ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দাম ও উপকারিতা
ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে প্রত্যেক বিবাহিত মহিলা এবং পুরুষদের অবগত হওয়া উচিত। আমাদের দেশের প্রায় ৪০% বিবাহিত মহিলারা জীবনের কোন না কোন সময়ে ফেমিকন পিল সেবন করে থাকেন। অনেকে এই পিল সেবন না করলেও অন্যান্য পিল সেবন করেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলগুলো সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার না করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আসতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ। সুতরাং এ ধরনের মারাত্মক সমস্যায় পড়ার আগেই আমাদের লেখাটি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়ে নিন।
![ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দাম ও উপকারিতা 2 ফেমিকন এর ছবি](https://doctlab.com/wp-content/uploads/2023/04/ফেমিকন-এর-ছবি-1024x683.webp)
ফেমিকন কি
বাংলাদেশে বহুল পরিচিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলগুলোর মধ্যে ফেমিকন এস এম সি কোম্পানির অন্যতম একটি ব্র্যান্ড। চতুর্থ প্রজন্মের জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিলগুলো বাজারজাতকরণের পূর্বে ফেমিকন ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পিল গুলোর মধ্যে একটি। স্বল্পমাত্রার এই পিল বেশিরভাগ বিবাহিত মহিলাদের শরীরের সাথে খাপ খায় বলে জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। একটি সাদা ফেমিকন পিলে রয়েছে লজেস্টেল ০.৩০ মিলিগ্রাম, ইথালিন ইস্ট্রেডিওল ০.০৩ মিলিগ্রাম এবং একটি বাদামি পিলে রয়েছে ফেরাস ফিউমারেট ৭৫ মিলিগ্রাম।
ফেমিকন কেন খাবেন
ফেমিকন পিল সেবন করা হয় অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পদ্ধতি হিসেবে। যেসব কারণে ফেমিকন পিল সেবন করতে পারেন:
- যদি আপনি অস্থির ভিত্তিতে বর্তমান সময়ে সন্তান জন্ম দিতে না চান সেক্ষেত্রে।
- যতদিন আপনি গর্ভধারণ করতে না চান ততদিন এই সেবন করে যেতে পারেন।
- সন্তান নিতে চাইলে শুধু এই পিল সেবন করা বন্ধ করে দিন।
- এই পিল সেবন করলে শুরুর দিকে একটু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও পরবর্তীতে এটি শরীরের সহনীয় হয়ে যায় এবং মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ফেমিকন পিল সেবন করলে ( ৯৭-৯৯%) জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম
ফেমিকন পিল নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সেবন করতে হয়। নিচে ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম দেওয়া হলঃ
![ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দাম ও উপকারিতা 4 ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম](https://doctlab.com/wp-content/uploads/2023/04/ফেমিকন-খাওয়ার-নিয়ম-1024x683.webp)
![ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দাম ও উপকারিতা 5 ফেমিকন খাওয়ার নিয়ম](https://doctlab.com/wp-content/uploads/2022/08/ফেমিকন-খাওয়ার-নিয়ম-2-1024x683.webp)
- ফেমিকন পিল সেবন করতে চাইলে আপনার মাসিক হওয়ার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
- এই পিলের একটি পাতায় মোট ২৮ টি ট্যাবলেট থাকে যার মধ্যে ২১ টি সাদা এবং সাতটি লাল বর্ণের। মেয়েদের পিরিয়ড শুরুর দিন থেকে ২১তম দিন পর্যন্ত প্রতিদিন একটানা একটি করে সাদা রংয়ের ট্যাবলেট একই সময়ে পাতায় দেখানো তীর চিহ্ন অনুসরণ করে সেবন করতে হয়।
- তারপর ২২ তম দিন থেকে লাল রংয়ের ৭টি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত গর্ভধারণ কিংবা সন্তান গ্রহণ বন্ধ রাখতে চান ততদিন পর্যন্ত ঠিক একই নিয়মে এই পিল সেবন করা বাধ্যতামূলক।
- পিরিয়ড হলেও লাল রঙয়ের বড়ি সেবন চালিয়ে যান।
- পিরিয়ডে দিন থেকে পুনরায় নতুন একটি ফেমিকন পিলের পাতা কিনে সাদা বড়ি আগের নিয়মে সেবন করতে থাকুন।
- যখন গর্ভধারণ করবেন তখন থেকে এটি সেবন করা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিন।
- কোনক্রমে যদি একদিন একটি সাদা ট্যাবলেট খেতে ভুলে যান তবে পরের দিন একই সাথে ওই সময় দুইটি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে।
আরওঃ নিয়মিত মাসিক না হওয়ার কারণ গুলো জেনে নিন
ফেমিকন পিল সেবন করার সুবিধা
