পেয়ারার উপকারিতা কি কি জানলে অবাক হবেন
বারোমাসি ফলের একটি হলো পেয়ারা, যা প্রায় সব মানুষের কাছে খুবই পছন্দের ফল। আজকে আমরা পেয়ারার পেয়ারার উপকারিতা ও পুষ্টি গুন সম্পর্কে জানবো।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ সমূহঃ
পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। পাশাপাশি আছে কিছু পলিফেনল। শুধু তাই নয়, এরসাথে আরও আছে ফাইবার, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, এবং ভিটামিন।
ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বলা হয়ে থাকে, মাত্র একটি পেয়ারায় প্রায় চারটি কমলা লেবুর সমান পুষ্টি গুণ উপস্থিত রয়েছে, বিশেষ করে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। পাশাপাশি একটি পেয়ারায় রয়েছে চারটি আপেল এবং চারটি কমলা লেবুর সমান পুষ্টিগুণ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ এবং পানি।
আর অনেক খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন-সি। বলা যায় পেয়ারা হলো ভিটামিন-সি এর অন্যতম উৎস। এতে প্রায় ২১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থেকে থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান।
পুষ্টিবিদদের মতামত থেকে জানা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৭৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৪ গ্রাম প্রোটিন, ১.১ গ্রাম স্নেহ এবং ১৫.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান রয়েছে। সেইসাথে প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় আরও রয়েছে ০.৬ গ্রাম মিনারেল, ০.০৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৩ রিবোফ্লাভিন, ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন, ২৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
এতো পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি আমাদের শরীরে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এরমধ্যে বিশেষ পাঁচটি গুণ হলোঃ
১. ডায়াবেটিসের জন্য অত্যন্ত উপকারী;
২. পেটের জন্য অত্যন্ত সহায়ক;
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবার থেকে এগিয়ে;
৪. চোখের জন্য অত্যন্ত ভালো ফল; এবং
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধী।
আরও পড়ুনঃ
- জেনে নিন কাঁঠালের উপকারিতা
- জেনে নিন আঙ্গুর খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
- জেনে নিন লিচুর উপকারিতা
- জেনে নিন আমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
- তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
এবার চলুন জেনে নেই পেয়ারার উপকারিতার সমস্ত বৃত্তান্তঃ
পেয়ারার উপকারিতা সমূহ
১. পিরিয়ডের ব্যথা নিরাময়ে পেয়ারাঃ আমাদের মাঝে এমন অনেক নারীরই মাসিককালীন পেট ব্যথা করে থাকে। প্রচন্ড ব্যথার কারণে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অনেকেই ব্যাথার ঔষধ সেবন করেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যদি কেউ পেয়ারার পাতা চিবিয়ে বা রস করে খায় তাহলে পিরিওডে হওয়া সেই ব্যথা দ্রুত সেরে যায়, সেইসাথে শরীরে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ফেলে না। আর তাই যারা প্রতিমাসে পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় ভোগেন তাদেরকে বলবো খাবারের তালিকায় এখনই পেয়ারাকে রাখার চেষ্টা করুন। কারণ, আপনাদের জন্য আদর্শ ফল হলো পেয়ারা এবং পেয়ারা পাতার রস, যা খুব সহজেই আপনার মাসিককালীন ব্যথা উপশমে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
২. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারাঃ আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন পেয়ারার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গুণের মধ্যে এটি একটি। মূলত এতে থাকা ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করে।তাছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে পেয়ারার রসে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান ডায়াবেটিস মেলিটাস এর চিকিৎসায় খুব কার্যকর। শুধু তাই নয়, পেয়ারার পাশাপাশি পেয়ারার পাতাও ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
