কোমল পানীয় এর ক্ষতিকর দিক

গরমে তৃষ্ণা থেকে বাঁচার জন্য, খাবার হজমের মাধ্যম হিসেবে অথবা খাবার প্রিয় মানুষের আত্মতৃপ্তি ও সতেজতার জন্য কোমল পানীয় এর ক্ষতিকর দিক না জেনেই প্রায়ই আমরা কোমল পানীয় বা soft drinks পান করে থাকি। ছোট থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের কাছেই কোমল পানীয় একটি মুখরোচক খাদ্য। প্রথমত এই কোমল পানীয় এর বাজারজাতকরণ করা হয় সতের শতকের দিকে পশ্চিমা বিশ্বে ,তখন এই পানীয় তৈরি করা হতো পানি, লেবু আর মধু একত্রীকরণ করে। পরবর্তীতে প্রযুক্তির উৎকর্ষ বিকাশের সাথে সাথে এই পানীয় আরো সুস্বাদু, দৃষ্টিনন্দন এবং রুচিসম্মত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে নানান ধরনের রাসায়নিক উপাদান। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি , আমরা কি খাচ্ছি? এই পানীয় আমাদের শরীরে কীরূপ প্রভাব ফেলবে? 

Ask Question
কোমল পানীয় এর ক্ষতিকর দিক

কোমল পানীয় এর ক্ষতিকর দিক

হাভার্ড ইউনিভার্সিটির টি.এইচ. চ্যান. স্কুল অব পাবলিক হেলথ কোমল পানীয় নিয়ে  চালানো গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে –

চিনি দিয়ে প্রস্তুতকৃত কোমল পানীয় পানের কারনে অন্য কোন কারণ ব্যতিত তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে গেছে। হাভার্ড গবেষণা মতে, নিয়মিত দুইয়ের অধিক কোমল পানীয় পানে আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে ২১ শতাংশ।    \

Honey Sponsored

আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন স্যালাইন খাওয়ার উপকারিতা

চলুন জেনে নেয়া যাক   কোমল পানীয়  আরও যেসব ক্ষতিসাধন করে থাকেঃ

ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানঃ কোমল পানীয় হচ্ছে একধরনের তরল পানীয়বিশেষ। এতে মিষ্টি ও সুগন্ধি জাতীয় পদার্থ , দ্রবীভূত কার্বন সমৃদ্ধ পানি, ফলের রস সংমিশ্রিত থাকে। এই উপাদানগুলো ব্যতিত আরো যে উপকরণগুলো কোমল পানীয়তে বিদ্যমান থাকে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন তা হলো অতি মাত্রায় ক্যাফেইন, কৃত্রিম রঙ, ঘন চিনি, ইথিলিন গ্লাইকন,  অপিয়েড, ফসফরিক এসিড, সিলডেনাফিল সাইট্রেট এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান দ্রবীভূত থাকে। এই উপাদানগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

কোমল পানীয়তে দ্রবীভূত রাসায়নিক উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাবঃ      

ওজন বৃদ্ধি করেঃ গবেষণায় প্রমানিত কোমল পানীয় এর স্বাদ মিষ্টি করার জন্য স্যাকারিন, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রেজ ব্যবহৃত হয় এবং কোমল পানীয় এর একটি ক্যানে বা বোতলে বিদ্যমান ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ১০ চামচ চিনির সমান। এতো বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খেলে ক্যালরি বার্ন করতে সপ্তাহে চার ঘন্টারও বেশি ব্যয়াম করতে হব। সাধারণত এতো দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করা হয়ে ওঠে না। যার ফলশ্রুতিতে  চিনি দেহে ফ্যাট হিসেবে জমা হয় আর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

দাঁতের গর্তজনিত ক্ষয়ঃ উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহনের ফলে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস ও হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাব্য কারন হয়ে দাঁড়ায় সেই সাথে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।   এছাড়াও দাঁত আমাদের মহা মূল্যবান অঙ্গ। নিয়মিত কোমল পানীয়  গ্রহনের ফলে দাঁতের গর্তজনিত ক্ষয় হয়।

আরও পড়ুনঃ পেয়ারার উপকারিতা কি কি জানলে অবাক হবেন

হজমের বিপরীতে গ্যাস সৃষ্টিঃ আমাদের সবচেয়ে প্রচলিত একটি ধারনা হলো কোমল পানীয় বা soft drinks আমাদের খাবার হজমে সহায়তা করে। এটি সম্পূর্ণ ভূল ধারনা। খাবার খুব ভালো হজমের সহায়ক তাপমাত্রা হলো ৩৭° সেন্টিগ্রড। ভরপুর খাওয়ার পর পাকস্থলীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছায় তখন আমরা যখন কোমল পানীয় পান করি তখন পুরো হজমের প্রক্রিয়াটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন হজমের বদলে পাকস্থলীতে খাবার পচনের সৃষ্টি করে আর এই খাবার থেকে গ্যাসের সৃষ্টি হয়।                 

