গরমে ত্বকের যত্ন নিন
গরমে ত্বকের যত্ন নিয়ে চিন্তিত! আদ্রতায় ভরা প্যাচপ্যাচে গরমের কারণে ত্বকের সমস্যার যেন কমতি নেই। প্রতিদিনই মাথাচাড়া দিয়ে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যার। সেইসাথে গরমের তীব্রতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাই নিজের ত্বকের কথা চিন্তা করে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই।
এখন মনে শুধু একটাই প্রশ্ন, গরমে ত্বকের যত্ন নেব কিভাবে? কিভাবে যত্ন নিলে এই গরমে ত্বক ভালো থাকবে কোন প্রকার ঝামেলা পোহাতে হবে না? আবার, শীতে যেভাবে ত্বকের যত্ন নিতাম গরমেও কি সেই একইভাবে যত্ন নেব? গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব? গরমে শুষ্ক ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব? সবার মনেই এমন কতইনা প্রশ্ন!
আরও পড়ুনঃ মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়
গরমে ত্বকের যত্ন
আসলে মানব শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ পতঙ্গের মধ্যে মুখের ত্বকের যত্ন নেওয়া একটু বেশি কঠিন। কারণ মানুষের মুখের ত্বক একটি অত্যন্ত সেনসেটিভ জায়গা, যেখানে একবার কোনো সমস্যা দেখা দিলে বারবার নানা সমস্যার আবির্ভাব ঘটে। আর তাছাড়াও ঋতু অনুযায়ী ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যা আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
তবে অন্যান্য সকল ঋতুর চাইতে গরমকালে ত্বকের বিশেষ রূপচর্চার প্রয়োজন পড়ে। তাই মেনে চলতে হয় কিছু নিয়ম কানুন। আপনারা যারা এই গরমে নিজেদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে চান, মসৃণতা বৃদ্ধি করতে চান, তাদের জন্যই আমাদের আর্টিকেল টি। তো চলুন গরমে সব ধরনের ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপায় গুলো জেনে নিই।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে গরমে ত্বকের যত্ন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ত্বক ভালো রাখার সেরা উপায়। আর তাই ত্বক পরিষ্কার রাখার কারণে আমরা কসমেটিকস ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করি। কিন্তু কথা হলো গরমে ত্বকের যত্ন নিতে কোন কোন টিপসগুলো অধিক কার্যকরী। চলুন সেগুলোই জেনে নেই।
অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার জেল আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। তাই এটি বিভিন্নভাবে রূপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই গরমে ত্বকের যত্নের জন্য প্রথমত অ্যালোভেরা থেকে জেল সংগ্রহ করুন। আর তারপর সেটা আলতো ভাবে মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ঠিকঠাক সুখালে পরবর্তীতে একদম ফ্রেস ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।
তবে হ্যাঁ একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, আপনার স্কিন যদি অত্যন্ত সেনসিটিভ হয়ে থাকে তাহলে অ্যালোভেরা পাতার সবুজ অংশ সরিয়ে জেলটা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে একটু বেশি সময়। এতে করে আপনার ত্বকে কোন সাইড ইফেক্ট পড়বে না, বরং খুব দ্রুত উজ্জলতা বৃদ্ধি পাবে ও ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়
টমেটোঃ সত্যি বলতে টমেটোর মতো প্রাকৃতিক ক্লিনজার খুব কমই রয়েছে। আর তাই মুখের বাড়তি তেল শুষে নিতে, পাশাপাশি ব্ল্যাক হেডস দূরে রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। এখন কথা হলো এটি কিভাবে ব্যবহার করলে আপনি বেশি উপকৃত হবেন। চলুন সেটাই আপনাদেরকে জানাই।
প্রথমত একটি মাঝারি টমেটো অর্ধেক করে কেটে চটকে খুব ভালোভাবে এর রস বের করে নেবেন। তারপর তুলোয় করে সেই সংগৃহীত রস সারা মুখে আস্তে আস্তে ভালোভাবে মাখবেন। মাথার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর মুখটা ধুয়ে ফেলবেন এবং প্রতি সপ্তাহে নিয়ম মেনে একদিন করে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবেন। তাহলে দেখবেন খুব সহজেই আপনি আপনার ত্বকে দারুন উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন।
লেবুর রসঃ লেবুর রসের গুনাগুন নিয়ে আলাদা করে বলার মত কিছুই নেই। সত্যি বলতে পাতি লেবুর গুনাগুন নিয়ে কোন মন্তব্য করার অপেক্ষা রাখে না। আর এর অন্যতম কারণ ভিটামিন সি।
সাধারণত পাতি লেবুর সাথে বেসন মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে ত্বক ভালো থাকে। সেইসাথে গোলাপজল, লেবুর রস আর গ্লিসারিন এই তিনটি উপকরণ সমপরিমাণে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে পরবর্তীতে ১৫মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললেও ত্বকের ব্রণের সমস্যা, গরমে ফুসকুড়ির উৎপত্তি এবং আরো সমস্যার সমাধান মেলে।
