জেনে নিন কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সমূহ

কিডনিতে পাথর হওয়ার কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ কিডনির পাথর রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু পাথর শুধু কিডনিতেই নয়, হতে পারে রেচনতন্ত্রের যে কোনো অংশে। পুরুষের ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঘটনা শতকরা ১৩ শতাংশ। মহিলাদের ক্ষেত্রে তা ৭ শতাংশ। শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনির পাথর একবার হলে পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

Ask Question

কিডনি ছাড়াও রেচনতন্ত্রের অন্যান্য অংশে পাথর থাকতে পারে। উপর থেকে নিচ দিকে রেচনতন্ত্র যেসব অংশ নিয়ে গঠিত তা হলঃ

  • কিডনি বা বৃক্ক
  • ইউরেটার বা মূত্রনালী
  • ইউরিনারি ব্লাডার বা মূত্রথলি
  • ইউরেথ্রা বা মূত্রাশয়

পাথর কিডনি থেকে পরবর্তী যে কোনো অংশে এসে জমা হতে পারে। অথবা মুত্রথলি তে আলাদা পাথর হতে পারে। সেটিও নিচের দিকে ইউরেথ্রা তে আসতে পারে।

Honey Sponsored
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ

আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ

পাথর আসলে কি: আমাদের শরীরে থাকা কিছু খনিজ পদার্থ দিয়েই পাথর তৈরি হয়। যখন খনিজ পদার্থ গুলোর আধিক্য দেখা যায় তখনই সৃষ্টি হয় পাথর। স্বাভাবিক প্রস্রাবেও এমন কিছু উপাদান থাকে, যা মাত্রারিক্ত হলে পাথর তৈরি করতে পারে। এমন উপাদান হলো ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল ইত্যাদি। শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন এসব পদার্থকে শরীর বের করে দেয়। রেচন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খনিজ বের হয়ে যায়। যদি এসব উপাদানের আধিক্য হয়, অর্থাৎ কোনো কারনে উৎপাদন বেশি হয় তাহলেই সমস্যা দেখা যায়। প্রস্রাবে যখন পরিমাণ বেড়ে যায় তখন এরা ঘনীভূত হয়ে পাথরের আকার ধারণ করে।

রেচনতন্ত্রের পাথরের প্রকারভেদঃ

ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরঃ এটা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যখন প্রস্রাবে সাইট্রেটের মাত্রা কম থাকে এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকে তখন হতে পারে। যেসব খাবারে অক্সালেটের পরিমাণ বেশি থাকে তা থেকে হতে পারে এসব পাথর। বিট, ব্ল্যাক টি, চকলেট, বাদাম, আলু, পালং শাক প্রভৃতি খাবারে অক্সালেট পাওয়া যায়। এসব খাবার মাত্রারিক্ত খাবেন না যদি আগে পাথর হয়ে থাকে।

ক্যালসিয়াম ফসফেট পাথরঃ এই পাথর গুলোও বেশি পাওয়া যায়। এরা সাধারণত ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের সাথেই হয়।

স্ট্রুভাইট পাথরঃএগুলো মহিলাদের হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ঘন ঘন প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই পাথর গুলো দ্রুত বাড়ে এবং বেশ বড় সাইজের হয়। এদেরকে স্ট্যাটহর্ন পাথরও বলা হয়।
সঠিক চিকিৎসা না করা হলে বার বার প্রস্রাবের ইনফেকশন হতে পারে। এমনকি কিডনির কার্যকারীতাও নষ্ট হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ হৃদরোগ কি | হৃদরোগ হওয়ার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

ইউরিক অ্যাসিড পাথরঃ এধরনের পাথর পুরুষদের বেশি হয়। যারা পানি কম পান করেন এবং উচ্চ মাত্রার প্রাণীজ প্রোটিন খান তাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যাদের গেঁটে বাত থাকে, পরিবারের মানুষের এধরনের পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকে এবং যারা কেমোথেরাপি নেয় তাদের সমূহ সম্ভাবনা থাকে ইউরিক অ্যাসিড পাথর হওয়ার।

সিস্টিন পাথরঃ যাদের বংশগত সিস্টিনইউরিয়া রোগ থাকে তাদের এই ধরনের পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সিস্টিন নামক অ্যামাইনো এসিডের আধিক্যের কারণে এমন সমস্যা দেখা দেয়।

কিডনিতে পাথর হলে বোঝার উপায় | মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ

কোমড় ও তলপেটে ব্যাথাঃ কিডনিতে পাথর হলে আকার ও আকৃতির উপর নির্ভর করে ব্যাথার তীব্রতা বিভিন্ন হতে পারে। ছোট পাথর হলে কোনো উপসর্গ দেখা নাও যেতে পারে। পাথর কিডনি থেকে ছুটে এসে মুত্রনালীতে কোথায় আটকে গেলে তীব্র ব্যাথা হতে পারে। সাধারণ ব্যাথা হয় কোমড়ের পিছন দিকে, তলপেটে। ব্যাথা ছড়িয়ে যেতে পারে কুঁচকির দিকে।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ব্যাথাঃ প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া ও ব্যাথা হতে পারে যদি ইউরিনারি ট্রাক্টে ইনফেকশন হয়। পাথরের কারনেও ব্যাথা হতে পারে। পাথর যদি মূত্রনালী ও মূত্রথলির সংযোগ স্থলে আটকে যায় সেক্ষেত্রেও তীব্র ব্যাথা অনুভূত হতে পারে।

