নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়ঃ অনিয়মিত মাসিক নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া কিংবা আরো বিভিন্ন কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। এই সমস্যাটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় “Oligomenorrhea”। Webmd এর তথ্য মতে যদি কোন নারীর মাসিকের সময়কাল ৩৫ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তবে সেটি অনিয়মিত মাসিক কিংবা “Oligomenorrhea” হিসেবে ধরা হয়। 

Ask Question

অনেক মহিলারা অনিয়মিত মাসিক এর কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যা একেবারেই উচিত নয়। মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র গর্ভধারণ করলেই যে মাসিক বন্ধ কিংবা অনিয়মিত হয়ে যায় ব্যাপারটা এমন নয়। এ ছাড়াও অনেকে মাসিক নিয়মিত করার উপায় হিসেবে বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকেন যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, কাজের প্রচণ্ড চাপ, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পলিসিসটিক ওভারি, অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, হঠাৎ করে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। তাছাড়া অনিয়মিত মাসিক হবার কারণে অনেক নারীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান, যা তাদেরকে আরও ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে ১৯ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মহিলাদের ১৪.২% মহিলারাই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন।

Honey Sponsored

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে মাসিক নিয়মিত করার ঔষধ সেবন করার চেয়ে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করা সবচেয়ে উত্তম। বেশিরভাগ মহিলারা নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে অবগত নয়। তাই চলুন আমরা জেনে নেই মাসিক নিয়মিত করার প্রাকৃতিক কিছু উপায় এবং প্রাকৃতিক কিছু খাবার সম্পর্কে। এগুলোর মাধ্যমে আপনি কোন ধরনের ঔষধ সেবন ছাড়াই আপনার মাসিক নিয়মিত করতে পারবেন।

 

নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

যে সকল উপায় অবলম্বন করলে আপনি অনিয়মিত মাসিক থেকে মুক্তি পেতে পারেন সেগুলো সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক:

শারীরিক ব্যায়াম

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট কিছু মাসিক হওয়ার ব্যায়াম রয়েছে যেগুলোর ফলে পেশির সংকোচন সংঘটিত হয়। এর ফলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা থাকে না। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে কোনো অবস্থাতেই মাসিক চলাকালীন সময়ে ব্যায়াম করা যাবে না। মাসিক শেষ হবার পর নিয়মিত ব্যায়াম করলে পরবর্তী মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে যায়।

 

তিল

তিল শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি শরীরের হরমোন এর উৎপাদন অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। অল্প পরিমাণে তিল ভেজে গুঁড়া করে নিয়ে তা যদি নিয়মিত এক চামচ গুড়ের সাথে খালি পেটে সেবন করা যায় তাহলে মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আরো দেখুনঃ ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়

আদা

মাসিক নিয়মিত করতে আদা অতন্ত কার্যকরী। এক কাপ পানিতে আধা চা-চামচ আদা কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে সেদ্ধ করে নিন। এরপর সেই পানি প্রতিদিন তিন বেলা খাওয়ার পর এক চামচ করে পান করুন। 

 

পার্সলে

পার্সলে ধনেপাতার মতো দেখতে এক ধরনের মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি প্রাচীনকাল থেকেই মাসিকের সমস্যায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি প্রতিদিন ২ গ্রাম করে মোট ৬ গ্রাম তিনবারে পার্সলে চিবিয়ে কিংবা পানিতে সিদ্ধ করে খেতে পারে তবে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

 

ঘৃতকুমারী

ঘৃতকুমারী বহু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটি অ্যালোভেরা নামে পরিচিত। ঘৃতকুমারী সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সর্দি কাশি প্রতিষেধক এবং এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে। এর ভেতরের জেলি বের করে নিয়ে প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে এক চা চামচ মধুর সাথে সেবন করুন। কয়েক মাস নিয়মিত সেবন করলে সহজেই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হয়। 

 

পেঁপে

ঘরোয়া প্রতিষেধক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে পেঁপের। এর ভেতরে থাকা ক্যারোটিন ইস্ট্রোজেন হরমোন কে প্রভাবিত করে। যার ফলে জরায়ুর পেশির সংকোচন সংঘটিত হয় এবং মাসিক ত্বরান্বিত হয়ে থাকে। কাঁচা পেঁপে কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে রস বের করে নিন। এরপর প্রতিদিন সেই রস এক কাপ করে সেবন করুন। তবে মাসিক চলাকালীন সময়ে এটি বন্ধ রাখতে হবে।

 

