১ মিনিটে ঘুম আসার উপায় দেখে নিন

স্বাস্থ্য ভালো তো সব ভালো। আর সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে আমরা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেই। ঘুম আমাদের নতুন ভাবে কাজ করার জন্য শক্তি যোগায়। অন্যদিকে অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ভাল ঘুম না হলে কোনো কাজে মন বসে না। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষ “ঘুম আসছে না” রোগে ভুগছে। নির্ভর করছে  বিভিন্ন প্রকার ঘুমের ঔষধের ওপর। কিন্তু ঘুমের ঔষধ ঘন ঘন সেবন স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই জলদি ঘুম আসার প্রাকৃতিক কিছু উপায় নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন। তাহলে চলুন দেখে নিই ১ মিনিটে ঘুম আসার উপায়।

Ask Question
১ মিনিটে ঘুম আসার উপায় দেখে নিন

আরও পড়ুনঃ সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

১ মিনিটে ঘুম আসার উপায়

১) উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিঃ

Honey Sponsored

প্রতিটি কাজের জন্যই নির্দিষ্ট একটি পরিবেশ দরকার হয়। রান্নার কাজের জন্য যেমন রান্নাঘরের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি ঘুমানোর জন্যও একটি পরিবেশ দরকার হয়। ঘুমানোর আগে কক্ষের আলো নিভিয়ে রাখুন। প্রয়োজন হলে আই মাস্ক ব্যবহার করুন। শব্দ সৃষ্টি করে এমন সব জিনিস দূরে রাখুন। ভেবে দেখুন কী করলে আপনার ঘুমের জন্য কক্ষটি উপযুক্ত হবে এবং সেই অনুযায়ী কক্ষকে সাজান। হতে পারে সেটা কক্ষের পর্দার পরিবর্তন কিংবা আরামদায়ক ম্যাট্রিস অথবা বালিশ।

ঘুমানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রাখুন। বিছানার আশেপাশে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কম রাখুন।

২) শীতল তাপমাত্রাঃ

বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুমানোর জন্য শীতল পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। ঘুমানোর পর দেহের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কক্ষের তাপমাত্রা ৬০ থেকে ৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখা উচিত। এতে করে শরীরের তাপমাত্রার সাথে কক্ষের তাপমাত্রার সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয় এবং মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

৩) ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও ধূমপানপরিহারঃ

ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ঘুমানোর প্রায় ৬ থেকে ঘণ্টা ৮ আগে ক্যাফেইনযুক্ত  খাবার যেমনঃ চা, কফি, চকলেট ইত্যাদি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। যারা ধূমপান করেন, তারা ধুমপান এড়িয়ে চলুন কারণ ধুমপান মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।

৪) রাতে কী খাবেন এবং কখন খাবেনঃ

তৈলাক্ত ও অতিরিক্ত মশালাদার খাবার খেলে এ্যাসিডিটি ও হজমে সমস্যা হয়। এছাড়াও ভরপেট খাবার খেয়ে ঘুমালে খাবার হজমে সমস্যা হয়। এতে করে অস্বস্তি বোধ তৈরি হয়। রাতে ঘুম না আসার অথবা মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই, রাতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাবেন।

আরও পড়ুনঃ মোটা হওয়ার ঔষধের নাম | মোটা হওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধ

৫) ইলেকট্রনিক সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকুনঃ

মানুষের দেহে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন রয়েছে যা ঘুম আসতে সহায়তা করে। ফোন, টেলিভিশন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী থেকে যে নীল আলো বের হয়, তা দেহ থেকে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ হতে বাধা প্রদান করে। তাই ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘন্টা আগ মুহূর্তে এ সকল ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ব্যবহার করবেন না।

৬) ১ গ্লাস গরম দুধঃ

দুধের মাঝে ট্রিপটোফেন নামক অ্যামাইনো এসিড থাকে যা মেলাটোনিন হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং ঘুম আসতে সহায়তা করে। তাই ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস গরম দুধ পান করুন।

৭) ইতিবাচক চিন্তা করুনঃ

ঘুমানোর আগে সকল প্রকার দুশ্চিন্তা বাদ দিন। দুশ্চিন্তা এক প্রকার মানসিক চাপ সৃষ্টি করে যা ঘুমের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই ঘুমানোর আগে ভালো কোনো স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করুন যা আপনার মন কে প্রশান্তি দেয়।

৮) ধ্যানঃ

ধ্যান মানুষের মনকে শান্ত করে। স্নায়ুকে সতেজ রাখে। ধ্যান মানসিক চাপের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দ্রুত ঘুম আসতে সহায়তা করে। তাই ঘুমানোর আগে ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৯) গরম পানিতে গোসলঃ

ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা না থেকে থাকলে যদি সম্ভব হয় তবে ঘুমানোর আগে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করে নিন। গরম পানি আপনার পেশীকে শিথিল করে দিবে যা জলদি ঘুম আসতে সহায়তা করবে।

১০) বই পড়ুনঃ

ঘুম না আসলে প্রিয় কোনো বই পড়ুন। এতে করে আপনার মনোযোগ সম্পূর্ণরূপে বইয়ের জগতে চলে যাবে এবং সারাদিনের সকল দুশ্চিন্তা মাথা থেকে বের হয়ে যাবে। একটু পর দেখবেন চট করে ঘুম চলে এসেছে।ঘুম না আসলে বই পড়তে পারেন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন যে, ঘুম এসে গেছে।

