ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল? ডায়াবেটিস নিয়ে প্রশ্নত্তোর।

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চান বেশিরভাগ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীরা। আমাদের আজকের লেখায় এ ধরনের কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো। লেখাটি পরবর্তীতে পুনরায় পড়তে চাইলে অবশ্যই আপনি ফেসবুকে শেয়ার করে রাখতে পারেন।

Ask Question

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস এক ধরনের রোগ ব্যাধি যা মানব দেহের রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন যা পাকস্থলীর পেছনের অগ্নাশয় বা প্যানক্রিয়াস নামক একটি গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। সুস্থ শরীরে খাবার থেকে প্রাপ্ত সুগার বা গ্লুকস কে ইনসুলিন কোষের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে তা থেকে শক্তি উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তবে ইনসুলিন এই কাজটি করতে ব্যর্থ হয় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে প্রথমত নিজে নিজে চিকিৎসা না করে বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা ও জীবন যাপন করা প্রয়োজন। এতে করে আপনি ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারবেন।

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ভাবে পরিমাপ করা হয়। একটি হলো বাড়িতে বসে কিংবা ফার্মেসিতে গ্লুকোমিটারের সাহায্যে আঙ্গুলের ডগা থেকে রক্ত সংগ্রহ করে এবং অন্যটি হলো হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ল্যাবে শিরা থেকে রক্ত নিয়ে তাতে সুগারের পরিমাণ পরিমাপ করা। দুটি পদ্ধতিতে ডায়াবেটিসের মাত্রা একটু কম বেশি হতে পারে। সাধারণত সুস্থ সবল একজন মানুষের ডায়াবেটিসের মাত্রা খাওয়ার আগে চার থেকে ছয় এবং খাওয়ার পরে সর্বোচ্চ আট পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এই মাত্রাকেই বলা হয় ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক বা নরমাল মাত্রা। তবে আমেরিকান ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের মতে এইচবিএ১সি এর মান যদি ৫.৭ এর নিচে থাকে সে ক্ষেত্রে তাকে নরমাল হিসেবে ধরা হয়। এই মান যাদের ক্ষেত্রে ৬.৫ এর বেশি তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। অন্যদিকে ৫.৭ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকলে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। অনেকে এটিকে বর্ডার লাইন ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ডায়াবেটিস মাপার সঠিক সময় হল খাবার খাওয়ার পর। তবে আপনি খালি পেটেও মাপতে পারেন।

Honey Sponsored

বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

ডায়াবেটিস সাধারণত বড়দের হয়ে থাকে। তবে এই রোগ থেকে শিশুরাও মুক্ত নয়। শিশুদের সাধারণত ইনসুলিন হরমোনের অভাবে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে যা ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান হিসেবে পরিচিত। শিশুদের নরমাল ডায়াবেটিসের মাত্রা উপরে উল্লেখিত বড়দের মতোই ধরা হয়ে থাকে। যদি আপনার শিশুর ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো দেখা দেয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

ডায়াবেটিস কত হলে ওষুধ খেতে হবে?

এখন কথা হলো ভরা পেটে ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট? খাবার খাওয়ার পর রক্তে সুগারের মাত্রা একটু বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এই সময় ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থা ধরা হয় ৭.৮ এবং তা যদি ১১.১ এর বেশি হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার জন্য বলা হয়। খালি পেটে রক্তের সুগারের মাত্রা যদি সাত এর ওপরে চলে যায় তবে এটি ডায়াবেটিস বলে ধরে নেয়া হয়। ভরা পেটে কিংবা খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে ১১.১ হল ডায়াবেটিসের হিসাব। অর্থাৎ খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে ডায়াবেটিস পরিমাপ করে যদি মাত্র ১১.১ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধরে নিতে হবে। এ সময় যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়?

এর নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ডায়াবেটিসের মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে কিংবা মানুষ মারা যেতে পারে।

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়?

ডায়াবেটিস কমানোর একমাত্র উপায় হল নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করা। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা অনুযায়ী নিয়মিত খাবার গ্রহণ করলে বেশিরভাগ সময় এটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং আপনি যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তবে নিয়ম তান্ত্রিক ও নিয়মমত জীবন যাপনের বিকল্প কোন পথ নেই। তবে হঠাৎ করে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে গেলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন গ্রহণ করতে পারেন। 

খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ, সুষমা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অবস্থায় কখনো কোন ডায়েট করা উচিত নয়। 

শেষ কথা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং গুরুতর রোগ যা খুব সহজে নিরাময় হতে চায় না। সময় নিয়ে নিয়ন্ত্রণ চেক জীবনযাপনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করলে এর থেকে খুব সহজে মুক্ত থাকা সম্ভব। 

RelatedPosts

পায়খানা-ক্লিয়ার-করার-উপায়-কোষ্ঠকাঠিন্য-দূর-করার-উপায়-কি

পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় | কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কি

কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যায় ভোগেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রতিদিন আমাদের কাছে অনেকেই পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় জানতে চান। বলা যায়– দৈনন্দিন জীবনে এটি খুবই পরিচিত একটি স্বাস্থ্য... Continue

 ১০ কেন খায়

মোনাস ১০ কেন খায় ?

মোনাস ১০ কেন খায়? মোনাস ১০ মূলত সেবন করা হয় অ্যাজমা, মৌসুমী এলার্জি এবং চিরস্থায়ী এলার্জি নিরাময়ে। মোনাস ১০ বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধ যার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হল... Continue

kidney disease

কিডনি রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার

বর্তমানে পৃথিবীতে মানব জাতি যেসব প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কিডনি রোগ। কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এটা আমাদের কারোরই অজানা নয়।... Continue

মস্তিষ্কের গঠন

মানব মস্তিষ্কের গঠন বিভিন্ন অংশ ও কাজ

হোক কোনো সুসজ্জিত সেনাদল কিংবা কোনো ফুটবল দল। সবজায়গায়ই একজন দলনেতা বা কমান্ডিং অফিসার থাকেন। পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক রোবট কিংবা আঠারো’শ শতকের সয়ংক্রিয় মেশিন সবকিছুতেই একটা ইঞ্জিন কিংবা... Continue

সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি

সেক্সে রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা । জেনে নিন রসুন খাওয়ার নিয়ম

আমরা অনেকেই সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি সম্পর্কে জানতে চাই আবার অনেকেই আমরা এ সম্পর্কে জানি। রসুন যদিও খেতে খুব একটা সুস্বাদু নয় তবে যৌন সমস্যায় রসুন গুরুত্বপূর্ণ ।... Continue

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

সাদা স্রাব কী? মেয়েদের সাধারণ শারীরিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া। তবে এই সমস্যার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিশোরী মেয়েদের ক্ষেত্রে। পিরিয়ডের... Continue