আর তাই যারা প্রতিদিন কচি পেয়ারা পাতা শুকিয়ে মিহি গুঁড়ো করে এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ গুঁড়ো মিশিয়ে মিনিট পাঁচেক ঢেকে রেখে সেই পানি ছেকে পান করেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারাঃ ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই ফলটি খুব ভালোভাবে কাজ করে। কারণ, এতে রয়েছে লাইকোপেন, কোয়ারকেটিন, ভিটামিন-সি এবং বেশকিছু পলিফেনোল, যা শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর যোগান দিয়ে থাকে। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষ করে পেয়ারা প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তবে পাশাপাশি আরেকটি গবেষণায় জানা গেছে, পেয়ারা খেলে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও কমে।
৪. হার্টের সমস্যা নিরাময় করেঃ যারা নিয়মিত পেয়ারা খান তাদের রক্তচাপ ও রক্তের লিপিড কমে যায়। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন-সি।
আর আমাদের শরীরে পটাশিয়াম নিয়মিত হৃৎস্পন্দনের এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। আর তাই হার্টের সমস্যা থেকে নিরাময়ের জন্য পেয়ারা একটি আদর্শ বল। তবে চিকিৎসকরা বলে থাকেন নিয়মিত লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
৫. চোখের সমস্যা নিরাময়ে পেয়ারাঃ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ। আর ভিটামিন-এ আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি পুষ্টি উপাদান, যা চোখের কর্নিয়া কে সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৬. ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা দূর করে পেয়ারাঃ বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডাজনিত রোগ যেমন বংক্রাইটিস, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি রোগ সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে এই ফল। কারণ, এতে বিদ্যমান আয়রন, ভিটামিনসি শ্লেষ্মার মাত্রা কমিয়ে দিতে সক্ষম হয় এবং ঠাণ্ডাজনিত যেকোনো সমস্যার সমাধান দেয়।
৭. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে পেয়ারাঃ এতে থাকা ফাইবার হজম জনিত সমস্যার সমাধান হিসেবে ভূমিকা রাখে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাদের জন্য হজম শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম কার্যকরী ফল পেয়ারা। গবেষণায় এটি প্রকাশ পেয়েছে, নিয়মিত পেয়ারা খেলে খুব তাড়াতাড়ি কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যার সমাধান মেলে।
৮. গর্ভবতী মায়েদের আদর্শ ফল পেয়ারাঃ এতে বিদ্যমান প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদান একটি মানুষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে গর্ভবতী মায়েদের আদর্শ ফল হিসেবে এটি পরিচিতি পাওয়ার কারণ, এতে বিদ্যমান ফলিক অ্যাসিড। মূলত এই এসিড একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজন। কারণ, ফলিক অ্যাসিড বাচ্চার নার্ভাস সিস্টেমকে খুব দ্রুত উন্নত করে, সেইসাথে বাচ্চাদের নিউরোলজিক ডিজঅর্ডার থেকে দূরে রাখে।
৯. দাঁতের সমস্যার সমাধানে পেয়ারাঃ এটা আমাদের কারোরই অজানা নয় যে দাঁত ভালো রাখার জন্য এই ফল খাওয়া আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এতে উপস্থিত ভিটামিন-সি দাঁতের যেকোনো সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে, দাঁতকে করে তোলে ভেতর থেকে শক্ত এবং মজবুত।
১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পেয়ারাঃ পেয়ারাতে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে আর তাই এটি ওজন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভাবে ভূমিকা রাখে। সেইসাথে পেয়ারা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সাথে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে বিদ্যমান ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন বি-৬ ব্রেনের রক্ত সঞ্চালন কে ভালো রাখে, পাশাপাশি এতে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশি এবং নার্ভকে রিল্যাক্স করে আর এলার্জিজনিত যেকোনো সমস্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো, ভিটামিন-সি তে পরিপূর্ণ এই ফলটি যেহেতু আমাদের শরীরে অসংখ্য কার্য সম্পাদনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে, সেহেতু অবশ্যই খাবারের তালিকায় পেয়ারাকে রাখুন। আপনি নিজে নিয়মিত পেয়ারা খান সেইসাথে পরিবারের সকলকে খাওয়ান।