এলার্জি দূর করার উপায় | ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা
এলার্জি দূর করার উপায় বলতে আমরা শুধু ঔষধ সেবনই বুঝে থাকি। কিন্তু ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে এবং ঘরোয়া উপায়ে, দুইভাবেই করা সম্ভব। ঠান্ডা এলার্জি অন্যান্য রোগের মতো বিশেষ কোনো রোগ না হলেও এর কারণে মানুষের মাঝে বিব্রত হতে হয় সবচেয়ে বেশি। তাই চলুন ঔষধ এর দ্বারা এবং ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা করা যায় সে ব্যাপারে আলোকপাত করা যাক।
এলার্জি কী?
এলার্জি হল ইমিউনসিস্টেমের এক ধরণের অবস্থা যা পরিবেশগত বা খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণে মানবদেহে হাইপারসেনসিটিভিটি রূপে প্রকাশ পায়। এলার্জির বাহ্যিক রূপ সাধারণত শরীরে চুলকানো, গোল চাকা দাগ, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ঠান্ডা জনিত এলার্জি কেন হয় ?
যাদের শরীরে রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেশি তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা এলার্জি বেশি দেখা যায়। তবে কিছু কারণে এই এলার্জি শরীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে । যেমন
- বিভিন্ন পশু পাখির লোম
- কসমেটিক্স সামগ্রী
- গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া
- রাস্তার ধুলাবালি
- বিভিন্ন ধরনের এলার্জি জাতীয় খাবার যেমন ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি, বেগুন, হাঁসের ডিম এগুলো থেকে মানবদেহে অ্যালর্জিজনিত সমস্যাগুলো বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় যে শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ায় এলার্জির সমস্যা বেশি হয়।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরার তেল এর উপকারিতা
ঠান্ডা জনিত এলার্জির লক্ষণ
এলার্জির প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি। তবে ঠান্ডা এলার্জির আরেকটি লক্ষণ হলো নাক বন্ধ হয়ে আসা এবং বারবার হাচি হওয়া। তাছাড়া এর পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যাওয়া সহ চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। এই কারণে অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে যে এগুলো অ্যালার্জি জনিত সমস্যা।
এলার্জি দূর করার উপায়
এলার্জি কখনো সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তবে ডাক্তাররা ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে এলার্জির চিকিৎসা করার চেয়ে এলার্জি প্রতিরোধ করার সবচেয়ে উত্তম। তাই যদি আপনার ঠান্ডা এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে বের করতে হবে যে এই এলার্জির উৎস কোথায়।
অর্থাৎ কোন খাবার বা কোন পরিবেশের কারণে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। এভাবে খুঁজে বের করে যে সকল কারনে এলার্জি জনিত সমস্যা হয়ে থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি। 7 Garlic Benefits in Sex
রক্তের এলার্জি দূর করার উপায় হল যদি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে তাহলে সে সকল খাবার পরিহার করতে হবে। আবার রাস্তার ধুলাবালি এবং গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যদি সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধান করতে হব। যদি কখনো সমস্যা অত্যন্ত গুরুতর হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
এলার্জির হোমিও ঔষধ
এলোপ্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি এলার্জির ভালো কিছু হোমিও ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই হোমিও ঔষধ কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া অনেক কম। তাই চাইলেই এলার্জি হোমিও ঔষুধের মাধ্যমে কমানো সম্ভব।
ঠান্ডা এলার্জির চিকিৎসা
এলার্জির সমস্যায় ঔষধ খাওয়ার চেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু নিয়ম মেনে চললে ভাল ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া শরীরে এলার্জির কারণে যে রস বের হয় সেখানে ঘি মেখে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আরেকটা উপকার পাওয়া যায়। এলার্জির চিকিৎসা ঘি অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন এক চামচ করে ঘি খেলে ঠান্ডা লাগা বা ঠান্ডা জনিত এলার্জি থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়?
- আপনার চেয়ে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে সেটা কখনো ভাববেন না।
- নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস এর ব্যায়াম করুন।
- কখনো হঠাৎ করে ভয় পাবেন না কিংবা শরীরের ওপর হঠাৎ অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না।
- হঠাৎ করেই অনেক জোরে দীর্ঘ সময় ধরে দৌড়াদৌড়ি করবেন না।
- শরীরে যে কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- পারতপক্ষে ঠান্ডা এবং স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
- রাস্তায় চলাচলের সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
- ঘরে কয়েল ব্যবহার না করে মশারি ব্যবহার করুন।
- কুকুর বিড়াল সহ অন্যান্য পশুপাখি থেকে দূরে থাকুন।
- রুম স্প্রে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- ধূমপান পরিহার করুন।
- পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন।
- শীতের সময় বিছানার চাদর এবং লেপ ধুলাবালিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
- রান্নার ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে দূরে থাকুন।
ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ
এলার্জির সমস্যা ডাক্তাররা সবসময় ঔষধ সেবন না করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর কারণ হলো এটি এমন একটি সমস্যা যার উপযুক্ত চিকিৎসা হলো প্রতিরোধ করা। তবুও যখন এলার্জির সমস্যা গুরুতর হয়ে পড়ে তখন চিকিৎসকরা সাধারণত মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম জাতীয় ঔষধ সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ বয়সভেদে এই ঔষধের মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে এলার্জির কারণে যদি মাথায় যন্ত্রণা হয় এবং সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে আসে বা নাক দিয়ে জল পড়তে থাকে তাহলে একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে সেখানে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল দিয়ে গরম ভাপ নাকের ভেতরে নিন।
আরো পড়ুনঃ মোনাস ১০ কেন খায় ?
এলার্জির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
এলার্জির জন্য নির্দেশিত ঔষধ মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০ মিলিগ্রাম প্রতিদিন একবার সেবনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করার একমাত্র উপায় হল এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অর্থাৎ যে সকল কারণে আপনার ঠান্ডা এলার্জি হয়ে থাকে সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এলার্জিজনিত খাবারগুলো পরিহার করার পাশাপাশি যে সকল কাজ করলে সমস্যা বেড়ে যায় সেগুলো থেকে বিরত থাকুন। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
এলার্জির ঔষধ বেশি খেলে কি হয়?
যে কোন ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উত্তম। তবে আপনি যদি এলার্জির ঔষধ অত্যধিক পরিমাণে সেবন করে থাকেন তাহলে এই ঔষধ পরবর্তীতে আপনার শরীরে আর কোনো কাজ করবে না। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এখান থেকে।