জেনে নিন লিচুর উপকারিতা
লিচু ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষের কাছে অত্যন্ত পছন্দের একটি ফল। ষড়ঋতুর এই দেশে বিভিন্ন মৌসুমে পাওয়া যায় নানান পুষ্টিকর ফল। আর সব ঋতুর মধ্যে আমাদের দেশে গ্রীষ্মের আগমন এর সাথে সাথে দেখা মেলে রসালো সুমিষ্টি ফলের। তাদের মধ্যে লিচু একটি।
তবে এই ফলটি বাজারে খুব স্বল্প সময়ের জন্য আসে, আর মানুষের পছন্দের খোরাক মিটিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই চলে যায়। তবে হ্যাঁ, এই ফল যে শুধু খেতে ভালো তা কিন্তু নয়, এটি যেমন মুখরোচক ঠিক তেমনি নানা গুণে সমৃদ্ধ যা আমাদের শরীরের হাজারো উপকারে আসে।
আর তাইতো আমাদের আজকের এই লেখাটিতে আমরা আপনাদেরকে জানাবো লিচুর সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য যেগুলো আপনাদের কাছে একদমই অজানা। আশা করি এই লেখাটির মাধ্যমে আপনারা পুরোপুরি জানতে পারবেন লিচুর উপকারিতা এবং এটি মানবদেহের জন্য কী কী পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ বেলের উপকারিতা
লিচুর উপকারিতা
লিচুতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। সেইসাথে রয়েছে নানা খনিজ উপাদান যেমনঃ
- ম্যাগনেসিয়াম
- ম্যাংগানিজ
- কপার
- ফলেট
উপরের খনিজ পদার্থ সমূহ রক্তের উপাদান তৈরিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। আর তাছাড়াও পুষ্টিবিদদের মতামত থেকে জানা যায়, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন ‘সি’ ৩১ মিলিগ্রাম। (১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়।)
আবার মার্কিন ওষুধ প্রশাসন বিভাগ থেকে জানা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। চর্বি একেবারেই নেই। আরও আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট এবং সামান্য পরিমাণ (১মিলিগ্রাম) সোডিয়াম।
তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি আমাদের শরীরের জন্য কতখানি উপকারী। তবুও এবার চলুন কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক লিচুর উপকারিতা গুলো।
আরও পড়ুনঃ আপেল এর উপকারিতা
১. শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করেঃ লিচুতে থাকা প্রতিটি পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। তাই, এগুলো আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর যেকোনো মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হলে সব ধরনের ভাইরাস নির্মূল হয়ে যায়। তাই, বলা যায় শারীরিক সুস্থতার জন্য লিচু একটি আদর্শ ফল।
২. রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ লিচুতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন অর্থাৎ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। আর তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। যদি আপনাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই খাবারের তালিকায় লিচুকে রাখতে পারেন।
৩. ক্যান্সার যোদ্ধাঃ বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে লিচু। বলতে পারেন লিচুর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে এটি। কারণ, এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করে।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ লিচু শরীরের ওজন কমাতে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। এতে থাকা খাদ্য উপাদান, পরিপাক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এই খাদ্য আঁশগুলো দেহের ভেতর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সমূহ বের করে দিতে সক্ষম হয়। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে অবশ্যই লিচু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৫. ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারীঃ লিচুতে থাকা ভিটামিন সি, হাড় দাঁত এবং ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী। নানা রকম চর্মরোগ ও স্কার্ভি রোগ দূর করতে এটি সাহায্য করে থাকে। তাছাড়াও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং দাঁত করে তোলে ভেতর থেকে মজবুত, পাশাপাশি হাড় শক্ত হয়। তাই, সুন্দর ত্বক, মজবুত দাঁত ও শক্ত হাড়ের জন্য খাবারের তালিকায় যোগ করুন এই ফলকে।
৬. শর্করার নিয়ন্ত্রণ করেঃ শরীরে শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম লিচু। যারফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুনঃ জিনসেং এর উপকারিতা
৭. অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রতিরোধকঃ জানলে অবাক হবেন লিচুতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো অ্যাজমা অর্থাৎ হাঁপানি রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম। আপনি যদি নিয়মিত লিচু খান তাহলে আপনার অ্যাজমা রোগ একেবারে নির্মূল হয় যাওয়া সম্ভব, কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি!
৮. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ যারা হজমের সমস্যায় ভুগছেন কোষ্ঠকাঠিন্যতার জন্য দিন দিন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করছেন, তাদের জন্য একটি আদর্শ ফল লিচু। কারণ, এটা আমাদের হজমে সহায়তা করে। তবে হ্যাঁ, একটা কথা মাথায় রাখবেন, অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ। তাই, বেশি পরিমাণে খেলে এটি আমাদের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। অবশ্যই খাবার সময় পরিমাণমতো খাবেন সেইসাথে ফরমালিনযুক্ত লিচু না খেয়ে যাচাই-বাছাই করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৯. শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করেঃ বলতে পারেন শক্তির একটি ভালো উৎস লিচু। যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। জানা যায় প্রতি ১০০ গ্রাম লিচু থেকে ৬১ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
১০. চোখের যেকোন সমস্যার সমাধানঃ জানলে অবাক হবেন লিচু খেলে চোখের যেকোনো সমস্যা ভালো হয়ে যায়। যেমন ধরুন, রাতকানা, কর্নিয়ার অসুখ, চোখ ওঠা, চোখের কোনো অংশ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। কারণ, এতে রয়েছে ভিটামিন এ। আর আমরা এটা সবাই কমবেশি জানি, ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। তাই যদি কখনো চোখের এই সকল সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই লিচু খান। তাহলে দেখবেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে আপনি আপনার ফল পাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ জাম্বুরার উপকারিতা ও অবিশ্বাস্য গুনাগুণ
সেই সাথে এই ফল খেলে মস্তিস্কের বিকাশ ঘটে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়, চুল পড়া বন্ধ হয়, স্থূলতা কমে, তাপমাত্রা ঠিক থাকে, রক্তনালী প্রসারিত হয় এবং কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কমে যায়।
তবে হ্যাঁ উপরোক্ত এই কয়েকটি উপকারীতা ছাড়াও আরও অনেক প্রকার উপকারি গুণ রয়েছে এই ফলে।