আরও পড়ুনঃ মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

১১) গান শুনুনঃ

ঘুম আসার ক্ষেত্রে গান খুব সহায়ক একটি মাধ্যম। তাই ঘুম না আসলে গান শুনুন। তবে লাউড মিউজিকের কোনো গান নয় বরং হালকা সুর বা ছন্দের কোনো গান শুনুন। এটি আপনার উচ্চ রক্ত চাপকে কমিয়ে দেয় এবং দেহ ও মনকে রিলাক্স করে।

১২) ব্যায়াম করুনঃ

হালকা ব্যায়াম করুন। তবে সকল ধরনের ব্যামায় কিন্তু ঘুমের জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু ব্যায়াম আছে যা চর্চা করলে ঘুম আসার পরিবর্তে ঘুম চলে যায়। তাই যেসকল ব্যায়াম ঘুম আসতে সহায়তা করে সেগুলোর চর্চা করুন। এই ব্যায়াম গুলোর টিউটোরিয়াল ভিডিও আপনি ইউটিউব বা বিভিন্ন অ্যাপস এ পেয়ে যাবেন।

১৩) ভাত ঘুম/ দিনের বেলা ঘুমানো বর্জন করুনঃ

অনেকে রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার কারণে দিনের বেলা ঘুমায়। কিন্তু দিনের বেলা বিশেষ করে দুপুরের পর ঘুমালে রাতে ঘুম আসতে সমস্যা হয়। তাই, কষ্ট করে হলেও দুপুরে জেগে থাকার চেষ্টা করুন।

১৪) নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান এবং ঘুম থেকে উঠুনঃ

সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সাথে মিল রেখে আমাদের দেহের সার্কাডিয়ান ক্লক কাজ করে অর্থাৎ দেহঘড়ি কাজ করে। দিনের বেলা কাজ আর রাতে ঘুম এই ছন্দে কাজ করে এই সার্কাডিয়ান ক্লক বা দেহঘড়ি। একেক দিন একেক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠার ফলে সার্কাডিয়ান সাইকেল সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। আপনি যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমান এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠেন, তখন সার্কাডিয়ান সাইকেল ঠিকভাবে কাজ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম আসতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন।

১৫) ৪-৭-৮ ব্যায়ামঃ

বিশেষজ্ঞদের মতে ৪-৭-৮ নিশ্বাসের ব্যায়াম ঘুমের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এই ব্যায়াম করার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে ৪ সেকেন্ড নিশ্বাস নিন। তারপর ৮ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন এবং পরবর্তী ৮ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছেড়ে দিন। টানা ৩ থেকে ৪ বার এই ব্যায়াম চর্চা করুন। এতে করে আপনার মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হবে, হার্টবিট রেট ও রক্তচাপ কমে যাবে যা আপনার ঘুম আসার জন্য জরুরি।

আরও পড়ুনঃ বুকের দুধ বৃদ্ধির ট্যাবলেট এবং কিছু প্রাকৃতিক উপায়।

১৬) ঘড়ি দেখবেন নাঃ

অনেকেই ঘুম না আসলে বার বার ঘড়ি দেখে। কিন্তু এটা করা মোটেই উচিত নয়। আপনি যতবার ঘড়ি দেখবেন ততবার ঘুম না আসার কারণে আপনার মন আরো অশান্ত হয়ে পড়বে, হতাশা তৈরি হবে যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই বারবার সময় দেখা থেকে বিরত থাকুন।

আশা করি, উপরিউক্ত বিষয়গুলো মেনে চলে আপনার আর ঘুমের সমস্যা থাকবে না।

RelatedPosts

food-calories

কোন খাবারে কত ক্যালরি তা জেনে নিন।

কোন খাবারে কত ক্যালরি থাকে তা আমাদের সকলের জন্যই জানা জরুরি। বিশেষ করে যারা ডায়েট করে থাকেন কিংবা খাবারের ব্যাপারে লাগাম এনেছেন তাদের জন্য এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।... Continue

 ১০ কেন খায়

মোনাস ১০ কেন খায় ?

মোনাস ১০ কেন খায়? মোনাস ১০ মূলত সেবন করা হয় অ্যাজমা, মৌসুমী এলার্জি এবং চিরস্থায়ী এলার্জি নিরাময়ে। মোনাস ১০ বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধ যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হল... Continue

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম | Chia Seed In Bengali

চিয়া সিড এমন একটি খাদ্য যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু দান করবে। আজকে আমরা চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিডের উপকারিতা, ওজন কমাতে চিয়া... Continue

খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি দূর করার উপায়

ত্বকের সাধারণ সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি হলো খুশকির সমস্যা। এই সমস্যার আবির্ভাব ঘটে যখন মাথার ত্বকের আদ্রতা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়, ফলে পড়তে হয় একটি বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে। অবশ্য... Continue

খাবার খাওয়ার পর পায়খানা হয় কেন

যেভাবে বুঝবেন হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন কিনা

হরমোন মূলত আমাদের শারীরিক সকল কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কযুক্ত। শরীরের যদি কোন একটি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা গ্রোথ ডেভেলপমেন্ট ঠিকমতো না হয় তবে বুঝতে হবে হরমোনের সমস্যা রয়েছে। যদিও... Continue

ফ্রিডম ইনটিমেট এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ

ফ্রিডম ইনটিমেট এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ

ফ্রিডম ইনটিমেট এন্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ । পিরিওড, ব্যায়াম কিংবা সহবাসের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  এটা মেয়েদের যোনি পরিষ্কার করার একটি সল্যুশন, যা বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি... Continue