অ্যাক্টেরিয়া
ফার্মাকোলজি
অ্যাক্টেরিয়া ক্যাপসুল এক ধরণের প্রোবায়োটিক হারবাল ঔষুধ। এটি মূলত মানুষের অন্ত্রের এপিথেলিয়াল সেল এর ওপর কাজ করার মাধ্যমে অন্ত্রের প্রদাহ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি পরিপাকতন্ত্রে অবস্থিত ল্যাক্টিক এসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে পিএইচ কমায় এবং এভাবে এতে অবস্থিত ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে। তাছাড়াও এটি ক্ষতিকারক জীবাণুদেরও রিসেন্টর বাইন্ডিং এর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে থাকে।
ল্যাকটোব্যাসিলাস এসিডোফিলাস এবং বিষিডোব্যাকটেরিয়াম বিষিডাম প্রবাহিত রক্তকণিকার সাধারণ প্রতিরোধক, ফ্যাগোসাইটিক কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে। এই প্রভাব রোটাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নবজাতক শিশুর IaA ত্বরান্বিত করে। ল্যাক্টিক এসিড ব্যাকটেরিয়া যেমন ল্যাকটোব্যাসিলাস এসিডোফিলাস, ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা প্রদর্শন করে। এরা ধাতব আয়ন সমূহের (যেমন- পৌঁহ, কপার) চিলেশন করে এবং প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেনকে ধ্বংস করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
প্রোবায়োটিক এর ইতিহাস
প্রোবায়োটিক এক ধরনের আণুবীক্ষণিক জীব যেখানে ল্যাকটোব্যাসিলাস স্পিসিস বিফিডোবাক্টেরিয়াম স্পিসিস এবং ইস্ট প্রোবায়োটিক এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। এরা মূলত পোষকের অম্লীয় মাইক্রোফ্লোরা ভারসাম্য আনার মাধ্যমে পোষকের কল্যাণ সাধন করে থাকে। ল্যাকটোব্যাসিলাস এসিডোফিলাস, ল্যাকটোব্যাসিলাস গোত্রের একটি সদস্য। এর নামকরণ করা হয়েছে ল্যাক্টো অর্থাৎ দুগ্ধ’ আর ব্যাসিলাস মানে “রড’ এর মত আকৃতি থেকে এবং এসিডোফিলাস মানে এসিডের প্রতি আসক্তি।
ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাবার যেমন দুগ্ধজাত মাছ এবং মাংসে পাওয়া যায়। তাছাড়া এটি মানুষ এবং পশু পাখির অন্ত্র, মুখ ও যোনিতে অবস্থান করে। এইসকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো অন্ত্র এবং যোনিতে অবস্থান করে সেসকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো ধ্বংস করতে থাকে।
দই তৈরিতে যে সকল ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস। ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম বুলগেরিয়ার চিকিৎসক স্ট্যামেন গ্রিগরভ এটি আবিষ্কার করেছিলেন। বুলগেরিয়ার নাগরিক হওয়ায় সেই দেশের নাম অনুযায়ী এই ব্যাকটেরিয়ার নামকরন করা হয়েছে।
এই ব্যাকটেরিয়া অঙ্গ সূত্রে গ্রাম পজিটিভ রড যা একটি লম্বা সুতার মত দেখায়। এরা স্পোর তৈরি করে না। বরং দুধের সাথে যুক্ত হয়ে ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন করে যা দুধ সংরক্ষণের সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া ল্যাকটোজ ভাঙতে এরা অত্যন্ত সহায়ক। এর ফলে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স রয়েছে তাদের জন্য এ ব্যাকটেরিয়া প্রচন্ড উপকারী।
কারণ তাদের শরীরে ল্যাকটোজ ভাঙ্গার জন্য যে এনজাইম দায়ী তা অনুপস্থিত। এছাড়া দই প্রস্তুতিতে ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস অ্যাসিটালডিহাইড উৎপন্ন করে যা দই সুগন্ধময় করতে সহায়তা করে।