ইথিলিন গ্লাইকন এর মারাত্মক প্রভাবঃ কোমল পানীয়তে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহৃত হয় এন্ট্রি ফ্রিজার হিসেবে। ইথিলিন গ্লাইকল হলো আার্সেনিক স্বরুপ বিষ। আর্সেনিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। এই রাসায়নিক পর্দাথের বিষক্রিয়ার ফলে চর্মরোগ, লিভারের জটিলতা দেখা দেয়, ত্বকে বিষক্রিয়া,   মুত্রাশয়ে গোলযোগ, কিডনি জটিলতা সৃষ্টি করে। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, পুরো বিশ্বে বিগত কয়েক দশকে সব বয়সী মানুষের কিডনি রোগ বেড় যাওয়ার প্রধান কারন হলো কোমল পানীয় পান৷            

ক্যাফেইন এর  ক্ষতিকারক প্রভাবঃ কোমল পানীয়তে থাকা অবশ্যকীয় উপাদান ক্যাফেইন আসক্তির অন্যতম কারন। যা মানুষেকে বার বার খাওয়ার ইচ্ছে জাগায়। ক্যাফেইন  স্নায়ুতন্ত্রকে সাময়িকভাবে উত্তেজিত করে পরে অবসন্নতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও বার বার ক্যাফেইন গ্রহনের ফলে অনিদ্রাজনিত রোগ, স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের ব্যঘাত, স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দেয়।                

গবেষণায় দেখা যায়, বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহনে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত, অকাল প্রসব, জন্মগত শিশুর শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।       

আরও পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায় | কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় কি

ফসফরিক এসিডের  প্রভাবঃ Soft drinks বা কোমল পানীয়তে ফসফরিক এসিড ব্যবহৃত হয় পানীয়কে  ঝাঁঝালো স্বাদ সৃষ্টির  জন্য। শরীরে দীর্ঘদিন যাবৎ ফসফরিক এসিড থাকলে তা হাড়ের ক্ষতি সাধন করে হাড়কে ভঙ্গুর করে দেয় এবং দাঁতের এনামেলেও ক্ষতিকারক হিসেবে কাজ করে।         

ক্রোনিক কিডনি রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনাঃ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনিস্টিউট অব এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সার্ভিসের এপিডার্মিয়োলজির একটি শাখা গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়  দিনে দুই বা তার অধিক কোলা পানীয় পানে ক্রোনিক কিডনি রেগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।       

পুষ্টি  কমতি ও পানি শূন্যতাঃ অধিক পরিমাণে কোমল পানীয় পানে হতে পারে পুষ্টির কমতি ও পানি শূন্যতা।   সাধারণত আমরা অনেকেই  খাওয়ার সময়  তৃষ্ণা পেলেই পানির পরিবর্তে কোমল পানীয় পান করি কিন্তু তৃষ্ণা মেটাতে ফলের জুস, পানি  কিংবা কম ফ্যাট মিল্কের তৈরি জুস বা শরবত খাওয়া হয়না। সে জন্য আমরা ফল ও দুধ থেকে যে পুষ্টিগুন পেতাম তা থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত  করছি; সেই সাথে পানি না খেয়ে পানি শূন্যতায় ভোগছি । এছাড়াও কোমল পানীয়তে বিদ্যমান ফসফরিক এসিড আমাদের দেহের ম্যগনেশিয়াম  ও ক্যালশিয়ামের মাত্রা কমায়। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীর গঠনের জন্য খুব গুরুত্ব বহন করে এবং  হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। আর ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় নরম ও পেশী সংকোচন হয়।

কোমল পানীয় সতেজকারক হিসেবে যতই পান কারক হোক না কেন তা অল্প সময়ের জন্য তৃষ্ণা মিটে ও সতেজ করে।  কিন্তু এই কোমল পানীয় পান থেকে সৃষ্টি হয় মানুষের দৈহিক নানান সমস্যা ও রোগ। পরিশেষে তা মৃত্যু ঝুঁকিতে তরান্বিত করে।

তাই কোমল পানীয় পান করাকে প্রাধান্য দেওয়ার আগে উপরে বর্নিত কোমল পানীয় এর ক্ষতিকারক দিকগুলো বিবেচনা করে নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা দরকার এবং কোমল পানীয় পান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। 

RelatedPosts

back-pain-tablets

কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি | কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কোমর ব্যথার ট্যাবলেট কি এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আসলে কোমর ব্যথা এমন একটি সমস্যা, যা শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষের মাঝে দেখা যায়। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যায়... Continue

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

সাদা স্রাব কী? মেয়েদের সাধারণ শারীরিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া। তবে এই সমস্যার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিশোরী মেয়েদের ক্ষেত্রে। পিরিয়ডের... Continue

ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ই ক্যাপ ক্যাপসুল মূলত ভিটামিন ই মুখে খাওয়া হয় এবং প্রয়োজনে বাহ্যিকভাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী ই-ক্যাপ ক্যাপসুল এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন ই... Continue

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়?

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়? ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়? চুল পড়া কমায়? নাকি বন্ধ্যাত্বের সমস্যা রোধ করে? আজকে আমরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। ভিটামিন ই ক্যাপসুল... Continue

ওজন কমানোর উপায়

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় গুলো জেনে নিন

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় জানতে চান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। কারণ ঘরে বসে ওজন কমানোর উপায় আমরা সবাই জানতে চাই। কারণ শরীরের ওজন বাড়াতে... Continue

মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জেনে নিন

মনকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় এর কথা মাথায় আসলেই আমাদের একটা গান মনে পড়ে যায়, 'মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে রে, তুই সে আমার মন'। আমি যেটা করতে চাই... Continue