অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয় | এন্টিবায়োটিক এর সাইড ইফেক্ট
অসুখ হলে বা শরীর খারাপ হলে অনেকেরই প্রায় সময় অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। এখন পর্যন্ত খুব কম ব্যক্তি কে খুঁজে পাওয়া যাবে যে কিনা কখনও অ্যান্টিবায়োটিক খায় নি। এখন প্রশ্ন হলো, অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া কি ভালো? কখন অ্যান্টিবায়োটিক খাবো? অনেক সময় ডাক্তাররা যে সামান্য কিছুতেই অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেয়, এটা কি সঠিক? অ্যান্টিবায়োটিক বেশি খেলে কী সমস্যা হবে? ডাক্তাররা কেন সবসময় অ্যান্টিবায়োটিক এর ডোজ বা মাত্রা সম্পূর্ণ করতে বলেন?
অ্যান্টিবায়োটিক খেলে শরীরের কী ক্ষতি হয়
অ্যান্টিবায়োটিক এর “অ্যান্টি” মানে বিপরীত বা “রোধ করার ক্ষমতা”। মূলত শরীরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিকার করার জন্য বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত কোনো অসুখ হলে সেই ব্যাকটেরিয়াকে মারার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়। আমরা তো ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক খাই কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিকও কিন্তু ব্যাকটেরিয়া দিয়ে তৈরি। তারমানে এখানে বিষয়টা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ব্যাকটেরিয়া কে মারা অর্থাৎ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরার তেল এর উপকারিতা
অ্যান্টিবায়োটিক এর নির্দিষ্ট ডোজ বা মাত্রা আছে। সেই ডোজ বা মাত্রা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ব্যাকটেরিয়াসমূহ কে পুরোপুরি মেরে ফেলা যায়। কিন্তু এই ডোজ যদি ঠিকমতো সম্পন্ন না করা হয়, তাহলে যে ব্যাকটেরিয়া দমনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়েছিলো, সেই ব্যাকটেরিয়া এর কিছু স্পোর থেকে যায় এবং সেগুলো থেকে আবারও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এরফলে সেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে কোনো লাভই হয় না।
আপনি যদি সামান্য কিছুতেই অ্যান্টিবায়োটিক খান এবং একই রকমের অ্যান্টিবায়োটিক যদি বেশি খেয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তীতে বড় কোনো অসুখ হলে সেই অ্যান্টিবায়োটিক আপনার আর কাজ নাও করতে পারে। কেন করবে না? সেটার উত্তর কিছুক্ষণ পরেই পেয়ে যাবেন।
ধরুন, আপনার এলাকায় কিছুদিন পরপর বিমান হামলা চালানো হয় কিন্তু আপনার এলাকার নিরাপত্তা বাহিনী কোনো ভাবেই সেই বিমান হামলাকারীদের ধরতে পারছে না বা দমন করতে পারছে না। এরকম অনেকদিন চলার পর দেখা গেলো যে, আপনার এলাকার নিরাপত্তা বাহিনী বুঝে গেছে যে এই বিমান হামলা কীভাবে প্রতিহত করতে হয়। এরপরে যখন বিমান হামলা করতে আসলো, তখন আপনার এলাকার নিরাপত্তা বাহিনী সেই হামলা প্রতিহত করে দিলো অথবা এমন কোনো ব্যবস্থা নিলো যার ফলে সেই বিমান হামলার কারণে আপনার এলাকার কোনো ক্ষতি হলো না।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা । জেনে নিন রসুন খাওয়ার নিয়ম
ঠিক সেরকমভাবে অ্যান্টিবায়োটিক এর ক্ষেত্রে বারবার একইরকম অ্যান্টিবায়োটিক খেলে বা বেশি পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ব্যাকটেরিয়া এর ডিএনএ-তে সেই অ্যান্টিবায়োটিক বিরোধী রেজিস্ট্যানস পাওয়ার জন্মে বা ওই অ্যান্টিবায়োটিক রোধী ক্ষমতা তৈরি হয়। যারফলে সেই অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ব্যাকটেরিয়া আর মারা যায় না। বরং ব্যাকটেরিয়া এর ডিএনএ-তে ওই অ্যান্টিবায়োটিক রোধী ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে এবং সেসব ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে হলে আরও পাওয়ারফুল অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। তাই সামান্য কিছু তে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আপনারই ক্ষতি। যখন বড় কোনো অসুখ বা সমস্যা হবে, তখন আর সেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। আমাদের দেশে জ্বর থেকে শুরু করে একটু কোনো সমস্যা হলেই অনেক সময় চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন, যেটা অনুচিত। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এমন নিয়ম করা আছে যে, কোনো রোগীর খুব বড় কোনো সমস্যা না হলে বা প্রয়োজন না হলে কোনো চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ বা প্রেসক্রাইবড করতে পারবে না। আমাদের দেশেও এরকম নিয়ম করা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। অনেকে দোকানে যেয়ে ওষুধের দোকানদারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়। এটা একদম অনুচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত মোটেও কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত না।