হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়

সাধারনত হৃৎপিন্ড, রক্তবাহী ধমনী ও শিরা, মস্তিষ্ক ও বৃক্ক সম্পর্কিত রোগকে হার্টের রোগ বলে। আপনি কোনো সমস্যা বোধ করছেন না, বুকে ব্যথা করে না কখনো, যেকোনো কাজ খুব সহজেই করতে পারেন, ভারী কাজ আর অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেও কোনো সমস্যা হয় না, তারমানে কোনো দিন হার্ট অ্যাটাক হবে না – এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আপনি সুস্থ-সবল ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মনে হচ্ছে আপনার শরীরে কোনো রোগ নেই, কিন্তু হঠাৎই হতে পারে আপনার হার্ট অ্যাটাক। কী, ভয় পেয়ে গেলেন? ভাবছেন এবার কী করবেন? নাকি এটা মনে করছেন এগুলো সবই মিথ্যা? আসলে আপনারা যা শুনলেন তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি!

Ask Question

কারণ, কখনও কখনও বুকে কোনো ধরনের ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হয়। আর সমস্যাটা এখানেই। হার্টের রোগ এমন একটা রোগ, যা ঘটে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তেও জানা যায় না। তাইতো আজকালকার দিনে হৃদরোগ মানুষের মৃত্যুর সাধারণ কারণ গুলির মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ঝুঁকি কতটুকু আছে তা জেনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে আপনি পেতে পারেন এর থেকে মুক্তি। যেহেতু হার্ট আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সেহেতু এর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে সবশেষ। তাই, জানতে হবে আমাদের হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায় গুলো।

কারণ, শুধুমাত্র সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা আমাদের এর থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমরা আজকের লেখাটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো হার্টের সমস্যা বোঝার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়।

Honey Sponsored

হার্টের সমস্যা বোঝার উপায়

হার্টের রোগের অন্যতম প্রধান কারণগুলো হলো-

  • বয়স,
  • উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা,
  • উচ্চমাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরল,
  • মদ্যপান,
  • মানসিক চাপ এবং
  • শারীরিক পরিশ্রম না করা।

অর্থাৎ আপনি যদি মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ মদ্যপান করেন আর আপনার শরীরে উচ্চমাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরল থাকে সেই সাথে রক্তচাপের সমস্যা থাকে এবং কাজ করার অভ্যাস না থাকে তাহলে আপনি ভুগতে পারেন এই সমস্যায়। তবে গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ চিকিৎসা বা শারীরিক অবস্থা অথবা জিনগত বিষয়গুলি ভ্রূণের বিকাশ কে আক্রান্ত করলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে হার্টে পৌঁছে যাওয়া জীবাণু ও ভাইরাস দ্বারা  এই রোগ সৃষ্ট হয়।

তবে একটা সময় এই রোগকে সাধারণত বয়স্ক মানুষের রোগ বলেই মনে করা হতো। কিন্তু আজকালকার প্রায় সব বয়সের মানুষই হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক বৈশিষ্ট্যই হৃদরোগের ক্ষেত্রে প্রধান ও নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য কারণ। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিয়ন্ত্রণযোগ্য কারণেই আজকালকার মানুষ এই রোগে বেশি আক্রান্ত। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত ওজন। সেইসাথে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, হার্টঅ্যাটাকের ক্ষেত্রে জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় আর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

মূলত এর কারণ আমাদের মধ্যে আমরা এমন অনেকেই আছি যাদের হার্টের রোগ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। আমরা জানিও না এটা হলে আমাদের কীরকম লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। আর এজন্যই তো আজকালকার সময়ে হার্টের রোগ আমাদেরকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।

হার্টের সমস্যা বোঝার উপায়

হার্টের রোগের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলর হলো সারা পৃথিবীর অসুখগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ধরন বলে হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসা বিষয়ক গবেষকেরা। এবার চলুন জেনে নেই এর লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে-

বুকে ব্যথাঃ এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ বুকের মাঝখানে ব্যথা হওয়া। অর্থাৎ বুকে টান ধরা, যন্ত্রণা অনুভব হওয়া। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বুকে হবে প্রচন্ড যন্ত্রণা আর মহিলা হয়ে থাকলে আপনার হবে অস্বস্তিবোধ।

মূলত, হার্টের সমস্যার কারণে আপনার বুকের মাঝখানে যখন ব্যথা করবে তখন এই ব্যথা আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে। আর চলে যাবে চোয়ালে অথবা বাম কাঁধ ও হাত বরাবর। তাই, আপনার যদি এমন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শ্বাসকষ্ট বা দম ফুরিয়ে যাওয়াঃ এর দ্বিতীয় লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট ও দম ফুরিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ আপনি যদি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হয়ে থাকেন এবং আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যা না থেকে থাকে, আর হঠাৎই এমন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে এটা বড্ড খারাপ লক্ষণ। মূলত হৃদরোগ থেকে ফুসফুসে জল জমা সহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে ঠান্ডা ছাড়াও শ্বাসকষ্টর সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এর থেকে অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া এর লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

এছাড়াও রয়েছে-

  • বুকে চাপদান অনুভব করা;
  • বুক ধড়ফড় করা মাথা ঘুরানো;
  • দ্রুত হৃদ কম্পন;
  • আস্তে হৃৎকম্পন;
  • হাত ও পা অসাড় হয়ে যাওয়া ব্যথা ও দুর্বলতা;
  • রাতের বেলা হঠাৎই খুব গরম আবার ঠান্ডা লাগা;
  • কাশি;
  • বুকের মধ্যে কল কল করা;
  • তলপেটে হাতের আঙ্গুলে এবং পায়ের আঙ্গুলে ব্যথা অনুভব হওয়া;
  • হাত-পা ও পাকস্থলী ফুলে যাওয়া;
  • খাবারের প্রতি রুচি কমে যাওয়া ওজন কম হয়ে যাওয়া;
  • ব্যায়াম বা নির্দিষ্ট শারীরিক ক্রিয়াকর্মের পরে সহজেই ক্লান্তি অনুভব করা, ইত্যাদি।

