জিনসেং এর উপকারিতা কি ?
ভেষজ ও ঔষধি গুনের জন্য জিনসেং এর উপকারিতা অনেক। সারা বিশ্বজুড়ে হারবাল চা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বিশ্বে যত প্রকারের হারবাল চা রয়েছে তার মধ্যে জিনসেং অন্যতম। তবে হারবাল চা এর পাশাপাশি ঔষধি গুনের জন্য এই ভেষজ উপাদান টি আজ সারা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
স্টেস কমানো থেকে শুরু করে এনার্জি বাড়াতে, অতিরিক্ত ওজন কমানো, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি নানান উপকারিতা রয়েছে জিনসেং এর। আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে জিনসেং কি, এর ব্যবহার, উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
জিনসেং কি?
জিনসেং মাংসল মূল বিশিষ্ট এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। ঔষধি গুণসম্পন্ন জিনসেং মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে-আমেরিকান এবং এশিয়ান। এর মধ্যে আমেরিকান জিনসেং এর তুলনায় এশিয়ান জিনসেং অনেক বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরনের জিনসেং কে একসঙ্গে প্যানাক্স জিনসেং বলে।প্যানাক্স শব্দটি গ্রীক শব্দ “panacea” থেকে এসেছে, এর অর্থ হল “All healer” বা সর্ব রোগের ঔষধ।
জিনসেং এর উপকারিতা
জিনসেং হলো এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ। যা বহু বছর ধরে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অত্যন্ত জনপ্রিয় পুষ্টিকর ভেষজ হিসেবে চৈনিক চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এই জিনসেং। এর সুবিশাল ঔষধি গুনের জন্য সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, জিনসেং এর উপকারিতা গুলো কি কি। আরও দেখুনঃ শুক্রাণু বৃদ্ধির ঔষধের নাম
এনার্জি বাড়ায়
এনার্জি বাড়াতে এবং অবসন্নতা কাটিয়ে উঠতে জিনসেং এর ভূমিকা ব্যাপক। যারা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে ক্লান্ত বোধ করেন তাদের জন্য এই ভেষজ উপাদান কি খুবই কার্যকরী। পরীক্ষায় দেখা গেছে, দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে, ক্লান্তি কমাতে এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে যে প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো প্রয়োজন তা এই জিনসেং-এ রয়েছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
ক্যান্সারের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে জিনসেং। ”জিনসেং টি,, নিয়মিত পান করার ফলে শরীরের মৃত কোষ কে জাগিয়ে তোলে, এবং কোষের কার্যকারিতা বাড়িয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটায়। এছাড়াও পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, জিনসেং এর মধ্যে উপস্থিত জিনসেনোসাইড গুলি ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও ডিম্বাশয়, পেট এবং জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ওজন কমাতে
জিনসেং শরীরের পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে জিনসেং ইঁদুরের দেহের ওজন কমাতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
বেশকিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে আমেরিকান জিনসেং টাইপ -২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এবং আরো দেখা গেছে যে, জিনসেং ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উন্নতি করে এবং যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি খুবই স্বাস্থ্যকর।
দ্রুত বীর্য স্খলন নিরাময়ে
জিনসেং কে ভেষজ ভায়াগ্রা বলা হয়ে থাকে। এটি পুরুষ দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়িয়ে লিঙ্গ কে শিথিল করে এবং রক্ত প্রবাহ কে উদ্দীপ্ত করে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই চা উদ্ভিদ উৎস থেকে প্রাপ্ত ফাইটো টেস্টোস্টেরন এর উৎস।এবং নিয়মিত সেবনে পুরুষ দেহে শুক্রাণু গ্রন্থি উন্নত করে এবং অ্যাড্রিনাল ও প্রোস্টেট গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। আরও দেখুনঃ দ্রুত বীর্য পাতের স্থায়ী সমাধান ও ঘরোয়া চিকিৎসা
পিরিয়ড বা মাসিকের সময় কালে
মহিলাদের পিরিয়ডের সময় অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সময় হওয়া ফোলা বা খিচুনি দূর করতে জিনসেং বিশেষ ভূমিকা রাখে।
স্টেস কমায়
পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, জিনসেং মুড ঠিক রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জিনসেং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সর্দি, কাশির সমস্যা করে। গবেষণায় দেখা গেছে জিনসেং ম্যাক্রোফেজস, প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ, টি সেল, বি সেল সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধক কোষ কে নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যান্টি এজিং
জিনসেং এ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে পুরো শরীরে ফ্রিরেডিকেল এর ঋণাত্মক প্রভাব কম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, জিনসেং অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভেষজ ওষুধ টি কোলাজেন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা ত্বককে বলিরেখা মুক্ত করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
জ্বালা-যন্ত্রণা কমায়
যাদের অ্যাসাইটিস বা গাটের ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী। এছাড়াও এটি পেটে ব্যথা ও অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা কমাতে দারুন কাজ করে।
ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে
জিনসেং ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। Chronic obstructive pulmonary disease (COPD) হচ্ছে ফুসফুসের অন্যতম সাধারণ একটি সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে কফ জমে, কারো ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্ষয় হয়। নিয়মিত জিনসেং গ্রহণে সার্বিকভাবে এই রোগের অবস্থার উন্নতি হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
চুলের যত্নে
চুলের যত্নে জিনসেং এর ব্যবহার ব্যাপক। জিনসেং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এক্সট্রাক্ট চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে ও স্কালপের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং চুলের পুষ্টি যোগায়।
কগনিটিভ ক্ষমতা বাড়ায়
কগনিটিভ ক্ষমতা যেমন একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি ইত্যাদি বাড়াতেই জিনসেং বিশেষভাবে কাজ করে। এছাড়াও এটি নিয়মিত সেবনে স্নায়বিক গতিবিধি বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও, মেয়েলি হরমোন বৃদ্ধি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিবর্ধক এনার্জি ড্রিংক হিসেবে জিনসেং দারুন কার্যকরী। জিনসেং রক্তদান করে স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। এছাড়াও সর্দি-কাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ক্যান্সার রক্তশূন্যতা বিষণ্নতা হজমে সমস্যা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ গড়তে বিশেষভাবে কার্যকরী।