রোজা রেখে রমজানে সুস্থ থাকার উপায়
মুসলিম বিশ্বের সিয়াম সাধনার মাস হলো রমজান মাস। এই রমজানে প্রখর রোদে রোজা রেখে সারাদিন অভুক্ত থাকার পর অনেকেই ইফতারে ভুল খাবার খেয়ে ফেলেন। শুধু ইফতারেই নয় বরং রাতে এবং সেহরিতেও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে অনেক বিরূপ প্রভাব পড়ে। একে প্রচণ্ড দাপদাহ তার উপরে সারা দিন রোজা রেখে ভুল খাদ্যাভাসের কারণে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তবে চাইলেই কিছু বিষয় মেনে রমজানেও থাকতে পারেন সুস্থ ও স্বাভাবিক।
রমজানে সুস্থ থাকার উপায়
আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য মুসলিমরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন। তবে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য হুটকরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও রোজা ভঙ্গ করতে হয়। আসুন জেনে নেই কিভাবে রোজার মধ্যে আমরা স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখবো।
সাহরিঃ সুবহে সাদিকের আগে যে খাবার খাওয়া হয় তাকে সাহরি বলে। সাহরি খাওয়া অবশ্যই কর্তব্য, এটা হুজুর পাক (সা.)-এর নির্দেশ। সাহরির খাবার অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। সাহরিতে এমন খাবার গ্রহন করতে হবে যা সহজে পরিপাকযোগ্য। তৈলাক্ত খাবার,অধিক চর্বিজাতীয় খাবার এসব সাহরিতে কখনোই খাওয়া উচিৎ নয়। সারাদিন রোজা রাখায় আপনি যেহেতু দিনে পানি পান করতে পারবেন না। তাই সাহরিতে পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। স্যালাইন জাতীয় পানীয় পান করতে পারেন যেহেতু রোজা গরমের দিনে এবং দিনে ঘামের মধ্যে প্রয়োজনীয় লবণ বেড়িয়ে যাবে। সাহরিতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করা প্রয়োজন। ভাত, সবুজ শাকসবজি, মাছ, মাংস গ্রহণ করতে হবে সাহরিতে। এসব রান্নার ক্ষেত্রে অবশ্যই তেলের পরিমান কমাতে হবে।
ইফতারঃ আমাদের দেশে ইফতারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল যেটা হয়, সবারই ইফতারে তেলের তৈরি বিভিন্ন মুখরোচক খাবার থাকে। এসব খাবার অনেক সময় বাইরের দোকান থেকে কিনে আনা হয়। তবে দুঃখজনকভাবে, বেশিরভাগ সময়ই এসব খাবার তৈরি হয় পুরনো তেল এবং কাপড়ের রঙ দিয়ে। একই তেল বারবার আগুনে ফোটালে কয়েক প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য (ট্রান্স ফ্যাট) তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তেল বারবার ব্যবহারে পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যার মধ্যে বেনজা পাইরিন নামক রাসায়নিক থেকে ক্যান্সারও হতে পারে। স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারিতে খেজুর বা খুরমা, ঘরে তৈরি বিশুদ্ধ পানির শরবত, শসা, পেঁয়াজু, বুট, ফরমালিন অথবা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত মৌসুমি ফল খাওয়া ভালো। এতে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে হজম হয়। সাহরির মত ইফতারেও আপনি স্যালাইন খেতে পারেন ডিহাইড্রেশন থেকে বাচার জন্য।
ব্যায়ামঃ সারাদিন রোজা রাখার পর কারোই মন চাইবে না ব্যায়াম করার জন্য। কিন্তু শরীর ঠিক রাখার জন্য ব্যায়ামেরও দরকার আছে। তবে যেহেতু সারাদিন পানাহার থেকে দূরে থাকতে হবে তাই ভারী ব্যায়াম করা যাবে না। হাটাহাটি কিংবা সামান্য ব্যায়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যোগব্যায়াম সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ। যোগব্যায়াম আপনাকে যেমন শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখবে তেমনি ভাবে খিটখিটে মেজাজ অতিরিক্ত ভগ্নতা থেকেও দূরে রাখবে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের অবশ্যই রোজা শুরুর দুই একদিন আগে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে রোজা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বলাবাহুল্য ইনসুলিন নেয়ার ক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলাররা বলেছেন ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়না। প্রতিদিন না হোক সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ডায়াবেটিস পরিক্ষা করতে হবে এবং অতিরিক্ত তারতম্য হলে অবশ্যই ডাক্তারের নিকট যেতে হবে। এছাড়াও আপনাকে আরও কিছু স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
১. ধুমপানের অভ্যাস অন্তত এই একমাস বাদ দিতে হবে।
২. অতিরিক্ত কায়িকশ্রম এবং একেবারে অলসতা থেকে দুরে থাকতে হবে।
৩. সারাদিন মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যাবহার করা যাবে না।এতে মাথায় চাপ পড়তে পারে।
৪. সাহরি না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।
৫. করোনা থেকে বাচতে দৈনিক পাচ ওয়াক্তসহ তারাবির নামাজ ঘরেই আদায় করতে হবে।
৬. রাতের আহারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. বয়সভেদে সাহরি ইফতার ও রাতের আহারের খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিতে হবে।
৮. উচ্চরক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৯. ইফতারের সময় ধীরেসুস্থে খাদ্যগ্রহন করতে হবে।
১০. যেকোনো শারীরিক সমস্যায় গুগল কিংবা ইন্টারনেট থেকে তথ্য না নিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
উপরের দেওয়া নির্দেশনা গুলো মানলেই ইনশাআল্লাহ্ আপনি রোজা রেখেও সুস্থ থাকবেন।