নিমের পাতার রসঃ ত্বকের যত্ন নিতে এই গরমে নিমপাতার রস লাগালে অধিক উপকার পাবেন যাদের ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে ঘামাচি দেখা দেয়। আর তাই গরমে ত্বকের যত্ন নিতে নিম পাতার রস বেশ কার্যকরী।
তবে এর পাশাপাশি বেকিং সোডা, কমলালেবুর রস,চন্দন কাঠের গুড়া,গোলাপের পাপড়ি সহ এমন আরও কিছু জিনিস ত্বক ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তো এবার চলুন সেকেন্ড পয়েন্টে জেনে নেই কসমেটিকস ব্যবহারে ত্বকের যত্ন।
আরও পড়ুনঃ মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
গরমেকালে ত্বকের যত্নে কসমেটিক্স
এটা আমাদের সবারই কমবেশি জানা শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য প্রায় সকল ধরনের মশ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে ত্বকে আদ্রতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাই সর্বোত্তম। তাই প্রথমত আপনাকে করতে হবে সাবানের পরিবর্তন এবং দ্বিতীয়ত সানস্ক্রিনের ব্যবহার।
তাছাড়াও গরমকালে সাধারণত পানির ঘাটতির জন্য আমাদের ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু অতিরিক্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল খেলে শরীরে পানির ঘাটতি দূর হয়। তাই ত্বক থাকে সুস্থ।
মুলত আমাদের এই কয়েকটি টিপস ফলো করলে আপনি গরমকালেও নিজের ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে সক্ষম হবেন। তবে পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন। সেগুলো হলো,
- গরমের সময়টাতে যতদূর সম্ভব কম মেকআপ করার চেষ্টা করবেন। কারণ এই সময়টাতে এমনিতেই ঘাম হয়। আর যদি মেকআপ করেন তাহলে অতিরিক্ত ঘাম হবে, আর তাই ত্বকে একটু বেশি চাপ পড়বে। এজন্য ত্বকের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই সময়টাতে এমন কিছু মেকআপ সামগ্রী কিনবেন যেগুলো আপনার ত্বককে গরমকালেও দেবে সতেজ অনুভূতি।
- বেশি বেশি করে পানি খাবেন। কারণ শরীরে এই সময় বেশি মাত্রায় দূষিত পদার্থ জমা হতে পারে। কিন্তু শরীরে অতিরিক্ত পানি থাকলে সেগুলো খুব সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে। এতে করে ত্বক থাকবে ভালো।
- ত্বকের ময়েশ্চারাইজার অর্থাৎ ক্রিম কেনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এমন ক্রিম বাছাই করবেন। কারণ ত্বকের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। তাই যদি খরচ একটু বেশিও হয় ত্বকের সুস্থতার জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত ক্রিম নিয়মিত ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি সুফল পাবেন বলে আশা করছি।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়?
গরমে ত্বকের যত্নে করণীয়ঃ
- ত্বক বেশি শুষ্ক হলেও খারাপ। তাই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা দরকার। পাশাপাশি লেবুপানি পান করুন।
- ভেজা কাপড় পরে থাকলে ত্বকে দাদ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই ঘামে ভেজা কাপড় পাল্টে শুষ্ক ও পাতলা কাপড় পরে নিতে হবে।
- ত্বক ভালো রাখতে ভিটামিন ‘এ’-যুক্ত খাবার শীত কিংবা গ্রীষ্ম সব সময়ই খাওয়া উচিত।
- বর্ষা ও গরমকালে দিনে দুবার গোসল করুন এবং ক্ষারমুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে ভালো কোনো বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা ভালো।
- ত্বক তরতাজা ও উজ্জ্বল রাখতে অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। এ জন্য বাইরে বেরোলে ছাতা বা বড় কিনারাযুক্ত টুপি ব্যবহার করা যায়।
- ছাতা বা টুপির পরিবর্তে উৎকৃষ্ট মানের সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম কেবল সূর্যের ‘বি’ অতিবেগুনি রশ্মিই প্রতিহত করতে সক্ষম। সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর ১৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে থাকা লোশন ব্যবহার করা ভালো।
- গরমকালে তেল ব্যবহার না করাই ভালো।
- গোসলের পর শরীরের ভাঁজগুলোয় যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেষ্ট হোন। এসব স্থান ভেজা থাকলে সহজে ছত্রাক জন্মায়।
- ভাঁজযুক্ত স্থানে পাউডার ব্যবহার না করাই ভালো। পাউডারের সঙ্গে ঘাম মিশে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যা ছত্রাক জন্মানোর পক্ষে আরও সহায়ক হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, যে গরমে ত্বকের যত্ন হিসেবে উপরে নির্দেশিত নির্দেশনাগুলোই যথেষ্ট। তবে সবকিছুর পরেও যদি ত্বক ভালো না থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।