চোখ লাল হওয়ার কারণ কি | চোখ লাল কেন হয়

চোখ আমাদের শরীরের অতি গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ। চোখ শুধু মনের কথাই বলে না, চোখ দেখে শরীরের অভ্যন্তরের রোগের কথাও ধারণা করা যায়। অনেক সময় ই চোখ লাল হওয়া দেখে ভয় পেয়ে যাই আমরা। কারণ চোখের মত সংবেদনশীল অঙ্গে সমস্যা দেখা দিলে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে দুর্বিসহ। তাই ছোট খাট মনে হলেও অবহেলা করা উচিত নয়।

Ask Question

চোখের সাদা অংশকে বলে স্ক্লেরা। চোখে আঘাত লাগা, ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, অ্যালার্জি জনিত কারণ, চোখের অন্যান্য রোগ, ডায়াবেটিস, গেঁটে বাত সহ আরো অনেক রোগের কারণে চোখ লাল হতে পারে। চোখের যেকোনো কোনো অসুখেই দুঃশ্চিন্তার অন্ত থাকে না আমাদের। চোখ লাল হওয়ার কারণ, প্রতিরোধে আপনার কি করণীয় তা নিয়েই আজকের লেখা।

আরও দেখুনঃ মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

Honey Sponsored
চোখ লাল হওয়ার কারণ

চোখ লাল হওয়ার কারণ

কনজাংকটিভাইটিসঃ চোখের কনজাংটিভা নামক পাতলা পর্দার প্রদাহকে বলে কনজাংকটিভাইটিস। যেটাকে আমরা চোখ ওঠা রোগও বলে থাকি। ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে অথবা অ্যালার্জিক কারণে কনজাংকটিভাইটিস হয়। এর অন্য নাম হলো পিংক আই। প্রাথমিক ভাবে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে খচখচে অনুভূতি হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে জ্বালা হওয়া, ব্যথা এসব উপসর্গ দেখা যায়। ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমনে কনজাংকটিভাইটিস হলে এসব সমস্যা তীব্র থাকে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চোখের পাতা খোলা যায় না। কারণ পিচুটি জমে পাতা বন্ধ হয়ে থাকে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের আক্রমণেও কনজাংকটিভাইটিস দেখা যাচ্ছে। ভাইরাল বা অ্যালার্জিক কারণে হয়ে থাকলে এসব সমস্যার তীব্রতা কিছুটা কম থাকে। এক চোখ বা দুই চোখই আক্রান্ত হতে পারে। এমন সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়া পরিষ্কার পানির ঝাপটা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর চোখ পরিষ্কার করতে হবে। মৃদু উষ্ণ পানিতে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে চোখ মুছতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য কাপড়, গামছা বা তোয়ালে অন্যদের ব্যবহার করা যাবে না।

আরও দেখুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় | কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কি

অ্যালার্জিক কারণঃ এই কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। যারা ধুলোবালি, পশম, ফুলের রেণু, এরোসল, ধুপ, মশার কয়েল প্রভৃতি জিনিসের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল তাদের এসব বস্তুর সংস্পর্শে এলে চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। কিছু খাবারের প্রতি অ্যালার্জিক থাকলেও এমন হতে পারে। এক্ষেত্রে লাল চোখের সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়া, চুলকানি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়। পোষা প্রাণীর লোম থেকে এমন সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। তাই ঘর বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি পোষা প্রাণীকেও পরিচ্ছন্ন রাখুন।

ড্রাই আই সিনড্রোমঃ চোখ লাল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ড্রাই আই সিনড্রোম বা শুষ্ক চোখ। চোখের পানি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে তাহলে চোখে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা যায়। চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে অস্বস্তি, জ্বালা, ঝাপসা দেখা, চোখ থেকে ময়লা জাতীয় পদার্থ বের হওয়া, অল্প কিছুক্ষণ তাকানোর ফলেই চোখে ক্লান্তি অনুভব করা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। যারা একটানা অনেক সময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার প্রভৃতির স্ক্রিনে তাকিয়ে কাজ করেন তাদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়। ইদানিং অনেক ছোট বাচ্চা তারা সারাক্ষণ মোবাইলে গেম খেলে তাদের মধ্যেও ড্রাই আই সমস্যাটি দেখা দেয়।
দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। ত্রিশ মিনিট পর পর কিছু সময়ের জন্য সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে উপসর্গ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চোখকে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম দিতে হবে। সমস্যা বেশি দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ মত আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ও অন্যান্য ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।

আরও দেখুনঃ থাইরয়েড কি? এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

কর্নিয়ায় আঘাত বা ক্ষতঃ কর্নিয়া হলো চোখের সামনের অংশকে আবৃত করে রাখা স্বচ্ছ পর্দা। চোখের আঘাতের কারণে, কোনো রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশের কারণে অথবা কনটাক্ট লেন্স ব্যবহারে চোখের কর্নিয়াতে আঘাত লাগতে পারে। আঘাতের মাত্রা বেশি হলে ক্ষতও সৃষ্টি হতে পারে। চোখ লাল হওয়া, তীব্র ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখে এধরনের আঘাত লাগলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ কর্নিয়াল
আলসার বা ক্ষত ঠিকমত চিকিৎসা না করলে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েও যেতে পারে।