প্রস্রাবের সাথে রক্তপাতঃ কিডনি বা রেচনতন্ত্রের যে কোনো অংশে পাথর হলে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে। সামান্য থেকে বেশি পরিমাণ ও হতে পারে। প্রসাবের রং লাল বা লালচে গোলাপি দেখা যেতে পারে।

কাঁপুনি সহ জ্বরঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথরের রোগিরা কাঁপুনি সহ জ্বরে ভুগে থাকে। ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনেও এমনটা হতে পারে।

বমি বমি লাগা ও বমি হওয়াঃ পেট ব্যাথার সাথে বমি হওয়ার সমস্যা টাও দেখা যায়। শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রেই বমি হয় কিডনি বা মূত্রনালীতে পাথরের ক্ষেত্রে। কিডনির নির্দিষ্ট অংশের সাথে পাকস্থলী ও অন্ত্রের স্নায়ুগত সরবরাহ একরকম হওয়ার কারনে বমি হয়।

যেসব কারণে পাথর হয়ঃ বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হওয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন যাদের বারবার হয় তাদের ক্ষেত্রে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ ইনফেকশনের ফলে কিছু পদার্থ তলানি হিসেবে জমা হয়, যা পাথর তৈরি করতে সাহায্য করে।

পানি কম খাওয়াঃ আমাদের শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। কম পরিমাণে পানি খাওয়া কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির পাথরের অন্যতম কারণ।

প্রাণীজ প্রোটিন বেশি খাওয়াঃ অত্যাধিক রেড মিট, পোল্ট্রি এসব প্রাণীজ প্রোটিন আমাদের দেহে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়ায়। যাদের আগে থেকে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে তাদের জন্য এসব খাবার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়

অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সেবনঃ শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ক্যালসিয়াম ওষুধ ও ভিটামিন ডি সেবন করবেন না। যাদের আগে থেকেই সমস্যা আছে তারা দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, পনির ইত্যাদি কম খাবেন।

চিকিৎসাঃ চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরে আকার, অবস্থান, পাথরের ধরন, কিডনির কার্যকারিতা প্রভৃতির উপর। ছোট পাথর প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। তাই প্রাথমিক দিকে ধরা পড়লে উপসর্গ গুলোর চিকিৎসা এবং প্রচুর পানি করতে বলা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে পাথর বের করার ব্যাবস্থা করা হয়। বড় আকারের পাথরের জন্য অপারেশন করতে হয়। এছাড়া বর্তমানে বাইরে থেকে শক ওয়েভ দিয়ে গুড়া করে পাথর বের করে দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। এই পদ্ধতিকে বলে এক্সট্রা কর্পোরিয়াল শর্ট ওয়েভ লিথোট্রিপসি।

কিডনিতে পাথর হলে করণীয়

প্রচুর পানি পান করুন। প্রস্রাবের রং গাঢ় হলে, রক্ত গেলে, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হোন। যাদের একবার অক্সালেট পাথর হয়েছে তারা অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন। উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সরনাপন্ন হোন।

RelatedPosts

পুরুষাঙ্গে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম

পুরুষাঙ্গে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম

পুরুষাঙ্গে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম জানতে হলে এই লেখাটি আপনার জন্য সহায়ক হবে। আমরা সবাই জানি যে কালোজিরা কে বলা হয় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ঔষধ। শুধু... Continue

সহবাসের পর শরীর দুর্বল হলে করণীয় কী কী

সহবাসের পর শরীর দুর্বল হলে করণীয় কী কী

সহবাসের পর শরীর দুর্বল হলে করণীয় কি সেটা অনেকেই লোক লজ্জার ভয়ে চিকিৎসকের কাছে এবং বাহিরের অন্য কারো কাছে জানতে চাইতে পারেন না। আজকের লেখাটি পড়লে আশা করি... Continue

জিনসেং এর উপকারিতা

জিনসেং এর উপকারিতা কি ?

ভেষজ ও ঔষধি গুনের জন্য জিনসেং এর উপকারিতা অনেক। সারা বিশ্বজুড়ে হারবাল চা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বিশ্বে যত প্রকারের হারবাল চা রয়েছে তার মধ্যে জিনসেং অন্যতম। তবে... Continue

ইমকন ১ খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়

ইমকন ১ খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়

ইমকন ১ খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় ? ইমকন ১ মূলত এক ধরনের গর্ভ নিরোধক ঔষধ। অনিরাপদ যৌন মিলনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি সেবন করতে হয়। তবে... Continue

স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিন স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা

স্যলাইনের নাম শুনেনি এমন কাউকে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শরীরে পানিশূন্যতা হলে স্যালাইন খেতে হয় অথবা ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হয়। স্যালাইন কি শুধু এই দুইটা কাজেই... Continue

কি খেলে বীর্য উৎপাদন হয়

কি খেলে বীর্য উৎপাদন হয়

কি খেলে বীর্য উৎপাদন হয় এমন প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা অনেক সময় হয়ে থাকি। এগুলা নিতান্তই ব্যক্তিগত প্রশ্ন হওয়ায় অনেকেই কারো কাছে জানতে চাইতে পারেন না। শুরুতেই আপনাদেরকে জানিয়ে... Continue