মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

মুখে ব্রণ বের হওয়াটা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা এবং সৌন্দর্য সবকিছুকে নিমিষে নষ্ট করে দিতে ব্রণের বিকল্প নেই। আর তাই এই সমস্যাটা যখন দেখা দেয় তখন জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। তবে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ছুটে চলেন চিকিৎসকের কাছে, অনেকেই বিভিন্ন মতামতের উপর ভিত্তি করে দামি ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করা শুরু করেন। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই আপনাকে পোহাতে হবেনা ব্রণের ঝামেলা বা ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপ্সন বোঝাই উষধ। 

Ask Question

ব্রণ কি?

ব্রণ হল ত্বকের প্রদাহ জনিত এক ধরণের সমস্যা যা মূলত বয়ঃসন্ধিকাল সহ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে এটি মারাত্মক কোন সমস্যা নয়। ব্রণ সাধারণত মুখের ত্বকে হয়। বিশেষ করে দুই গাল এবং নাকের ওপর। ত্বকের লোমকূপের তলায় যখন তৈলনিঃসরণ গ্রন্থি এবং মৃত কোষের যুগলবন্দী ঘটে তখনই আবির্ভাব হয় ব্রণ নামক সমস্যার।

আরো পড়ুনঃ মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়

মুখের ছোট ছোট ব্রণ হওয়ার কারণ

ব্রণের নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। এ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা ব্রণ হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করেছেন। তবে তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বয়সন্ধিকাল। কারণ বয়সন্ধিকালে হরমোনাল চেঞ্জ এর কারণে মুখে ব্রনের আবির্ভাব ঘটে। অন্যান্য কারণ গুলো হলোঃ

মুখের ছোট ছোট ব্রণ হওয়ার কারণ
  • ত্বকের অযত্ন
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
  • জীবাণুর সংক্রমণ
  • অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • অতিরিক্ত পরিমাণ তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ
  • ঘুম না হওয়া
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • উল্টাপাল্টা ক্রিম ব্যবহার
  • এবং পরামর্শ না নিয়ে বিভিন্ন মেডিসিন সেবন করা।

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়

খুব সম্প্রতি মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার এমন কিছু উপায়ের সন্ধান মিলেছে যেগুলো সঠিকভাবে অবলম্বন করলে ব্রণ দূর করা যায় রাতারাতি। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখতে হবে বেনজয়েল পারোঅক্সাইড, সালফার, টি-ট্রি অয়েল, বা স্যালিসিলিক এসিড এর ওপর, যেগুলো ত্বকের জন্য বেশ ভালো এবং ব্রণ দূরীকরণে বেশ কার্যকরী। মনে রাখবেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মুখে অতিরিক্ত ব্রণ বৃদ্ধিতে যেসকল ক্রিম ব্যবহার করা হয় সেগুলোর বেশিরভাগই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি স্কিন ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে। আর তাই অবশ্যই, বাজারে যেকোন ক্রিম  ব্যবহারের পূর্বে সর্তকতা অবলম্বন করবেন।

আরো পড়ুনঃ মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায়

ব্রণের সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব শুধুমাত্র কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ এবং ভালো মানসম্মত মশ্চারাইজার ও ফেসপ্যাক ব্যবহারেও দ্রুত ফলাফল মেলে। তাহলে চলুন এবার জেনে এক রাতে ব্রণ দূর করার উপায়।

বেনজয়েল পারঅক্সাইড, সালফার, টি-ট্রি অয়েল বা স্যালিসিলিক এসিড ত্বকের ব্রণ দূরীকরণে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আর তাই এই কয়েকটি উপাদানযুক্ত ক্রিম মুখে সারারাত লাগিয়ে রাখলে পরেরদিন অনেকটাই ঠিক হয়ে যায়। 

ব্যবহারের পদ্ধতিঃ

বেনজয়েল পারঅক্সাইড, সালফার, টি-ট্রি অয়েল বা স্যালিসিলিক এসিড যুক্ত ক্রিমের ক্ষেত্রেঃ

  • প্রথমতঃ আপনার ব্যবহারকৃত নরমাল ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
  • দ্বিতীয়তঃ স্বাভাবিকভাবে পরিমাণমত ক্রিম হাতে নিয়ে মাসাজ করে সারারাত রাখুন।
  • তৃতীয়তঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে আবারো ব্যবহারকৃত নরমাল ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