টক জাতীয় ফল

অনেকে জানতে চান যে টক খেলে কি মাসিক তাড়াতাড়ি হয়? হ্যা, মাসিক নিয়মিতকরণ টক জাতীয় বিভিন্ন ফল যেমন জলপাই তেতুল মাল্টা ইত্যাদি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তেতুল কিংবা টকজাতীয় যেকোনো একটি ফল পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর তার সাথে লবণ চিনি এবং জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার করে পান করুন।

 

আপেল সিডার ভিনেগার

প্রতিদিন খাওয়ার আগে দুই টেবিল-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন। এতে শরীরে ইনসুলিন এবং ব্লাড সুগার কমে গিয়ে মাসিক নিয়মিতকরণ এ সহায়তা করবে।

 

ধনে বীজ

ধনের বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিহিস্টামিন এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এটি মাসিক নিয়মিতকরণ এ সহায়তা করে থাকে। মাসিক হওয়ার সম্ভাব্য তারিখের কয়েকদিন আগে এক চামচ ধনে বীজ এবং দুই কাপ পানি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি কমে গেলে মাসিক হবার আগে তা নিয়মিত পান করুন।

 

ভিটামিন সি

মাসিক হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে ইস্ট্রোজেন হরমোন। আর ভিটামিন-সি ইস্ট্রোজেন হরমোন কে প্ররোচিত করার মাধ্যমে জরায়ুর পেশির সংকোচন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে নিয়মিত মাসিক হয়। তাই প্রতিদিনের খাবারে যতটা সম্ভব ভিটামিন সি জাতীয় শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন সি জাতীয় শাক সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, কাঁচামরিচ, ব্রোকলি, লেবু, গাজর ইত্যাদি।

তাছাড়া আরও কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরমধ্যে গুড়, হলুদ, খেজুর, মিষ্টি কুমড়া, সালমন ফিশ, কাজুবাদাম, আনারস, আঙ্গুর, টক দই ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চেষ্টা করতে হবে খাদ্যতালিকায় এইগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে। তবে সহবাসের পর মাসিক না হলে করণীয় হলো প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট করা। 

পরিশেষে বলা যায় যে আমাদের হাতের নাগালে যে প্রাকৃতিক খাবার গুলো রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে আমরা খুব সহজে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। সুতরাং মাসিক নিয়মিতকরণ এর ঔষধ সেবন না করে চেষ্টা করুন উপরে বর্ণিত উপায়গুলো অবলম্বন করার। 

RelatedPosts

lubricant gel uses

লুব্রিকেন্ট জেল এর কাজ কি? লুব্রিকেন্ট জেল কি ব্যবহার করা নিরাপদ?

লুব্রিকেন্ট জেল এর কাজ কি এটা আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা। লুব্রিকেন্ট জেল হল এক ধরনের হালকা তরল জাতীয় পদার্থ যা মূলত যৌন সঙ্গমের সময় আরামদায়ক এবং যৌনাঙ্গ পিচ্ছিল... Continue

নরমেন্স ট্যাবলেট এর কাজ

নরমেন্স ট্যাবলেট এর কাজ

নরমেনস ট্যাবলেট হলো নরইথিস্টেরন এসিট্যাট জেনেরিক এর একটি ঔষধ। রেনেটা লিমিটেড নরমেন্স ট্যাবলেট বাংলাদেশে বাজারজাত করে থাকে। নরমেন্স ট্যাবলেট এর কাজ এর কাজ হল মূলত মাসিক এবং ত্রুটিপূর্ণ... Continue

কনডম ব্যবহারের নিয়ম সুবিধা ও অসুবিধা

কনডম ব্যবহারের নিয়ম সুবিধা ও অসুবিধা।

আমরা কমবেশি সবাই কনডম ব্যবহারের নিয়ম জানতে চাই। কিন্তু কোথায় থেকে জানবো সেটা খুঁজে পাই না। কারণ আমাদের দেশে যৌন সংক্রান্ত বিষয়গুলো গোপনে আলোচনা করা হয় এবং ট্যাবু... Continue

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

প্রশ্ন হল মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় ? পিরিয়ড বা মাসিকের তারিখ পার হয়ে যাবার পর অনেকেই দুশ্চিন্তা করে থাকেন যে গর্ভবতী হয়ে পড়লেন... Continue

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়?

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়? গর্ভধারণের পর এমন প্রশ্ন প্রায় প্রত্যেক মহিলার মাথায় ঘুরতে থাকে। জেনে রাখা ভালো যে বমি হওয়া গর্ভধারণের একমাত্র লক্ষণ নয়। গর্ভাবস্থার অনেকগুলো... Continue

ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ই ক্যাপ ক্যাপসুল মূলত ভিটামিন ই মুখে খাওয়া হয় এবং প্রয়োজনে বাহ্যিকভাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী ই-ক্যাপ ক্যাপসুল এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন ই... Continue