জেনে নিন আপেল এর উপকারিতা
অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি হল আপেল, যা পৃথিবীর সকলের কাছেই পরিচিত এবং এটি বেশিরভাগ মানুষেরই একটি প্রিয় ফল। “প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে দূরে রাখে” প্রচলিত এই কথার গুরুত্ব কতটুকু সেটা যদি জানতে চান, তাহলে বুঝতে হবে আপেল খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে। এছাড়া জানতে হবে এতে বিদ্যমান সকল পুষ্টি গুণ সম্পর্কে। তো দেরি না করে চলুন আজকের জেনে আসি আপেল এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
আপেলে থাকা পুষ্টি গুণ সমূহ
আপেল এমন একটি ফল, যা মানবদেহের জন্য সকল পুষ্টি গুণাগুণের যোগান দিতে সক্ষম। এতে মূলত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।
তবে হ্যাঁ পৃথিবীজুড়ে নানান রঙের নানা আকারের আপেলের দেখা মেলে। তবে এই ফলের সবচেয়ে পরিচিত তিনটি রং হলো, লাল, হলুদ, এবং সবুজ। অবশ্য আমাদের বাজারে লাল এবং সবুজ আপেলের দেখা পাওয়া যায়। আর তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কোন আপেল বেশি স্বাস্থ্যকর? কোনটা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অধিক সক্ষম? লাল আপেল নাকি সবুজ আপেল?
যাদের মনে এমন প্রশ্ন রয়েছে, যারা আপেল কিনতে গেলেই এমনটা ভেবে থাকেন তাদের এই সংশয় দূর হবে এই মুহূর্তেই। কারণ, ২০০৪ সালে আমেরিকায় ১০০ এরও বেশি খাবারের উপর একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। মূলত তাদের উদ্দেশ্যই ছিল এটা জানার যে, তাদের বাছাইকৃত খাদ্য গুলোর মধ্যে কোনটাতে কতটা পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। জানলে অবাক হবেন, সেই গবেষণায় উঠে এসেছে লাল এবং সবুজ আপেলের নাম।
মূলত এই দুই ধরনের আপেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর দিক থেকে ১২ এবং ১৩ তম স্থানে অবস্থান করছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের জন্য কোন আপেলটি অধিক স্বাস্থ্যকর। তবে হ্যাঁ, এর বাইরে যেসকল জাতের এবং আলাদা রঙের আপেল রয়েছে সেগুলো যে আমাদের শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে না, তা কিন্তু নয়। তাই অবশ্যই আপনারা যে রঙের, যে ধরনেরই আপেল পেয়ে থাকেন না কেন সবই খেতে পারেন। তবে অবশ্যই কেনার পূর্বে যাচাই-বাছাই করে কিনবেন। কারণ, ফরমালিনযুক্ত আপেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আপেল এর উপকারিতা সমূহ
আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ফল আপেল। এতে অনেক অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। আর তাই এর বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, সেগুলো হলো-
১. দাঁতের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আপেলঃ আপেল এমন একটি ফল, যা দাঁতের জন্য অত্যান্ত উপকারী। আর এটা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এতে বিদ্যমান পুষ্টি গুনাগুন গুলো যেমন আমাদের দাঁতকে ভেতর থেকে করে শক্ত ও মজবুত, তেমন দাঁতকে করে তোলে ঝকঝকে। কারণ, এই ফল খাওয়ার সময় যখন আমরা কামড় দিয়ে এটাকে চিবোতে থাকি তখন আমাদের মুখের ভেতর লালার সৃষ্টি হয়। আর এই পদ্ধতিতে দাঁতের প্রত্যেকটি কোনায় কোনায় অবস্থানরত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া খুব সহজে বেরিয়ে আসে। আর তাই সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের দাঁতের কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম হয় না। তাছাড়াও আপেলে উপস্থিত ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি দাঁতের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে আপেলঃ আপেলে উপস্থিত ফাইবার পেট ভরাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে, তাও আবার কোনো ক্যালোরি ছাড়াই। আর তাই ক্ষুধা লাগার পরিমাণ ধীরেধীরে কমতে থাকে। ফলে শরীর খুব তাড়াতাড়ি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে হ্যাঁ, এই ফল খেলে শুধু যে দেহের ওজন হ্রাস পায় এমনটা কিন্তু নয়। পাশাপাশি এটি শরীরকে ভেতর থেকে করে তুলে শক্তিশালী, যার কারণে আপেল খেলে যেকোনো কাজ করার স্পৃহা খুঁজে পাওয়া যায়।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে আপেলঃ মানব শরীর কে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ অসুখ থেকে দূরে রাখার চাবিকাঠি আপেল। একটি গবেষণায় জানা গেছে, আপেলে রয়েছে বেশ কিছু উপাদান, যেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম।
