পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো মহিলাদের জন্য বিশেষ করে কিশোরী মেয়েদের জন্য জানা অত্যন্ত জরুরী। পিরিয়ডের সময় বেশিরভাগ মহিলাদের যে সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেটি হল তলপেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা করা। অসহনীয় এই ব্যথার ফলে এ সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটে। তাই আজকে পিরিয়ড এর ব্যথা কমানোর এমন কিছু উপায় সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো যেগুলো খুব সহজে অবলম্বন করে অসহ্য ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

Ask Question

পিরিয়ডের ব্যথা কেন হয়

পিরিয়ডের সময় প্রজনন সম্পর্কিত হরমোন গুলোর মাত্রা হঠাৎ করেই কমে যায় এবং এর প্রভাবে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ খসে পিরিয়ডের রক্তের সাথে বের হতে থাকে। এর ফলে জরায়ুর দেওয়াল জোরালোভাবে সংকুচিত হয় এবং জরায়ুর গায়ে থাকা রক্তনালী ভুলেও সেই সাথে সংকুচিত হতে শুরু করে। এতে করে সাময়িকভাবে জড়ায়ুতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকে। জড়ায়ুতে অক্সিজেনের অভাব হলে এর ভেতর থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। আর এই রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবেই ব্যথা শুরু হয়ে থাকে।

আরো পড়তে পারেনঃ নারী স্বাস্থ্য

Honey Sponsored

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

১। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন

অতিরিক্ত গ্লুকোজ জাতীয় খাবার আপনার ব্যথার জন্য বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করে থাকে। সুতরাং যতটা সম্ভব চিনি যুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন এবং বাইরের ভাজাপোড়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। যে সকল খাবারে আয়রন, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি এসিড এর পরিমাণ বেশি থাকে সে সকল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

২। নিয়মিত শরীর চর্চা করুন

নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে পিরিয়ড জনিত ব্যথার উপশম করা সম্ভব। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ব্যায়াম রয়েছে। নিয়মিত এই ব্যায়াম গুলো করলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীর চর্চা করার চেষ্টা করুন। তবে ভুলেও পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীরচর্চা করতে যাবেন না।

৩। মানসিক চাপ কমান

মানসিক চাপের সাথে পিরিয়ডের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকলে কখনোই পিরিয়ড সঠিক সময়ে হবেনা এবং হলেও তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সুতরাং যতটা সম্ভব নিজেকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখুন।

৪। গরম ছ্যাক নিন

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হলে শুকনো পরিষ্কার কাপড় এর মাধ্যমে হালকা গরম ছ্যাঁক নিন। এছাড়াও বোতলে হালকা গরম পানি ভর্তি করে সেটি পেটের সাথে চেপে ধরে রাখতে পারেন। এতে করে ব্যথা অনেক অংশে কমে যায়।

৫। শরীরের রোদ লাগান

রোদে শরীর সাধারণত ক্লান্ত হয়ে গেলেও সকাল বেলার রোদ থেকে মানব দেহ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করে থাকে যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।

৬। পানি পান করুন

পিরিয়ডের সময় অনেকেই তরল জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। অন্যথায় শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা কোন কিছু কিংবা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়।

৭। বিভিন্ন প্রকার চা

এ সময় ব্যথা কমানোর জন্য আদা চা পান করতে পারেন। কয়েক টুকরো আদা কুচি কুচি করে পানিতে কেটে সিদ্ধ করে সেই পানি হালকা মধু কিংবা চিনি দিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার পান করুন। এতে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়াও বিভিন্ন শরবত, ফলের রস কিংবা আদা লেবু পুদিনা পাতাযুক্ত চা পান করতে পারেন।।

৮। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

শরীরে যদি ঘুমের অভাব দেখা দেয় তবে খুব সহজেই শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। আর দুর্বল শরীরে যে কোন সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। 

৯। অ্যালোভেরা ও মধু

অ্যালোভেরা ও মধু মিশিয়ে শরবত তৈরি করে নিন এবং তা দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন। এতে করে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।

পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সাধারণত নারীদের কোমর এবং তলপেটে ব্যথা করে থাকে। তবে অনেক সময় এই ব্যথা কোমর থেকে উরুতে ছড়িয়ে যেতে পারে। ব্যথার পাশাপাশি হাত-পায় খিচুনি হতে পারে। 

পিরিয়ডের ব্যথা কতদিন থাকে

এই ব্যাথা এবং খেজুর নিয়ে সাধারণত ৪৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া যে সময় রক্তক্ষরণ বেশি হয় সেই সময় ব্যথার পরিমাণও বেড়ে যায়। বয়স্ক নারীদের চেয়ে কিশোরীদের ক্ষেত্রে ব্যাথার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ও ঔষধ সেবন করা উচিত

শুরুতেই পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। ব্যথার পরিমাণ যদি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাছাড়া পিরিয়ডের স্বাভাবিক ব্যথার ধরন যদি পরিবর্তন দেখা যায় যেমন অনিয়মিত পিরিয়ড কিংবা অনিয়মিত রক্তপাত সে ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো জরুরী। নিজে নিজে কখনো ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পেইন কিলার ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। 

অনেক সময় পলিসিস্টিক ওভারীর সমস্যার কারণে মহিলাদের ব্যথা এবং ব্লিডিং মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। কিন্তু যাদের এই সমস্যা নেই তারা উপরে নির্দেশিত পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো অবলম্বন করে ভালো ফল পেতে পারেন।।

RelatedPosts

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি জেনে নিন | ১৪ টি প্রাথমিক লক্ষণ

পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তবে এটি ছাড়াও গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড মিস হলে... Continue

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়?

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়? গর্ভধারণের পর এমন প্রশ্ন প্রায় প্রত্যেক মহিলার মাথায় ঘুরতে থাকে। জেনে রাখা ভালো যে বমি হওয়া গর্ভধারণের একমাত্র লক্ষণ নয়। গর্ভাবস্থার অনেকগুলো... Continue

female health

নোরিক্স ১ পিল খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়?

নোরিক্স ১ পিল খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় - আমাদের এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় অনেক সময়। জেনে রাখা ভালো যে নোরিক্স ১ একটি ইমারজেন্সি পিল যা অরক্ষিত... Continue

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ সে ব্যাপারে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ছোটখাটো কিছু ভুল বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনতে... Continue

সহবাসের সময় যোনি শুকিয়ে যায় কেন । ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস

সহবাসের সময় যোনি শুকিয়ে যায় কেন । ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস

আপনি কি জানেন সহবাসের সময় যোনি শুকিয়ে যায় কেন? সহবাসের সময় যোনি শুকিয়ে যাওয়ার মত ঘটনার মুখোমুখি আমরা অনেকেই হয়ে থাকি। সাধারণত মহিলাদের বয়স ৪৫ বছরের উপরে হলে... Continue

ফেমিকন-এর-ছবি

ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দাম ও উপকারিতা

ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে প্রত্যেক বিবাহিত মহিলা এবং পুরুষদের অবগত হওয়া উচিত। আমাদের দেশের প্রায় ৪০% বিবাহিত মহিলারা জীবনের কোন না কোন সময়ে ফেমিকন পিল সেবন করে থাকেন।... Continue