বিফিডোব্যাকটেরিয়া সাধারণত মানুষ এবং পশু পাখির মলাশয় অবস্থান করে। যেসকল নবজাতক শিশুরা তাদের মায়ের বুকের দুধ খায় তাদের জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই এই ব্যাকটেরিয়া তাদের শরীরে বসতি স্থাপন করে থাকে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বিফিডোব্যাকটেরিয়া সর্বপ্রথম মায়ের দুধ পান করে শিশুদের মন থেকেই সংগৃহীত হয়েছিল। ইংরেজি অক্ষর Y এর আকৃতি কিংবা বিফিড ফর্মে দেখা যায় বলে এদের নামকরণ করা হয়েছে বিপিডো। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ টি প্রজাতির বিফিডোব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা গেছে।
উপাদান
প্রতিটি অ্যাক্টেরিয়া ক্যাপসুল এবং পাউডারের প্যাকেটে আছেঃ-
- ল্যাকটোব্যাসিলাস এসিডোফিলাস (২ বিলিয়ন)
- ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারিকাস (১ বিলিয়ন)
- বিফিডোবাকটেরিয়াম বিফিডাম (১ বিলিয়ন)
- ফ্লুট্টো-অলিগোস্যাকারাইডস।
অ্যাক্টেরিয়া ক্যাপসুল এর কাজ
অ্যাক্টেরিয়া ক্যাপসুল মূলত নির্দেশিত হয় অণুজীববিরোধী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কারী হিসেবে। তাছাড়া এটি অনেক সময় বদহজমের চিকিৎসায় সেবন করা হয়ে থাকে। অ্যাক্টেরিয়া নির্দেশিতঃ
- অণুজীব বিরোধী হিসেবে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
- ডায়রিয়া প্রতিরোধে
- এলার্জি প্রতিরোধে
- এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে
- রোটাভাইরাস ডায়রিয়ার চিকিৎসায়
- এন্টিবায়োটিক ব্যবহারজনিত ডায়রিয়া
- ক্লোট্রিডিয়ান ডিফিসাইন জনিত ডায়রিয়া এবং
- ট্রাভেলারস্ ডায়রিয়ার চিকিৎসায়।
অ্যাক্টেরিয়া স্যাসেট বা পাউডার নির্দেশিতঃ
- রোটাভাইরাস ডায়রিয়া
- এন্টিবায়োটিক ব্যবহারজনিত ডায়রিয়া
- ক্লোসট্রিডিয়াম ডিফিসাইল জনিত ডায়রিয়া
- ট্রাভেলারস্ ডায়রিয়া
*চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
অ্যাক্টেরিয়ার দাম
অ্যাক্টেরিয়া প্রতি প্যাকেট পাউডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪২ টাকা এবং প্রতিটি ক্যাপসুল এর মূল্য ৪০ টাকা।
অ্যাক্টেরিয়া খাওয়ার নিয়ম
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১ থেকে ২ টি প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল দৈনিক তিনবার অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
শিশুদের জন্য একটি স্যাসেট দৈনিক একবার দুধ অথবা পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা সর্বোত্তম।
ঔষদের মিথষ্ক্রিয়া
এখন পর্যন্ত প্রোবায়োটিক কম্বিনেশন এর অন্যান্য ওষুধের সাথে মিথস্ক্রিয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
অ্যাক্টেরিয়া ক্যাপসুলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে অতিরিক্ত সেবন করা উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে
যেহেতু প্রোবায়োটিক কম্বিনেশন ফিটাসের সিস্টেমেটিক সংবহন তন্ত্র পর্যন্ত পৌছাতে পারেনা, সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালীন এটি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ।
প্রতি নির্দেশনা
যে সকল রোগীর লিভারের সমস্যা রয়েছে কিংবা যাদের পরিপাকতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়।
সংরক্ষণ
২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে শুষ্ক এবং সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন। শিশুরা নাগাল পায় এমন জায়গায় ঔষধ সংরক্ষণ করবেন না।