মানব মস্তিষ্কের গঠন বিভিন্ন অংশ ও কাজ
হোক কোনো সুসজ্জিত সেনাদল কিংবা কোনো ফুটবল দল। সবজায়গায়ই একজন দলনেতা বা কমান্ডিং অফিসার থাকেন। পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক রোবট কিংবা আঠারো’শ শতকের সয়ংক্রিয় মেশিন সবকিছুতেই একটা ইঞ্জিন কিংবা পরিচালনা করার জন্য একটা অপশন থাকেই। মানব শরীরকে একটা মেশিনের সাথে যদি তুলনা করা হয় মস্তিষ্ক অবশ্যই স্থান পাবে ইঞ্জিনের জায়গায়। মস্তিষ্ক যেকোনো প্রানীর জন্যই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গ। মস্তিকের ক্রিয়াকলাপ অথবা কমান্ড দেয়ার মাধ্যমেই সংঘটিত হয় আমাদের শরীরের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ।
আরও পড়ুনঃ হৃদরোগ কি | হৃদরোগ হওয়ার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার
মানুষের মস্তিষ্ক করোটির অভ্যন্তরে অবস্থিত যা দেহের প্রধান নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র। ভ্রুণ অবস্থায় সুষুম্নাকান্ডের অগ্রবর্তী দন্ডাকার অংশ ভাঁজ হয়ে পর পর ৩টি বিষমাকৃতির স্ফীতি তৈরী করে ৷ স্ফীতি ৩টি মিলেই গঠিত হয় মস্তিষ্ক ৷ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মস্তিষ্কের আয়তন ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, গড় ওজন ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় ১০ বিলিয়ন নিউরন থাকে।
মস্তিষ্কের গঠন
নিউরনঃ মস্তিষ্ক গঠনের মূল উপাদান হলো নিউরন বা স্নায়ুকোষ। স্নায়ুকোষ খুব জটিল একটি উপাদান।মানব মস্তিষ্কে প্রায় ১০ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ রয়েছে। নিউরনের প্রধান দুটি অংশের নাম ডেনড্রাইট ও অ্যাক্সন। ডেন্ড্রাইট হল সংকেতগ্রাহক অ্যান্টেনার মত, যা অন্য নিউরন থেকে সংকেত গ্রহণ করে। অ্যাক্সন সেই সংকেত পরিবহন করে অপরপ্রান্তের ডেন্ড্রাইটে নিয়ে যায়। মানুষের মস্তিষ্কের ভিতরে রয়েছে স্নায়ুকোষ ছাড়াও থাকে, গিলাল কোষ এবং রক্তবাহী শিরা। স্নায়ুকোষ সমূহের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় সিন্যাপ্স। এর ভিতর দিয়ে বৈদ্যুত্যিক সঙ্কেত এবং রাসায়নিক সঙ্কেত সঞ্চালিত হয়।
আরও পড়ুনঃ হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশঃ মানব মস্তিষ্কের মোট তিনটি অংশ রয়েছে। প্রতিটি অংশ আলাদা আলাদা কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। লজ্জা,ক্ষুধা,ক্ষোভ,দুঃখ,ব্যাথা সবই এই তিনটি অংশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
অগ্র মস্তিষ্ক (forebrain): মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ হলো এর অগ্রমস্তিষ্ক। এই অংশটি প্রায় ৩ সেন্টিমিটার পুরু করটেক্স স্তর দ্বারা ঢাকা থাকে। এই স্তরটির রং ধূসর। এই কারণে একে ধূসর পদার্থ নামে অভিহিত করা হয়। মূলত এর রঙ ধূসর-বাদামী। এই অংশটি নিউরাল কোষ দ্বারা গঠিত। এই অংশ দ্বারা মানুষের দেহের পেশী নিয়ন্ত্রণ, দর্শন এবং শ্রবণের ক্ষেত্রে এই অংশ বিশেষ ভূমিকা রাখে। দেহের ২০% অক্সিজেন মস্তিষ্ক ব্যবহার করে। পক্ষান্তরে মস্তিষ্কে প্রাপ্ত মোট অক্সিজেনের ৯৫% ব্যবহৃত হয় এই ধূসর অংশে। মস্তিষ্কের ধূসর অংশের নিচে থাকে শ্বেত পদার্থ।
মধ্যমস্তিষ্ক:পশ্চাত মস্তিষ্কের উপরের অংশ হলো মধ্যমস্তিষ্ক। এটি অগ্র ও পশ্চাত মস্তিষ্ককে সংযুক্ত করে।মধ্যমস্তিষ্কের পিছনের অংশ পনস সেরিবেলাম ও মেডুলা অবলাংগাটার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।বিভিন্ন পেশীয় কাজের ভারসাম্য রক্ষা মধ্যমস্তিষ্কের কাজ।দর্শন ও শ্রবণও মধ্যমস্তিষ্কের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
আরও পড়ুনঃ সেক্স কি, কত প্রকার ও কী কী?
পশ্চাত মস্তিষ্ক: এই অংশ সেরিবেলাম,পনস এবং মেডুলা অবলাংগাটা নিয়ে গঠিত।সেরিব্লাম পেশির টান নিয়ন্ত্রন,সমন্বয় সাধন এবং দৌড়ানো ও লাফানোর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মেডুলা অবলাংগাটা খাদ্য গলাধঃকরণ, হ্রদপিন্ড ও ফুসফুসের জটিল কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।