আইরাইটিসঃ চোখের ভিতরে রঞ্জক পদার্থ যুক্ত স্তর হলো আইরিশ। আইরিশের কোনো প্রদাহ হলে তাকে বলা হয় আইরাইটিস। চোখে কোনো আঘাত, বংশগত কারণ, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতির কারণে হতে পারে আইরিশের প্রদাহ। এছাড়াও কিছু রোগ যেমন গেঁটে বাত, সোরিয়াসিস ছাড়াও অনেক ধরনের হাড়ের রোগ এবং পেটের রোগের কারণে আইরাইটিস হতে পারে। চোখ লাল হওয়ার সাথে চোখে ব্যথা, আলোতে অসহ্য লাগা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। আইরাইটিসের আসল কারণ খুঁজে বের করে পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিতে হবে।

গ্লুকোমাঃ বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম কারণ হলো গ্লুকোমা রোগটি। আমেরিকায় ৪০ উর্ধ বয়সের প্রায় ২.৭ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যায় ভোগে। বাংলাদেশেও বয়স্ক দের চোখের প্রধান সমস্যার মধ্যে গ্লুকোমা একটি। চোখের অভ্যন্তরের প্রেসার বেড়ে যাওয়ার কারণে রোগটি হয়। এই রোগে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, মারাত্মক ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, তীব্র মাথা ব্যথা হওয়া, বমি বমি লাগা প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়। গ্লুকোমার সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। এছাড়া গ্লুকোমা থেকে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করতে চাইলেও দ্রুত চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া উচিত।

আরও দেখুনঃ এলার্জি দূর করার উপায় | ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা

কোনো ব্যথা ছাড়াই চোখে জমতে পারে রক্তঃ অনেক সময় হঠাৎ আয়নায় চেহারা দেখতে যেয়ে খেয়াল করে অনেকে যে চোখে রক্ত জমে আছে। যেহেতু কোনো ব্যথা থাকে না তাই সহজে টের পাওয়া যায় না। এমনটা হতে পারে সাবকনজাংটিভাল হেমোরেজ হলে। অর্থাৎ চোখের পাতলা কনজাংটিভার নিচে রক্ত জমলে এমন হয়। চোখের ছোট ছোট রক্তনালী থেকে রক্তপাত হয়ে এমন হতে পারে সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কিছুদিনের ভিতরে একাই সেরে উঠে। কিছু কিছু ওষুধ রক্তপাত ঘটাতে পারে অনেকের ক্ষেত্রে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার ওষুধ সেবন করা যাবে না।

প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহারঃ ইদানিং কালে চোখে প্রচুর প্রসাধনী ব্যবাহার করা হয়। যদি চোখে ব্যবহৃত কাজল, মাশকারা, আইশ্যাডো প্রভৃতি পন্য ভালো মানের না হয় তাহলে চোখে অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে। এছাড়া মেয়ার উত্তীর্ন প্রসাধনী ব্যবহার করলে তা চোখের জন্য ক্ষতিকর হবে। এক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ব্যথা হওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া ইদানিং কনটাক্ট লেন্সের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। কনটাক্ট লেন্স পরিধান কারী দের চোখ লাল হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। বারবার চোখে হাত দিতে হয় কনটাক্ট লেন্স পড়লে। লেন্সের সলিউশন যদি সঠিক ভাবে ব্যবহার নর করা হয় তাহলেও সমস্যা দেখা দেয়। তাই চোখে ব্যবহৃত সমস্ত বস্তু সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। নাহলে মূল্যবান চোখ দুটো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এমনি দৃষ্টিশক্তির উপরও প্রভাব পড়তে পারে।

RelatedPosts

স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায়

স্বপ্নদোষ কি ও কেন হয়? স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায়।

স্বপ্নদোষ হলো পুরুষদের ঘুমের মধ্যে ধাতু নির্গমন। অনেক সময় দেখা যায় যে ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সী পুরুষদের ঘুমন্ত অবস্থায় গভীর রাতে কিংবা ভোরের দিকে মনের অজান্তেই লিঙ্গ... Continue

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? ডায়াবেটিস নিয়ে প্রশ্নত্তোর।

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চান বেশিরভাগ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীরা। আমাদের আজকের লেখায় এ ধরনের কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো। লেখাটি... Continue

 এলার্জির চিকিৎসা

এলার্জি দূর করার উপায় | ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা

এলার্জি দূর করার উপায় বলতে আমরা শুধু ঔষধ সেবনই বুঝে থাকি। কিন্তু ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে এবং ঘরোয়া উপায়ে, দুইভাবেই করা সম্ভব। ঠান্ডা এলার্জি অন্যান্য রোগের... Continue

গুড়া কৃমির ওষুধের নাম

গুড়া কৃমির ওষুধের নাম কী

পিনওয়ার্ম বা গুড়া কৃমি একটা প্যারাসাইট বা পরজীবী, যা সাধারণত সুতা কৃমি নামে পরিচিত। এটা মানুষের মলাশয় বা মলদ্বারে থাকে। এর ডিম গুলো আকারে খুবই ছোট। প্রায় দেখাই... Continue

সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

আদা এবং তুলসী পাতা কুচি কুচি করে কেটে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে ফুটাতে থাকুন। পানি যখন কমতে কমতে অর্ধেক হয়ে আসবে তখন সেটা পৃথক করে নিয়ে দিনে কমপক্ষে... Continue

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ সে ব্যাপারে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ছোটখাটো কিছু ভুল বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনতে... Continue