বেনজয়েল পারঅক্সাইড, সালফার, টি-ট্রি অয়েল বা স্যালিসিলিক এসিড ব্যবহারের ক্ষেত্রেঃ

  • প্রথমত: ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। 
  • দ্বিতীয়তঃ একটি পাতলা কাপড়ে বরফ মোড়ে ব্রণের ওপর কিছুক্ষণ সেক দিন। ব্রণের ফোলা ভাব কিছুটা কমা পর্যন্ত।
  • অত:পর টি-ট্রি অয়েল বা  বেনজয়েল পারোঅক্সাইড সামান্য পরিমান হাতের আঙ্গুলে নিয়ে ব্রণের উপর আলতোভাবে মাসাজ করুন। 
  • সারারাত এভাবে রাখুন। এরপর মুখটা আলতোভাবে বলছে আপনার ব্যবহারকৃত মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। 

আরো পড়ুনঃ খুশকি দূর করার উপায়

মুখের ছোট ছোট ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

মুলতানি মাটি

তৈলাক্ত ত্বক ব্রণের অন্যতম কারণ। আর মুখের এই তৈলাক্ত ভাব দূরীকরণে মুলতানি মাটির জুড়ি নেই। এজন্য ত্বকের তেলতেলে ভাব দূরীকরণে মুলতানি মাটি পানি দিয়ে পেস্ট করে নিয়মিত লাগাতে পারেন।

শসা

ব্রণ দূরীকরণে শসার ভূমিকা অনেক। এটি যেমন খাদ্য গুনাগুনে পরিপূর্ণ, ঠিক একইভাবে ত্বকের যত্নেও বেশ কার্যকরী। এতে থাকা ভিটামিন এ, ডি এবং ই ত্বকের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত সহায়ক। সেইসাথে শসার রস তৈলাক্ততা দূরীকরণে বিশেষ কার্যকরী। তাই ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে শসার রস মুখে লাগাতে পারেন। অথবা আইস কিউব করে রেখে দিয়েও সেটা নিয়মিত ইউজ করতে পারেন।  তবে হ্যা, এর বাইরেও বিভিন্নভাবে শসা ব্যবহার করতে পারেন ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে। যেমনঃ শশা গোল গোল করে কেটে এক ঘণ্টা পানিতে সেটা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করে, অথবা সেই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে।

তুলসী পাতা

ব্রণের জন্য তুলসী পাতার রস অনেক বেশি উপকারী। আর এর কারণ তুলসী পাতায় থাকা আয়ুর্বেদিক গুনাগুণ। আর তাই শুধুমাত্র এই পাতার রস ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রেখে, শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তাহলেই মুক্তি পেতে পারেন ব্রণের সমস্যা থেকে।

টুথপেস্ট

ফেসপ্যাকের মত করে ব্যবহার করতে পারেন এটি। গবেষণায় প্রমাণিত অতিরিক্ত তেল টেনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে টুথপেস্টে। ফলে তৈলাক্ত ত্বকের কারণে যাদের মুখে ব্রণ বা গোটা বের হয় তারা এটি বিভিন্ন ভাবে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। আর তাই সামান্য পরিমাণে শুধুমাত্র ব্রণের জায়গায় এটি ব্যবহার করুন। আর ব্যাবহারের পরে যদি মুখের ত্বকের কোন সমস্যা না দেখা দেয় তাহলে ধীরে ধীরে পরিমাণটা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

রসুন

শুনলে অবাক হবেন, ব্রণের বড় শত্রু রসুন। আপনি যদি এক দুই কোয়া রসুন দু-টুকরো করে কেটে নিয়ে সেই রসটা ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান তাহলে ঠিক তারপরের দিন দেখতে পাবেন ত্বকের উন্নতি ঘটেছে মানে পুরোপুরি সেরে গেছে আপনার ব্রণ। 

