হৃদরোগ কি | হৃদরোগ হওয়ার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত, রোগ ই হলো হৃদ রোগ। হৃদরোগ কে বলা হয় নীরব ঘাতক। আগে ধারণা করা হতো বয়স্ক মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কমবয়সী দের ভয় নেই তেমন। কিন্তু এসব ধারণা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ৩০ বছরের উপরের যে কোনো মানুষ আক্রান্ত হতে পারে হৃদরোগে। এমনকি মৃত্যু বরণও করতে পারে।

Ask Question


পুরো বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ গুলোর ভিতরে হৃদরোগ সবচেয়ে উপরের সারিতে অবস্থান করছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩৭ সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর আমাদের দেশেও হৃদরোগে মৃতের সংখ্যা অনেক। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ।

হৃদরোগ কি

আরও পড়ুনঃ হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়

Honey Sponsored

হৃদরোগ কি

সাধারনত হৃদসংবহন তন্ত্র, মস্তিষ্ক, বৃক্ক ও প্রান্তিক ধমনী সম্পর্কিত, রোগকে হৃদ রোগ বলে। তবে আমরা হার্টের রোগ বলতে সাধারণত হার্ট অ্যাটাকই বুঝি। কিন্তু সাধারণত হার্টের যেসব রোগ দেখা যায় তার মধ্যে আছে হার্ট ফেইলিউর, করোনারি হার্ট ডিজিস, হার্ট অ্যাটাক, অ্যারিদমিয়া।

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যাদের বেশি

বয়সঃ পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর এবং নারী দের ক্ষেত্রে ৫৫ বছরের কাছাকাছি তে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই বয়স সীমার চেয়ে অনেক কম বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাসঃ যাদের বাবা মা অথবা পরিবারের সদস্যদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে তাদের মধ্যে কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষের ঝুঁকি বেশিঃ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার এবং মৃত্যু বরণের সংখ্যা পুরুষে তুলনামুলক বেশি মহিলাদের চেয়ে।
উচ্চরক্তচাপঃ যাদের রক্তচাপ বেশি তারা নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন না করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
উচ্চ কোলেস্টেরলঃ রক্তে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল থাকা খুবই বিপজ্জনক। অতিরিক্ত চর্বি গুলো জমা হয় রক্তনালির প্রাচীরে। হৃদপিন্ডের করোনারি রক্তনালির প্রাচীরে চর্বি জমতে থাকলে একসময় রক্তের সরবরাহ কমে যায়। এভাবে রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তখনই হার্ট অ্যাটাক দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ স্বপ্নদোষ কি ও কেন হয়? স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায়।

অতিরিক্ত ওজনঃ ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ১০ কেজি ওজন বৃদ্ধির ফলে যথাক্রমে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক প্রেসার বাড়ে ৩ ও ২.৩ মিলিগ্রাম পারদ চাপ। যার ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় ১২ গুণ।

ডায়াবেটিস মেলাইটাসঃ অনেক দিন ধরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকার ফলে হার্টের উপরও অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। যেসব রক্তনালি এবং স্নায়ু হার্টের সাথে জড়িত সেগুলোর কার্যকারিতা কমে যায় দীর্ঘ দিন ধরে রক্তর গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকার কারণে।

ধুমপান ও অ্যালকোহলঃ তামাকের ক্ষতিকর রাসায়নিক আমাদের রক্তকণিকা গুলোর ক্ষতি করে। ধুমপানের কারণে রক্তনালিতে অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণ। এছাড়াও ধুমপান ও অ্যালকোহল আমাদের উচ্চ রক্তচাপের তৈরি করে। অস্বাভাবিক হৃদস্পনের জন্যও এসব বস্তু দায়ী।

হার্টের রোগের প্রকার ও লক্ষণ

হার্ট অ্যাটাকঃ রোগী দের তীব্র বুকে ব্যথা হয়। তবে যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের হার্ট অ্যাটাকে বুকে ব্যথা অনুভব নাও করতে পারে। হৃদপিন্ড বুকের বাম দিকে থাকে। সেজন্য সবাই মনে করে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা বাম দিকে হবে। আসলে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা হয় বুকের মাঝখানে। ক্ষেত্র বিশেষে পেটের উপরিভাগে ব্যথা হতে পারে।
এই ব্যথা বুক থেকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। যেমন পিঠ, বাম কাঁধ, বাম হাত, ডান হাতে ছড়িয়ে যেতে পারে ব্যথা। ব্যথার সাথে অন্যান্য কিছু লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন: শরীরে ঘাম হওয়া, ঘাম দিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমি হওয়া।

আরও পড়ুনঃ স্থায়ীভাবে পুরুষাঙ্গ বৃদ্ধির উপায় । পুরুষাঙ্গের ব্যায়াম | লিঙ্গ বড় করার উপায়