৪. হৃদ রোগ নিরাময়ে আপেলঃ হৃদ রোগ নিরাময়ে আপেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, এতে উপস্থিত ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব দ্রুত কমিয়ে আনতে সক্ষম। সেইসাথে আপেলের খোসায় থাকা ফেনোলিক উপাদানটি আমাদের মানব শরীরের রক্ত নালী থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। আর তাই হার্টে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, যারফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। সেইসাথে কারো হৃদরোগ জনিত সমস্যা থেকে থাকলেও ধীরেধীরে সেটা নিরাময় হয়।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপেলঃ যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের অন্তত প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে আপেল খাওয়া জরুরী। ইতোমধ্যে একটি গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যারা প্রতিদিন একটি করে আপেল খায় তাদের ২৮% ডায়াবেটিসের সমস্যা কমে যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী।
৬. লিভারের সুস্থতায় আপেলঃ আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খেয়ে থাকি তার মধ্যে অনেক সময় বেশ কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে থাকে, যা আমাদের লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হিসেবে কাজ করে। আর মূলত এই কারণে লিভারকে সুস্থ রাখা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য যে, লিভার সুস্থ রাখতে এই ফলটি ১০০% সাহায্য করে থাকে। কারণ, আপেলে উপস্থিতরত পুষ্টি উপাদান গুলো খুব সহজেই লিভারের জমা হওয়া ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দিতে সক্ষম হয়। এরফলে লিভার সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে।
৭. ডায়রিয়া এবং হজম জনিত সমস্যার সমাধানে আপেলঃ যারা প্রায় হজমজনিত সমস্যা নিয়ে ভোগেন, কোষ্ঠকাঠিন্যতা নিয়ে বাজে সময় পার করেন তাদের জন্য আদর্শ ফল আপেল। অনেকেই হয়তো আপনাদের এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পান না, তবে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপেল গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে ভূমিকা রাখে। এই ফল মূলত মানব দেহ থেকে অপ্রয়জনীয় বর্জ্য পদার্থ থেকে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত পরিমাণে পানি ধরে রাখতে সক্ষম। আর মূলত এ কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় আপেল খেলে।
৮. স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে আপেলঃ আপেলের অনেক উপকারীতার মধ্যে গবেষণায় এটিও প্রমাণিত হয়েছে, যারা নিয়মিত আপেল খেয়ে থাকে তাদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা খুবই কমে যায়। আর এর অন্যতম কারণ, এতে উপস্থিত ফাইবার, যা খুব সহজেই মানুষকে স্ট্রেস থেকে মুক্তি দেয় এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
৯. চোখের সুস্থতায় আপেলঃ চোখ ওঠা থেকে শুরু করে চোখের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে আপেল খাওয়াটা প্রত্যেকের জন্য খুবই জরুরী। কারণ, এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস চোখকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে সক্ষম হয়। সেইসাথে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভাবে ভূমিকা রাখে।
১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপেলঃ আপেলে তো অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে আর আমরা ইতোমধ্যে সেটা জানতে পেরেছি। কিন্তু এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়, আর শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যারা আপেল খায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অধিক হারে বেড়ে যায়। সেই সাথে শরীর ভেতর থেকে শক্ত ও মজবুত হয়ে ওঠে। শরীরকে যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জুগিয়ে থাকে পুষ্টিসমৃদ্ধ আদর্শ ফল আপেল।
আপেলের এতো উপকারিতা জানার পরেও যদি আপনি খাবারের তালিকায় এটিকে নিয়মিত না রাখেন তাহলে আপনার মত বোকা দ্বিতীয়টি নেই। তাই অবশ্যই খাবারের তালিকায় এটিকে রাখবেন, সেইসাথে পরিবারের সবাইকে নিয়মিত আপেল খাওয়ার পরামর্শ দেবেন।