আপেল

আপেল এবং মধুর মিশ্রন ব্রণের দাগ এবং ব্রণ দুটোই দূরীকরণের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি আপনি নিয়মিত এই উপায়টি অবলম্বন করেন তাহলে খুব সহজেই মুক্তি মিলবে ব্রনের সমস্যা থেকে। এক্ষেত্রে প্রথমত আপনাকে আপেলের পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর তাতে চার থেকে ছয় ফোঁটা মধু মিশাতে হবে আর সেই মিশ্রণটি মুখে খুব ভালভাবে লাগিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ নিয়ম মেনে মুখ ধুলে আপনার মুখের ত্বক ভালো হবে সেইসাথে ব্রণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায়।  

দারুচিনি

দারুচিনি ও ত্বকের জন্য বেশ ভালো  কাজ করে। দারচিনির গুঁড়া যদি গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্রনে আক্রান্ত স্থানে লাগান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। 

পেঁপে

পেঁপে খাবার হিসেবে খেয়ে এবং বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে ব্রনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন আপনি। কারণ  ব্রণের একটি অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। আর এই ত্বক কে পেপে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। 

অ্যাসপিরিন

খাওয়ার ঔষধ হিসেবে নয় বরং ব্রণ সারাতে সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধ অ্যাসপিরিন। এতে থাকা স্যালিসাইলিক এসিড ব্রণ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেয়।   

তাই এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। প্রথম অবস্থায় চার-পাঁচটা ট্যাবলেট ভালোভাবে গুড়িয়ে নিন। এরপর সেগুলো অল্প পানির সঙ্গে মেশান। এমনভাবে মেশাবেন যাতে সেটার একটা পেস্ট তৈরি হয়। পরবর্তীতে তা সংগ্রহ করে রাখুন এবং প্রতিদিন রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে ব্রণে আক্রান্ত স্থানে ভালভাবে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। পরের দিন সকালে উঠে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তাহলেই পাবেন ব্রণের সমস্যা থেকে পরিত্রান। তবে হ্যাঁ, যদি খুবই স্পর্শ কাতর হয় তাহলে কয়েক মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিতে পারেন।

শেষ কথা

সবশেষে বলা যায় যে কপালে ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে উপরে নির্দেশিত নির্দেশনাগুলোই যথেষ্ট। তবে সবকিছুর পরেও যদি মুখ কিংবা মুখের ত্বক থেকে ব্রণ দূর না হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

RelatedPosts

ফ্রি অনলাইন ডাক্তার পরামর্শ নিন

বাংলাদেশের সেরা অনলাইন ডাক্তার পরামর্শ নিয়ে আমাদের এই পরিষেবার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের মানুষ হাসপাতালে কিংবা ব্যক্তিগত চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারেন না।... Continue

নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

নিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রাকৃতিক উপায়ঃ অনিয়মিত মাসিক নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, ওজন কমে যাওয়া কিংবা আরো বিভিন্ন কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।... Continue

সহবাসের পর রক্তক্ষরণ কেন হয়

সহবাসের পর রক্তক্ষরণ কেন হয়

সহবাসের পর রক্তক্ষরণ কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই শুধুমাত্র রক্তকরণ বন্ধের ঔষধ সেবনকেই সমাধান হিসেবে দেখে থাকেন। কিন্তু জেনে রাখা উচিত যে সহবাসের পর রক্তক্ষরণ... Continue

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি জেনে নিন | ১৪ টি প্রাথমিক লক্ষণ

পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তবে এটি ছাড়াও গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড মিস হলে... Continue

কোন পিল সবচেয়ে ভালো

কোন পিল সবচেয়ে ভালো? জন্মবিরতিকরণ পিল।

জন্মবিরতিকরণ এর জন্য কোন পিল সবচেয়ে ভালো এমন প্রশ্নের সম্মুখীন আমরা নিয়মিত হয়ে থাকি। আজকে আমরা মুখে খাবার সকল পিল গুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং এদের মধ্যে তুলনামূলক... Continue

বাচ্চা হওয়ার পর পিল খাওয়ার নিয়ম

বাচ্চা হওয়ার পর পিল খাওয়ার নিয়ম কী

বাচ্চা হওয়ার পর পিল সেবনের নিয়ম গুলো সাধারণত অন্যান্য মহিলাদের মতই। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত মহিলাদের সন্তান প্রসব করার ২১ দিন পর থেকেই... Continue