অ্যারিদমিয়াঃ একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের হৃদপিন্ড প্রতি মিনিটে গড়ে ৭২ বার স্পন্দিত হয়। হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণ এর ফলে এই স্পন্দন পাওয়া যায়। যদি হৃদপিন্ডের তৈরি হওয়া ইলেকট্রিকাল এই সিগনালে কোনো সমস্যা হয় তখন স্পন্দনের হার কমে যায় বা বেড়ে যায়। হৃদপিন্ডের অস্বাভাবিক এই স্পন্দনরত অবস্থাকে বলে অ্যারিদমিয়া। হঠাৎ করে মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে বলে ট্যাকিকার্ডিয়া আর কম হলে তাকে বলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া। ট্যাকিকার্ডিয়া হলে বুক ধরপর করা, মাথা ঘোরানো, মাথা হালকা লাগা, বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্র্যাডিকার্ডিয়া হলে শরীর ম্যাজম্যাজ করা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরানো, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এসব সমস্যা দেখা দেয়।

হার্ট ফেইলিউরঃ হৃদপিন্ড সংকোচনের মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত পৌছে দেয়। হার্ট ফেইলিউর হলো এমন একটি অবস্থা যখন হৃদপিন্ড প্রয়োজন মত শক্তিতে সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। তার মানে হচ্ছে হৃদপিন্ড যথাযথ শক্তিতে পাম্প করতে পারে না। যারা কারণে সারাদেহে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। হার্ট ফেইলিউর হলে বুকে ব্যথা, শরীরে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, কাশি, পেটে পানি আসা, পায়ে পানি আসা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
অনেকেই সামান্য পরিশ্রম করলে হাপিয়ে যায়। হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়া, অল্প পরিশ্রমে অনেক ক্লান্ত লাগা। একটু ভারি কাজ করলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এসব সমস্যা দেখা যায় অনেকের। যাদের সমস্যার তীব্রতা বেশি তারা বাথরুম পর্যন্ত হেটে যেতেও কষ্ট বোধ করতে পারেন। জামা কাপড় বদলানোর মত সহজ কাজেও হাপিয়ে যেতে পারেন অনেকে।

আরও পড়ুনঃ শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায় | শুক্রাণু বৃদ্ধির ঔষধের নাম কী

হৃদপিন্ড সুস্থ রাখতে যা করণীয়

• খাদ্যাভাস বদলানো সবচেয়ে জরুরী। আমরা বেশিরভাগ মানুষ কোনো হিসাব করে খাই না। আমাদের শরীরে যতটুকু ক্যালরি দরকার তারচেয়ে বেশি গ্রহণ করলে শরীরে জমা হতে থাকে। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য, উচ্চ ক্যালরির খাবার গ্রহণের ফলে রক্তনালিতে চর্বি জমা হয়। সুষম খাদ্যভাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খান। অতিরিক্ত লবণ খাবেন না। প্রতিদিন ১ চামচ বা ৫ গ্রামের বেশি লবণ উচ্চ রক্তপাতের সৃষ্টির জন্য দায়ী।
• নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ গ্রহণ করুন।
• ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কিনা তা পরিমাপ করে নিয়ন্ত্রণ করুন। পেটে চর্বি জমলে কমানোর চেষ্ঠা করুন। কায়িক পরিশ্রম বাড়ান। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ব্যায়াম করুন। হাঁটা সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।
• হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কার্ডিয়াক ব্যাম করতে পারেন। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে, রক্তে উপকারি কোলেস্টেরল বা এইচডিএল এর মাত্রা বাড়ায়।
• রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন এবং সঠিক পথ্য মেনে চলুন।
• ধুমপান, তামাক, জর্দা, অ্যালকোহল প্রভৃতি থেকে সম্পূর্ন দূরে থাকুন।
• বুকে ব্যথা অনুভূত হলে বা হার্টের অসুখের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। কারণ হার্ট অ্যাটাকের পর দ্রুত চিকিৎসা করতে পারলে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। নিজে সচেতন হোন অন্যকেও হৃদরোগের ব্যাপারে সচেতন করে তুলুন।

RelatedPosts

পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভু গ্রন্থি বলে কেন

পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভু গ্রন্থি বলে কেন

পিট্যুইটারি গ্রন্থি থাকে মাথায়। শুধু মানুষের মাথায় থাকে এমন না, এই গ্রন্থি সকল প্রাণির মাথায় থাকে। এই গ্রন্থি কী, সেটা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝতে ও জানতে গেলে আমাদেরকে রীতিমতো... Continue

Coral Condom

Coral Condom Uses Price in Bangladesh

PRECAUTIONS Never use oil-based lubricants such as petroleum jelly (Vaseline), baby oil, mineral oil, or hand creams, since these will damage the Coral Condom. Use only water-based lubricants.... Continue

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কতটা নিরাপদ সে ব্যাপারে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং গর্ভের সন্তানের জন্য ছোটখাটো কিছু ভুল বড় ধরনের বিপদ বয়ে আনতে... Continue

kidney disease

কিডনি রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার

বর্তমানে পৃথিবীতে মানব জাতি যেসব প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কিডনি রোগ। কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এটা আমাদের কারোরই অজানা নয়।... Continue

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম | Chia Seed In Bengali

চিয়া সিড এমন একটি খাদ্য যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু দান করবে। আজকে আমরা চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিডের উপকারিতা, ওজন কমাতে চিয়া... Continue

দিনে কতবার মিলন করা যায়

এক রাতে কতবার মিলন করা যায় | দিনে কতবার মিলন করা যায়

এক রাতে কতবার মিলন করা যায় বা দিনে কতবার মিলন করা যায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি ব্যাপার। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত এমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য... Continue