যারা বিয়ের পর খুব দ্রুত গর্ভধারণ করতে চায়না তাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হলো পিল সেবন। যখন ইচ্ছা তখনই এই পদ্ধতিতে প্রবেশ এবং বের হওয়া যায় বলে আমাদের দেশের নব দম্পতিরা ফেমিকন পিল সেবন করে থাকেন। এক প্যাকেট ফেমিকন ট্যাবলেটের দাম মাত্র ৩০ টাকা। স্বল্পমূল্যের কারণে বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
যদি পিল খেতে ভুলে যান তাহলে কি করবেন
যদি কখনো পিল খেতে ভুলে যান তবে মনে পড়ার সাথে সাথে ভুলে যাওয়া পিলটি সেবন করে ফেলুন। সেই সাথে যদি পরের দিন মনে পড়ে তাহলে সেদিনের পিলটি ও নির্দিষ্ট সময়ে খেয়ে নিন।
যদি কোন কারনে পরপর দুই দিন পিল খেতে ভুলে যান তাহলে মনে পড়ার সাথে সাথে দুইটি পিল একসাথে সেবন করুন এবং পরের দিন ও দুইটি পিল একসাথে খেয়ে নিন। এই চক্র শেষ হওয়া পর্যন্ত যথাযথ নিয়মে পিল সেবন চালিয়ে যান এবং পাশাপাশি কনডম কিংবা অন্যান্য কোন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
অনেক সময় এন্টিবায়োটি, ব্যথা নাশক ঔষধ কিংবা রিফামপিসিন জাতীয় ঔষধ সেবনের ফলে পিলের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন অথবা কনডম ব্যবহার করুন।
কখন ফেমিকন পিল খাওয়া নিষেধ
ফেমিকন পিল একটি সহনীয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই পিল সেবন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যেমন:
- আপনার যদি হৃদরোগ এর সমস্যা থেকে থাকে।
- আপনার বয়স যদি ৪৫ বছরের বেশি হয়।
- আপনি যদি লিভারের কোন অসুস্থতায় ভুগে থাকেন।
- আপনি যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
- আপনি যদি স্তনের ভেতরে শক্ত হয়ে যাওয়া কিংবা মাথা ব্যথা অথবা উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যায় ভোগেন।
- যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন।
- এছাড়াও পিল গ্রহণ করা অবস্থায় যদি গুরুতর কোন অসুস্থতা বোধ করেন তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ফেমিকন কেন খায়?
ফেমিকন সাধারণ সেবন করা হয় জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল হিসেবে। এটি নিয়মিত সেবনের উপযুক্ত একটি ঔষধ যা সেবনে কোন পদ্ধতি অনলম্বন না করে আপনি সহবাস করতে পারবেন। কিন্তু গর্ভধারণ হবে না।
ফেমিকন এর দাম কত?
বর্তমান সময়ে এক পাতা ফেমিকন ট্যাবলেট এর মূল্য ৩০ টাকা । এখানে মোট ২১ টি বড়ি থাকে যার প্রতিটির মূল্য ১ টাকা ৪০ পয়সা।
ফেমিকন খেলে কি হয়?
ফেমিকন খেলে সাধারণ মুক্তভাবে সহবাস করার পরেও গর্ভধারণ হয়না। যারা বাচ্চা নিতে চায়না তারা এটি সেবনের মাধ্যমে সন্তান জম্নদান থেকে নিজেদের বিরিত রাখতে পারেন।
ফেমিকন খেলে কি ক্ষতি হয়?
ফেমিকন খেলে সাধারণত কোন ক্ষতি হয় না। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমনঃ মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা, বমিবমি ভাব, অনিয়মিত মাসিক, হঠাত রক্তপাত ইত্যাদি। তবে এই সমস্যা গুলো অস্থায়ী।
ফেমিকন খাওয়ার কতদিন পর সহবাস করা যায়?
ফেমিকন মাসিকের দিন থেকেই সেবন করতে হয়। এবং এটি সেবনকালীন যে কোন সময় সহবাস করা যায়।
ফেমিকন পিলের কার্যকারিতা কত ঘন্টা?
ফেমিকন পিল মাসিক শুরুর দিন থেকে ২১ তম দিন পর্যন্ত সেবন করতে হয়। তবে পর পর কয়েকদিন সেবন করতে ভুলে গেলে এর কার্যকারিতা নস্ট হয়।
ফেমিকন পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অন্যান্য সকল জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিলের মত ফেমিকন পিলের ও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই পিল সেবন করার ফলে মাথা ঘোরা, বমি ভাব, কিংবা পিরিয়ড ছাড়াও যোনিপথে হালকা রক্তের ফোটা বের হতে পারে। শুরুর দিকে এই সমস্যাগুলো একটু বেশি হলেও দুই থেকে তিন মাস পর তা সম্পূর্ণরূপে কমে যায়। তবে অত্যাধিক সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফেমিকন খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়
নিয়ম অনুযায়ী ফেমিকন সেবন করলে ২১ টি সাদা বড়ি শেষ হবার পর লাল বর্ণের বড়ি খাওয়া অবস্থায় নির্দিষ্ট সময় মাসিক হয়ে থাকে।
আরওঃ ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
সতর্কতা
আপনার বয়স যদি ৪৫ বছরের বেশি হয়ে থাকে কিংবা আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তবে ফেমিকন পিল সেবন করা বন্ধ রাখুন। পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলে এই পি এল সেবন করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে এ সকল পিল ব্যবহারের চেয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা।