কমলা খাওয়ার উপকারিতা
কমলা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করার নয়। লেবুজাতীয় একপ্রকার সুস্বাদু রসালো ফল হলো কমলা। আমাদের দেশে যার বারোমাসই দেখা মেলে। স্বাদ আর সুগন্ধযুক্ত সুন্দর আকর্ষণীয় এই ফলটি বিদেশি ফল হলেও, আমাদের দেশে দেশি ফলের চাইতেও অধিক পরিচিত এবং সকলের কাছে জনপ্রিয় ফল কমলা। এই ফলটি শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম চাবিকাঠি। কিন্তু আমাদের মাঝে আমরা এমন অনেকেই রয়েছি যাদের কমলার উপকারিতা সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। আর তাদের কথা ভেবেই আমাদের আজকের লেখাটি।
কমলা তে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান সমূহ
ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল কমলা। তবে এর পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান। সেইসাথে আরও রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, ফ্ল্যাভনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন-এ সহ আরও কিছু পুষ্টি গুনাগুন। এগুলো প্রত্যেকটি আমাদের শরীরে আলাদা আলাদা কার্য সম্পন্ন করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা
এবার চলুন জেনে নেই কমলার উপকারিতা সম্পর্কে।
কমলা খাওয়ার উপকারিতা
ওজন কমানোর ক্ষেত্রেঃ ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। বলতে পারেন এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে। তাই, সকালের নাস্তায় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে কমলা খেলে খুব সহজেই পেট অনেকক্ষণ যাবৎ ভরা থাকে। যে কারণে ডায়েটে বিশেষভাবে ভূমিকা রেখে থাকে এটি। তাই, যারা নিজেদের ওজন নিয়ে চিন্তিত ও ডায়েট করছেন তাদের জন্য আদর্শ ফল কমলা।
ক্যানসার প্রতিরোধে কমলাঃ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, পাশাপাশি আরও রয়েছে আলফা ও বিটা ক্যারোটিন, যেগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ, এর পাশাপাশি ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ বিদ্যমান রয়েছে এই ফলে যেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কমলায় সাধারণত উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, যা ফুসফুস এবং ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধে অধিক কার্যকরী। যারা ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান, তারা অন্তত প্রতিদিন একটি করে কমলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আরও পড়ুনঃ পেয়ারার উপকারিতা
সংক্রমণ জনিত সমস্যা নিরাময়ে কমলাঃ ছোট-বড় যেকোনো সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে সাহায্য করে এই ফল। আর এর অন্যতম কারণ এতে উপস্থিত একের অধিক পুষ্টি উপাদান।
মুলত এই ফলে থাকা খাদ্য উপাদান গুলো সংক্রমণ জনিত সমস্যা নিরাময়ে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। আর তাই এর থেকে মুক্তি পেতে খাবারের তালিকায় অবশ্যই কমলাকে রাখা উচিত।
চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে কমলাঃ গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, শরীরে যেসকল চর্ম রোগ সাধারনত দেখা দেয় সেই সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে কমলা। আর তাই যাদের চর্ম রোগ হয়েছে তাদের নিয়মিত এই ফলটি খাওয়া উচিত। আর এটা চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজন্য আপনারা যারা চর্ম রোগের কবলে পড়েছেন, প্রতিনিয়ত কষ্ট ভোগ করছেন, তারা প্রতিদিন একটি করে কমলা খান। তাহলে দেখতে পাবেন খুব সহজেই আপনি আপনার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ তেতুলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
মুখের যত্নে কমলাঃ আমাদের সাধারণত ভিটামিন-সি এর অভাবে মুখে ঘা হয়ে থাকে, সেইসাথে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কমলা একটা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় আমাদের শরীরে এর ঘাটতি সম্পূর্ণভাবে পূরণ করে হয়ে যায়।
তাছাড়াও এতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে এবং ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। চিকিৎসকরা বলে থাকেন মুখের যত্নের জন্য এই ফলের উপকারিতা অপরিসীম।
হজম শক্তি বাড়াতে কমলাঃ হজমজনিত সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের জন্য আদর্শ ফল কমলা। কারণ, এতে থাকা ফাইবার এবং উন্নত অন্যান্য খনিজ উপাদান হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভাবে ভূমিকা রাখে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে, খাবার হজম নিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, তাদের জন্য নিয়মিত কামলা খাওয়া প্রয়োজন। আর এটা চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কমলাঃ এতে থাকা অতিরিক্ত খনিজ উপাদান গুলো হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি এটিকে নিয়মিত সচল রাখতে সাহায্য করে থাকে। আর তাই বলা হয় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কমলার ভূমিকা অপরিসীম।
তবে শুধু এটুকুই নয়, পাশাপাশি পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের উপাদানগুলো শরীরে সোডিয়াম এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপের স্পন্দন ঠিক রাখতে সক্ষম হয়, যে কারণে হৃদপিন্ডের যেকোনো সমস্যা থেকে খুব সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ আপেল এর উপকারিতা
পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে। সেই সাথে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায় এবং শরীরকে যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জুগিয়ে থাকে।
আর হ্যাঁ, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন কমলার কোয়া, সেইসাথে এর খোসা, দুটোই পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই, নিয়ম করে প্রতিদিন এই ফল খাওয়া ছোট-বড় এবং বৃদ্ধ সবার জন্যই উপকারী।
সাধারনত শীতকালে বাজারে এই ফলের আমদানি অধিক হারে বেড়ে যায়, তাই দামও কমে চলে আসে। তাই নিজেদের বাজেটের মধ্যেই খুব সহজেই কিনতে পারা যায়। এজন্য বিশেষজ্ঞরা শীতকালে বেশি বেশি কমলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তাই পরিশেষে একটা কথাই বলবো, আপনি নিজে এবং আপনার পরিবারের সকলেই খাবারের তালিকায় এই ফলকে রাখুন। জীবনে বেঁচে থাকতে হলে সুস্থ থাকতে হবে। কারণ, সুস্থতা সকল সুখের চাবিকাঠি। তাই আপনি এবং আপনার পরিবার সবাই যদি সুস্থতার সাথে বাঁচতে চান, তাহলে অবশ্যই নিয়মিত কমলা খান।