তবে যারা অতি বৃদ্ধ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অথবা যারা অধিক মদ্যপায়ী, তাদের বুকে ব্যথা ছাড়াও হৃদরোগের সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের রোগীরা দারুন দুর্বলতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া অথবা হৃৎপিণ্ড ঢিলে হয়ে যাওয়ার দরুন হাত-পা ফুলে গিয়ে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হন।

অপরদিকে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চেহারা ফ্যাকাসে এবং নীলাভ বর্ণ ধারণ করে।

হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, খাদ্যাভাসে মাত্র পাঁচটি পরিবর্তন আনলে হৃদরোগ অর্থাৎ হার্টের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তাই, হার্টের সমস্যা দূর করতে ও হার্টকে সুস্থ রাখতে নিম্নোক্ত পন্থা অবলম্বন করতে পারেন-

  • আঁশযুক্ত খাবার খান।
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাটবাঁধা চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন।

কারণ, বেশি আঁশযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার ফলে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এর মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

আর সেই সাথে ফ্যাট জমাটবাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার গুলো শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই, খাদ্য তালিকা থেকে এই খাবারগুলো আজই বাদ দিন।

  • সেই সাথে খাবারের তালিকায় রাখুন রসুন, আমন্ড, তৈলাক্ত মাছ, হলুদ, কলা, ওটস, সবুজ শাকসবজি। কারণ, এই প্রতিটা খাদ্য হার্ট সুস্থ রাখার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • এছাড়া খেলার ছলে ব্যায়াম করা অনুসরণ করুন। হার্ট ভালো রাখতে সপ্তাহে ন্যূনতম ৫ দিন করে রোজ ৩০ মিনিট ব্যায়াম এর অভ্যাস করুন।
  • দৈনন্দিন কাজের ফাঁকেফাঁকে পরিমিত বিশ্রাম নিন, মানে স্রেফ কিছুই করবেন না। চাপ নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
  • স্ট্রেস কমিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। সবকিছুই ইতিবাচক ভাবতে শুরু করুন আর ভালো ভালো বিষয় ভাবার অভ্যাস করুন করুন।
  • বই পড়ুন।
  • সিনেমা দেখুন।
  • হাঁসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন।

অর্থাৎ পূর্ণমাত্রায় বিশ্রাম নিন। যারা সারাদিন কাজের মধ্যে থাকেন, তারা মাঝেমধ্যে কাজ ফেলে উঠে দাঁড়ান  আর বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করুন। অফিস বা সাংসারিক কাজ ভুলে যান। আর নিজের জন্য খানিকটা সময় নিয়ে বিশ্রাম করুন। সেইসাথে ওজনকে বশ মানান। আপনি যদি ধূমপান করে থাকেন তাহলে ধূমপান ছাড়ার চ্যালেঞ্জে জিতুন। কারণ, এটা একটা বড় বদ অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ পরিমিত খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ, ওজন নিয়ন্ত্রণ আর ধূমপান না করা।

শুধুমাত্র দৈনন্দিন জীবনে এই কয়েকটি অভ্যাস আপনার হৃদপিণ্ড কে সুস্থ-সবল রাখবে। তাই নিয়ম-নীতি মেনে চলুন আর সুস্থ থাকুন।

RelatedPosts

টেলিমেডিসিন কি

টেলিমেডিসিন কি?

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি প্রশ্ন হল টেলিমেডিসিন কি? টেলিমেডিসিন শব্দটি শুনলে মনে হয় প্রযুক্তিগত কোন চিকিৎসা বা রোবোটিক কোন চিকিৎসা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আসলে এমন কিছুই নয়। চতুর্থ... Continue

back-pain-tablets

কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি | কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আসলে কোমর ব্যথা এমন একটি সমস্যা, যা শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষের মাঝে দেখা যায়। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যায়... Continue

জিনসেং এর উপকারিতা

জিনসেং এর উপকারিতা কি ?

ভেষজ ও ঔষধি গুনের জন্য জিনসেং এর উপকারিতা অনেক। সারা বিশ্বজুড়ে হারবাল চা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বিশ্বে যত প্রকারের হারবাল চা রয়েছে তার মধ্যে জিনসেং অন্যতম। তবে... Continue

রোজা রেখে রমজানে সুস্থ থাকার উপায়

রোজা রেখে রমজানে সুস্থ থাকার উপায়

মুসলিম বিশ্বের সিয়াম সাধনার মাস হলো রমজান মাস। এই রমজানে প্রখর রোদে রোজা রেখে সারাদিন অভুক্ত থাকার পর অনেকেই ইফতারে ভুল খাবার খেয়ে ফেলেন। শুধু ইফতারেই নয় বরং... Continue

আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়

আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়?

আমাদের মধ্যে জানতে চাই যে আয়রন ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয়? এর অবশ্য একটা কারণ হলো সাধারণত মহিলারা বিয়ের পর একটু মুটিয়ে যায় যার কারণ হিসেবে ধরা হয়... Continue

সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার করা যাবে কি

সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার করা যাবে কি না

সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার ব্যবহার করা যাবে কিনা সেটা নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে। প্রাচীনকালে যখন লুব্রিকেন্ট জেল বলে কোন কিছু ছিল না তখন সহবাসের সময়... Continue