কেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা উচিত নয় ?
আমাদের দেশে খুব ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার হল শারীরিক ছোটখাটো অসুস্থতায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ঔষধ সেবন করা। যেমন দুইদিন ধরে শরীর জ্বর জ্বর ভাব করছে। তিনবেলা প্যারাসিটামল খেলাম কিন্তু তিন দিন হয়ে গেল কমছে না। চলে গেলাম বাড়ির পাশের যেকোনো একটা ওষুধের দোকানে এবং কিনে নিলাম এজিথ্রোমাইসিন বা সে ধরনের কোন এন্টিবায়োটিক। খাওয়া শুরু করলাম এবং তিন দিন পর জ্বর কমে গেল।
কিন্তু জ্বর কমার এক সপ্তাহ পর দেখা গেল যে অন্য একটা অসুস্থতায় এসে শরীরে বাসা বেঁধেছে। আসলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যে কতটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার সেটা যদি আমরা বুঝতাম তাহলে কল্পনা করতাম না।
এমন অনেক ডাক্তারের কাছ থেকে শোনা গেছে যে তারা নিজেরাও ছোটখাটো অসুখ হলে আগেই ঔষধ খেতে ভয় পান। একটা ঔষধ খাবার আগে বারবার ভাবেন যে সেটা তার খাওয়া ঠিক হবে কিনা। কিন্তু ওষুধ সম্পর্কে মোটামুটি জেনে নিয়েই আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিয়মিত ওষুধ সেবন করে আসছি।
শুধু তাই নয় অনেক সময় দেখা যায় যে চিকিৎসক আমাদের যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন আমরা সেটা অনুসরণ না করে আমাদের নিজেদের ইচ্ছামত ঔষধ সেবন করছি।
২০১৫ সালে ৬৫ টি দেশের ওপর গবেষণা করে জানা যায় যে পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষ ছোটখাটো সর্দি-কাশির এবং জ্বরের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন করে থাকে।
তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী কিংবা কোর্স সম্পন্ন না করে এন্টিবায়োটিক ঔষধ এর অবাধ সেবন পৃথিবীতে যক্ষ্মা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে। অবাধে এন্টিবায়োটিক সেবন করার ফলে পরবর্তীতে এ ধরনের ঔষধ মানুষের শরীরে কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে।
তাছাড়া এ ধরনের ঔষধ সেবন সর্দি-জ্বর কমিয়ে দিলেও অজান্তেই মানবদেহে বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি করে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দুটি অঙ্গ হল মানুষের লিভার এবং কিডনি।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের প্রায় ২৭ শতাংশ মানুষ সর্দি-জ্বরের ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামত ঔষধ সেবন করে থাকে। এতে করে যখন তারা বড় ধরনের কোন রোগে আক্রান্ত হয় তখন তাদের শরীরে সেই রোগের ঔষধ আর কোন কাজ করে না। ফলে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করার পরেও অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
উদাহরণ হিসেবে বলা চলে যে আমাদের দেশে যখন কোন মানুষের প্রদাহ বা গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হয় তখন তারা দোকান থেকে ইসোমিপ্রাজল কিনে নিয়ে সাথে সাথে খেয়ে ফেলেন। তাদের মাঝে মাঝেই এধরনের সমস্যা হয় এবং মাঝে মাঝেই তারা এভাবে ওষুধ সেবন করেন।
কিন্তু যাদের মাঝে মাঝেই গ্যাস্ট্রিক আলসার বা প্রদাহ জনিত সমস্যা হয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই থেকে চার সপ্তাহ প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রাম কিংবা ৪০ মিলিগ্রাম ইসোমিপ্রাজল একবার করে সেবন করতে হবে। এতেও যদি নিরাময় না হয় তাহলে আরও চার সপ্তাহ সেবন করা বাঞ্ছনীয়। অথচ আমরা সেটা অনুসরণ না করে নিজেদের ইচ্ছামত গ্যাসের ঔষধ সেবন করে থাকি।
এক্ষেত্রে সেবনকারীদের পাশাপাশি ঔষধ বিক্রেতাদের অনেকটা দোষারোপ করা চলে। তাই আমাদের নিজেদের এসকল ব্যপারে সচেতন হবার পাশাপাশি সকল ঔষধ বিক্রেতাদের উচিত প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ বিক্রি না করা। বিশেষত কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রয় করা একদমই উচিত নয়।
সেই সাথে এসকল ব্যাপারে সরকারের নজরদারি এবং আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। এতে করে মানুষের মাঝে ভয় এবং সচেতনতা দুটোই তৈরি হবে এবং তারা অবাধে ঔষধ সেবন করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবে।