কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
কালোজিরা অতি জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের উপশম হিসেবে এর ব্যবহার শোনা যায়। কালোজিরার শুধু ঔষধী গুণ নয় মসলা হিসেবেও রয়েছে এর অনেক জনপ্রিয়তা। কালোজিরার উপকারী গুণ নিয়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন: “ তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি রয়েছে”।
পুষ্টিগুণে অনন্য। তাই এর অনেক উপকারী দিকের বিশ্লেষণ রয়েছে মেডিকেল স্বাস্থ্যমতে। কৃষিবিজ্ঞানে কালোজিরাকে বলা হয় কালো হীরা। কালোজিরার পুষ্টি বিভাগে রয়েছে বেটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন-ই, আয়রন, ক্যালশিয়াম ও প্রোটিন ও ফাইবার। তাছাড়া অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামটরী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনটেস্টাইনাল কিউমারিন, ফ্ল্যাভোনয়েডস, স্টিলবেনয়েডস, ফাইটোস্টেরল, পলিসিটিলিনস, ট্রাইটারপিন্স এবং সেপোনিন্স। কালোজিরা ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়ায় ফলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাই এন্টি-ডায়াবেটিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কালোজিরা হার্টের জন্য উপকারী ইহার ফাইবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) এর মাত্রা হ্রাস করে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য যা রক্তনালীর ব্লক তৈরিতে বাধা দেয় ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস করে।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরার তেল এর উপকারিতা
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা
ফাইবার পেটের চর্বি কমানোয় ভূমিকা রাখে, পেটের চর্বি বহন করে সবচেয়ে বিপজ্জনক ফ্যাট। পেটের চর্বি, ভিসারাল ফ্যাট হিসাবেও পরিচিত। যা হৃদপিণ্ড এবং লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ঘিরে থাকে। ফলে ইহা হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ফলে হার্টের অবস্থা ভালো থাকে।অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট র্যাডিক্যাল স্ক্যাভেন্জার অর্থাৎ ফ্রি র্যাডিকাল খাদক হিসেবে পরিচিত ফলে যা কোষ ধংস রোধ সহায়তা করে। গবেষণাগারে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ক্যান্সারের রোধে ভূমিকা রাখে ফ্রি র্যাডিক্যাল নিঃশেষ করার মাধ্যমে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ডায়েটে নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার থাকে তাদের মধ্যে হার্টের সমস্যা, উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের হার কম।তাছাড়া এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গবেষণায় কালোজিরার গুণাবলী স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী ভেষজ হিসেবে প্রমাণিত। ১৯৬০ সালে মিসরের একদল গবেষক বলেন, কালোজিরায় নাইজেলের উপাদান থাকায় ইহা হাঁপানি রোগের উপশমে কার্যকরী।জার্মানির গবেষকরা বলেন, কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইকোটিক গুণাগুণ। ফলে এটি বোনম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উওেজিত করে এবং ইন্টারফেরন কোষগুলোর ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ফলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।কালোজিরায় থাকে থাইমোকুইনিন যা পারকিনসন ও ডিমেনসিয়ায় আক্রান্তদের দেহে উৎপন্ন টক্সিন এর প্রভাব থেকে নিউরনের সুরক্ষার জন্য কাজ করে।। গবেষণায় পাওয়া গেছে, প্রতিদিন ২ গ্রাম কালোজিরা খেলে রক্তের সুগার লেভেল কমায়, ইনসুলিনের বাঁধা দূর করে এবং অগ্নাশয়ে বিটা কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা । জেনে নিন রসুন খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল অ্যাজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফলে শরীরের ঘা বা ফোঁড়া অল্প সময়েই সেরে যায়। তাই কালোজিরাকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বা অনাক্রম্য করতে বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। তাই আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণার ভিত্তিতে কালোজিরাকে বলা হয় প্রাকৃতিক ঔষধ।
যে সকল রোগে কালোজিরা ব্যবহার হয়
১. স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার রয়েছে। এটি মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় ফলে মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষের কর্মক্ষমতা বাড়ে।
২. লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন ধংসে কালোজিরার ব্যবহার হয়।
৩. কালোজিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলপড়ারোধ করে।
৪. কোষকে সতেজ রাখার মাধ্যমে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫. ডায়বেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৬. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা ব্যবহার হয়।
৭. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিতে রয়েছে এর ব্যবহার।
৮. পক্ষাঘাত (প্যারালাইসিস) ও পারকিনসন রোগে কালোজিরার তেল উপকারী।
৯. স্নায়ুবিক দুর্বলতায় ও ডিমেনশিয়ায় এর উপকারীতা পাওয়া গেছে।
১০. শুলবেদনা ও প্রসূতি রোগে কালোজিরার অত্যধিক ব্যবহার রয়েছে।
১১. কালোজিরা রিউম্যাটিক ফিভার ও কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
কালোজিরার আরো নানাবিধ ব্যবহার আজ চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্বীকৃত সুতরাং কালোজিরা প্রাকৃতিক মহৌষধ হিসেবে সময়ের সাথে সাথে আজ প্রমাণিত।