তেতুলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
তেতুলে রয়েছে চোখ ধাঁধানো পুষ্টিগুণ। টক জাতীয় ফল হওয়ায় তেতুলের নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব ই কঠিন। অনেকেই মনে করেন এটি মস্তিষ্ক ও যৌনজীবনের ক্ষতি করে আবার কেউ কেউ ভাবেন তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায় সেইসাথে বুদ্ধিও কমে।। এগুলো সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।। বরং শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল এই তেঁতুল। তবে নতুন তেতুলের তুলনায় পুরোনো তেতুলের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি।
আরওঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়?
টক জাতীয় ফল হওয়ায় তেতুলের এসকরবিক এসিড খাবার থেকে আয়রন অর্থাৎ লোহা আহরণ করে সংরক্ষণ করে এবং তা শরীরের বিভিন্ন কোষে পরিবহন করে। যা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো শরীরে এর পরিমাণ পর্যাপ্ত হলে মানুষের চিন্তা ভাবনার গতি বৃদ্ধি পায়।
আরওঃ আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়?
শুধু তেতুল ই নয়। তেঁতুল গাছের পাতা ছাল ফলের কাঁচা ও পাকা শাঁস বীজের খোসা পাকা ফলের খোসা সবই অত্যন্ত উপকারী। তেতুলের কচি পাতায় রয়েছে অ্যামিনো এসিড। যার কারনে এই পাতার রসের শরবত সর্দি, কাশি, পাইলস ও প্রস্তাবের জ্বালাপোড়ায় অত্যন্ত দ্রুত কাজ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাচ ও পাকা তেঁতুলের পুষ্টি –
উপাদান | কাচা তেতুল | পাকা তেতুল |
ক্যালসিয়াম | ২৪ মিলিগ্রাম | ১৭০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১ মিলিগ্রাম | ১০.৯ মিলিগ্রাম |
আমিষ | ১.১ গ্রাম | ৩.১ গ্রাম |
শর্করা | ১৩.৯ গ্রাম | ৬৪.৪ গ্রাম |
চর্বি | ০.২ গ্রাম | ০.১ গ্রাম |
ভিটামিন বি১ | ০.০১ মিলিগ্রাম | |
ভিটামিন বি২ | ০.০২ মিলিগ্রাম | ০.০৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬ মিলিগ্রাম | ৩ মিলিগ্রাম |
খনিজ লবণ | ১.২ গ্রাম | |
খাদ্যশক্তি | ৬২ কিলোক্যালরি | ২৮৩ কিলোক্যালরি |
ভিটামিন ই | ০.১ মিলিগ্রাম | |
ফসফরাস | ১১৩ মিলিগ্রাম | |
সোডিয়াম | ২৮ মিলিগ্রাম | |
পটাসিয়াম | ৬২৮ মিলিগ্রাম | |
ম্যাগনেসিয়াম | ৯২ মিলিগ্রাম | |
সিলিনিয়াম | ১.৩ মিলিগ্রাম | |
দস্তা | ০.১২ মিলিগ্রাম | |
তামা | ০.৮৬ মিলিগ্রাম |
আরওঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি? কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম।
তেতুলের উপকারিতা
ইউনানী আয়ুর্বেদী হোমিও এবং অ্যালোপ্যাথিক ঔষধের কাঁচামাল হিসেবে তেঁতুল সমাদৃত। তাহলে চলুন জেনে নেই তেতুলের উপকারিতা গুলোঃ
- তেঁতুল হৃদ্রোগের জন্য উপকারী
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- তেতুলের সাথে রসুন মিশিয়ে খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে।
- নিয়মিত তে তেঁতুল খেলে প্যারালাইসিস রোগীর অনুভূতি ফিরে আসে।
- টারটারিক এসিড থাকায় হজম শক্তি বাড়ায়।
- বুক ধরফর মাথা ঘুরানো হাত-পা জ্বালা কোষ্ঠকাঠিন্য আমাশয় ও ক্ষুধা মন্দা নিরাময়ে বেশ কাজ করে।
- তেতুল অতিরিক্ত ফ্যাট বের করে প্রজনন তন্ত্রের কাজ শক্তিশালী করে।
- ধুতরা কচু এবং এলকোহলের বিষাক্ততা নিরাময় তেতুলের শরবত বেশ কার্যকরী।
- তেতুল গাছের পাতা ও সাল এন্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে তাই এটি শরীরের যে কোন ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- হাঁপানি চোখ জ্বালাপোড়া এবং দাঁত ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন ঘন্টার খানেক হেঁটে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম তেঁতুল খেলে হৃদপিন্ডের ব্লক হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
- গর্ভাবস্থায় মায়েদের বমি বমি ভাব দূর করে।
- কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সেরে যায়।
- মুখে ঘা হলে পানির সাথে তেঁতুল মিশিয়ে কুলকুছা করলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া ঘা নিরাময়ে ও সহায়তা করে।
আরওঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
- তেতুল পাতা বেটে মরিচ ও লবণ মিশিয়ে বড়া বানিয়ে পান্তা ভাতের সাথে খাওয়া যায় এতে শরীরে অনেক উপকার আসে।
- তেতুল পাতার রস সর্দি-কাশি প্রস্রাবের যন্ত্রণা, পাইলস কৃমি ও চোখ ওঠা সারাতে সহায়তা করে।
- তেঁতুলের বিচিতে এক ধরনের এনজাইম আছে যার রক্তের চিনির মাত্রা কমায়।
- তেতুল ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে।
- তেঁতুল বীজের গুড়া নিয়মিত খেলে আলসার ভালো হয়।
- মুখে লালা তৈরি করে।
- তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার করে।
- খাবারের রুচি বাড়ায়।
- এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে প্রায় 5 থেকে 17 গুণ বেশি।
- তেঁতুল ভিটামিন সি এর বড় উৎস
- বাতের ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা কমায়।
- পুরনো তেতুল কাশী সারায়
- অন্য যে কোন ফলের চেয়ে তেতুলে খনিজ পদার্থ অনেক বেশি।
- আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া বাকি সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি
- তেতুল পাতার তৈরি চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- তেতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
- তেঁতুল খাওয়ার পরে যদি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে বোঝা যাবে তেঁতুল শরীরে ভালো কাজ করছে। কারণ পাতলা পায়খানার সঙ্গে ফ্যাট গোলে বের হয়ে যায়।
- তেতুল ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ত্বক ভালো রাখে।
- শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
তবে মনে রাখতে হবে যে, ভরা পেটে তেঁতুল খাওয়া সবথেকে বেশি উপকারী।