সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
আদা এবং তুলসী পাতা কুচি কুচি করে কেটে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে ফুটাতে থাকুন। পানি যখন কমতে কমতে অর্ধেক হয়ে আসবে তখন সেটা পৃথক করে নিয়ে দিনে কমপক্ষে দুইবার সেবন করুন। এতে করে সর্দি এবং কাশি অনেকাংশে কমে যাবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে বছরে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ বার সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন। তাছাড়া পৃথিবীতে মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে সর্দি-কাশি এবং জ্বরে। তবে সাধারণ সর্দি কাশির জন্য চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করলেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সর্দি কাশি কেন হয়?
হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মানুষ সর্দি কাশিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাছাড়া এলার্জি, ঠান্ডা লাগা কিংবা অতিরিক্ত গরম লাগাও হতে পারে সর্দির অন্যতম একটি কারণ। বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমান সময়ে সর্দি জ্বরের মতো সমস্যা গুলো হয়ে থাকে সাতটি ভাইরাসের কারণে। এগুলো শীতের সময় অনুকূল পরিবেশ পায় বলে দ্রুত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত করে ফেলে। তবে শীতে সর্দি থেকে মুক্তির উপায়ও রয়েছে। সর্দি কাশি বা সর্দি জ্বর বিরক্তিকর একটি অসুস্থতা হলেও এটি বেশিরভাগ সময় একদিনের মধ্যেই সেরে যায়।
সর্দি জ্বর প্রতিরোধে কি করবেন?
প্রথমত সর্দি তে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। এটি সংক্রমিত একটি রোগ হওয়ার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মেলামেশা করলে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে গামছা বা থালা-বাসন ব্যবহার করলেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি তাকে নিয়মিত সাবান এবং গরম পানি দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। পাশাপাশি সর্দি জ্বর প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান, লাল রঙের ফল খাওয়া, তুলসী এবং আদা চা পান করা ও ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।
সর্দি জ্বর বা কাশি থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায়
পর্যাপ্ত পানি পান করা সর্দি থেকে মুক্তির অন্যতম একটি উপায়। আপনারা যেন অবাক হবেন যে আমাদের শরীরে পানির অভাবে অনেক সময় সর্দি জ্বর হয়ে থাকে যা আমরা কখনো কল্পনাই করি না। সুতরাং সর্দিতে আক্রান্ত অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাছাড়া এলার্জি জাতীয় সর্দি থেকে মুক্তি পেতে এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
বিশ্রাম বা ঘুম মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং আপনি যদি সর্দিজরে আক্রান্ত হন তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন। অনেক সময় এক ঘন্টা ভালোভাবে ঘুমালে নিমিষেই আপনার সর্দি কাশি উধাও হয়ে যেতে পারে।
তুলসী ও আদা চা পান করুন। আদা এবং তুলসী পাতা কুচি কুচি করে কেটে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিনে দুইবার পান করতে থাকুন। এতে করে আপনার সর্দি কাশি ও জ্বর দ্রুত সেরে যাবে।
সম্ভব হলে ফলের রস খান। কমলা মালটা লেবুর রস এগুলো সর্দি কাশি উপশমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি হালকা গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
যতটা সম্ভব উষ্ণ পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। ঠান্ডা পরিবেশে রোগ জীবাণু অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই সর্দিতে আক্রান্ত হলে গরম পোশাক পরিধান করুন এবং গরম জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।
খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ এবং রসুন খেতে পারেন। রসুনের প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা সর্দি কাশি দূরীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা রসুন খেতে না পারলে তা ঘিয়ে ভেজে নিয়ে খেতে পারেন।
কখন ডাক্তার দেখানো জরুরী
সাধারণত সর্দি কাশির জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে নিম্নোক্ত ব্যাপারগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- আপনার বয়স যদি ৬৫ বছরের বেশি হয়
- আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন
- জ্বরের মাত্রা অতিরিক্ত হলে কিংবা জড়ের সাথে কাঁপুনি থাকলে
- সর্দি কাশি কিংবা জ্বর ৭ দিনের বেশি হলে
- তিন মাসের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে জ্বর আসলে।
- বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস হৃদরোগ ফুসফুসের সমস্যা কিডনি রোগ ইত্যাদিতে ভুগে থাকলে
- কেমথেরাপি কিংবা লম্বা সময় ধরে স্টেরয়েড সেবন করলে।
- শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে
- অতিরিক্ত খিচুনি
- প্রচন্ড শারীরিক দুর্বলতা এবং অস্থিরতা
- অচেতন হয়ে পড়লে
- মাংসপেশি কিংবা সমগ্র শরীরে অত্যন্ত ব্যথা অনুভব করলে।
- কাশির সাথে রক্ত গেলে
- শিশুদের ঠোঁট নীল হয়ে আসলে
- প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা কান্না করার পরেও চোখে পানি না আসলে।
- শিশুদের মাথার সামনের দিকের অংশ বসে গেলে
- জ্বর বারবার আসা-যাওয়া করলে কিংবা পরিস্থিতি অত্যাধিক খারাপ হলে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে খুব সহজেই সর্দি কাশি এবং জ্বর মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলে। তাছাড়া সাধারণ সর্দি কাশি এবং ফ্লু জাতীয় সর্দি কাশির পার্থক্য করার তেমন কোনো উপায় না থাকায় অনেক সময় বোঝা যায় না। সাধারণ সর্দি কাশিতে কখনো ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। তবে জ্বর থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। কিন্তু যদি এই সর্দি জ্বর কিংবা কাশি মাত্রা অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায় তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।