সময় এটি দেখা গেলেও তা সাময়িক। 

Honey Sponsored

এর একটা ডিসফাংশন বা পুরুষত্বহীনতা কত ধরনের হয়ে থাকে?

  • প্রাইমারি ডিসফাংশনঃ এই পর্যায়ে একজন পুরুষ মানুষ কখনো তার লিঙ্গ উত্থিত করতে সক্ষম হয় না। ফলে এই পর্যায়ে আক্রান্ত মানুষ কখনো যৌন মিলন করতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা দূর করা সম্ভব। 
  • সেকেন্ডারি ডিসপেনশনঃ এই পর্যায়ে একজন মানুষ পূর্বে সফলভাবে লিঙ্গ ইরেকশন করতে পারলেও বর্তমানে তিনি বারবার ব্যর্থ হয়ে থাকেন।
  • নভাইরনমেন্টাল ডিসপেনশনঃ এ ধরনের পরিস্থিতিতে একজন পুরুষ নিজে নিজে হস্তমৈথুনের সময় তার লিঙ্গ উত্থিত করতে পারলেও সঙ্গিনীর সাথে মিলনের সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
  • পার্শিয়াল ডিসফাংশনঃ এই পর্যায়ে একজন পুরুষ মাঝে মাঝে ডিসফাংশন এর শিকার হয়ে থাকেন।
  • কমপ্লিটলি ডিসফাংশনঃ এই এই অবস্থায় একজন পুরুষ মানুষ তার জীবনে কখনো ইরেকশন করতে পারেননি এবং ভবিষ্যতেও কোনদিন পারবেন না। 

ইরেকটাইল ডিসফাংশনের লক্ষণ গুলো কি কি?

ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা পুরুষত্বহীনতার প্রধান লক্ষণ হল লিঙ্গের শিথিলতা । বিশেষত যৌন মিলনের সময় লিঙ্গের শিথিলতা। এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে একজন পুরুষ পুরুষত্বহীনতায় ভুগছেন কিনা। সেগুলো হলোঃ

  • যৌন ইচ্ছা একেবারে কমে যাওয়া
  • মিলনের সময় দীর্ঘ সময় ধরে লিঙ্গ উত্থিত করে রাখতে ব্যর্থ হওয়া
  • অকাল বীর্যপাত
  • অতিরিক্ত বিলম্বিত বীর্যপাত
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত হওয়া সত্বেও অর্গাজম করতে ব্যর্থ হওয়া।

উপরের লক্ষণ গুলির মধ্যে আপনি পরিস্থিতির সাপেক্ষে যদি কোনটি নিয়মিতভাবে দেখতে পান তবে যত দ্রুত সম্ভব একজন যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর চিকিৎসা

পুরুষত্বহীনতা কোন বংশগত কিংবা চিরস্থায়ী রোগ নয়। বরং সঙ্গিনীর সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনি যদি ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ভুগে থাকেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

  • নিয়ম তান্ত্রিক ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করুন। এতে করে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি যৌন শক্তি ও বৃদ্ধি পায়।
  • নিজেকে সব সময় বিষন্নতা ও মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখুন। 
  • পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন।
  • অ্যালকোহল কিংবা মাদক সেবনের অভ্যাস থাকলে আজ থেকেই তা পরিত্যাগ করুন। অ্যালকোহল ও মাদক যেমন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তেমনি যৌনশক্তিও কমিয়ে দেয় মারাত্মকভাবে।
  • যদি ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ এ ভুগে থাকেন তবে তা নিয়ন্ত্রণ করুন। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করুন। শারীরিক ব্যায়াম আপনার এনার্জি বাড়াতে সহায়তা করে।
  • বাজে খাদ্য অভ্যাস ত্যাগ করে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। পুষ্টিকর খাবার যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • পুরুষাঙ্গের কিছু ব্যায়াম করতে পারেন নিয়মিত।
  • ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর ব্যায়াম করতে পারেন।
  • যৌন মিলনের সময় অত্যন্ত উত্তেজিত হবেন না। আপনার সঙ্গিনীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
  • সঙ্গিনিকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে যাবেন না।
  • আপনি কোন সমস্যায় ভুগলে তা আপনার সঙ্গিনির সাথে শেয়ার করুন। 
  • দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের লেখাটি পড়তে পারেন।

আশা করি ওপরের নিয়ম গুলো যদি যথাযথভাবে মেনে চলেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও পুরুষত্বহীনতায় অনেকটা উপকার পাবেন। অনেকেইরেকটাইল ডিসফাংশন এর ঔষধ হিসেবে ভায়াগ্রা সেবন করে থাকেন যা তাদেরকে দিন দিন যৌন হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। নিয়মিত ভায়াগ্রা সেবন করলে সম্পূর্ণরূপে পুরুষত্ব হারাতে পারেন। সুতরাং নিজে নিজে ঔষধ সেবন না করে ডিসফাংশন থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

Source: https://www.healthline.com/health/erectile-dysfunction

RelatedPosts

back-pain-tablets

কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি | কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আসলে কোমর ব্যথা এমন একটি সমস্যা, যা শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষের মাঝে দেখা যায়। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যায়... Continue