টেরিমিনেক্স
ফার্মাকোলজি
প্রতিটি টেরিমিনেক্স ওষুধের প্যাকেটে দুইটি স্ট্রিপ থাকে যেখানে ২০০ মিলিগ্রাম মিফেপ্রিষ্টোন সমৃদ্ধ একটি ট্যাবলেট এবং ২০০ মাইকোগ্রাম মিসোপ্রোস্টল সমৃদ্ধ চারটি ট্যাবলেট বিদ্যমান।
মিফেপ্রিষ্টোন: বিভিন্ন প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটি মাত্রা ভেদে প্রয়োগে দেখা গেছে যে নিয়মিত মাসিক ঘটানোর পাশাপাশি এক্সোজেনাস বা এন্ডোজেনাস প্রোজেস্টেরনের ক্রিয়াকে বাধা প্রদান করে। গর্ভকালীন সময়ে ওষুধটি প্রোস্টাগ্লান্ডিনের সংকোচনকে ত্বরান্বিত করতে জরায়ু পেশীকে (মায়োমেট্রিয়াম) উদ্দীপিত করে। মিফেপ্রিস্টোন এন্টিগ্লুকোকটিকয়েড ও কিছুটা এন্টিঅ্যান্ড্রোজেনিক কার্যকারিতা দেখায়।
মিসোপ্রোস্টল: মায়োমেট্রিয়াম কোষ এবং নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাথে প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোস্টাগ্লান্ডিন E1 মায়োমেট্রিয়াসের সংকোচন ঘটায়। এই প্রতিক্রিয়ার ফলে ক্যালসিয়ামের ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। প্রোস্টাগ্লান্ডিং রিসেপ্টরের সাথে প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মিসোপ্রোস্টল সারভিক্সকে নমনীয় করে এবং জরায়ুর সংকোচন করে। ফলে জরায়ুর উপাদানকে বের হতে সাহায্য করে।
টেরিমিনেক্স ট্যাবলেট এর কাজ
এম এম কিট সর্বোচ্চ ৯ সপ্তাহ অথবা ৬৩ দিনের গর্ভবতীদের গর্ভপাত করানোর ক্ষেত্রে এবং মাসিক মাসিক নিয়মিতকরণে নির্দেশিত হয়ে থাকে।
টেরিমিনেক্স এর দাম
টেরিমিনেক্স এর ৫ টি ট্যাবলেটের প্রতিটি বক্সের মূল্য ৩০০ টাকা।
টেরিমিনেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের সঠিক বয়স এবং গর্ভাবস্থা নির্ণয়ে সক্ষম ডাক্তাররাই গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে এম এম কিট ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারদের অবশ্যই অসম্পূর্ণ গর্ভপাত অথবা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে অস্ত্রোপচার / এমভিএ (ম্যানুয়েল ভ্যাকুউয়াম এসপিরেশন) অথবা রোগীকে রক্ত প্রদান এবং রিসাসিটেশন করার সবধরণের সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে । অন্যথায় পরিস্থিতি বিপদজনক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এম এম কিট সেবনের জন্য নিচের ধাপ গুলি অনুসরণ করুনঃ
দিন -১ঃ গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। এরপর চিকিৎসকের অনুমতি ক্রমে কোনো ক্লিনিক, মেডিকেল অথবা হাসপাতালে ডাক্তারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ১ টি মিফেপ্রিস্টোন ট্যাবলেট মুখে খাবেন।
দিন -২ঃ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ২৪-৪৮ ঘন্টা পর মিসোপ্রোস্টল ২০০ মাইক্রোগ্রামের ৪ টি ট্যাবলেট দুই টি করে দুই মাড়ির বা গালের নিচে রেখে দিন। । ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মিসোপ্রোস্টল সমৃদ্ধ এই চারটি ট্যাবলেট গ্রহণের পর রোগীর তলপেটে ব্যথা অথবা পরিপাক তন্ত্রের কোন সমস্যা জনিত কারণে ঔষধের দরকার হতে পারে। খুব বেশি অস্বস্তি, অতিরিক্ত রক্তপাত অথবা কোন প্রতিক্রিয়া ঘটলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি কোন ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয় তবে চিকিৎসক সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেবেন।
দিন ১০ থেকে ১৪ঃ মিফেপ্রিস্টোন ট্যাবলেট গ্রহণের ১০ থেকে ১৪ দিন পর পুনরায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এটি অত্যন্ত জরুরী। কারণ গর্ভপাত ঘটানোর পর আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে হয় যে ভেতরে ভ্রুনের কোন টিস্যু থেকে গেছে কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়।
যারা তারপরও গর্ভবতী হয়ে যান তাদের ক্ষেত্রে ভ্রুন বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভপাত সফলভাবে না হলে, মাসিক নিয়মিত না হলে এবং যদি ভেতরে ভ্রূণের কোন অংশ থেকে যায় তবে অস্ত্রোপচার / এমভিএ (ম্যানুয়েল ভ্যাকুউজা এসপিরেশন) করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। সফলভাবে গর্ভপাত না হওয়া সত্ত্বেও যদি অস্ত্রপ্রচার না করা হয় তবে সেখান থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া দ্বিতীয় দিন সেবনের পর অনেকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে যা শরীরে রক্ত শূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে অনেক সময় মৃত্যু হয়ে থাকে।
ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া
মিফেপ্রিষ্টোনঃ যদিও নির্দিষ্ট কোন ঔষধ বা খাবারের সাথে মিফেপ্রিস্টোনের প্রতিক্রিয়ার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই ঔষধটির বিপাকক্রিয়া cyp 3A4 দ্বারা সম্পন্ন হয়। তাই কিটোকোনাজল, ইট্রাকোনাজল, ইরাথ্রোমাইসিন এবং আঙ্গুরের রস মিফেপ্রিস্টোনের বিপাকক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে (মিফেপ্রিস্টোনের মাত্রা রক্তরসের বাড়িয়ে দেয়)।
মিসোপ্রোস্টলঃ রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের প্রশমনে ব্যবহৃত অ্যাসপিরিনের সাথে মিসোপ্রোস্টল তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অ্যাসপিরিনের নির্দেশিত মাত্রার শোষণ, রক্তে ঔষধের মাত্রা এবং প্লাটিলেট বিরোধি কার্যকারিতায় মিসোপ্রোস্টল কোন প্রভাব ফেলে না।
টেরিমিনেক্স এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
টেরিমিনেক্স সেবনের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে ক্লিনিক্যালি এগুলো স্বাভাবিক এবং সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মিফেপ্রিস্টোন যোনিপথের রক্তক্ষরণ (ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং) এবং জরায়ুর সংকোচনের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ ঘটায়। বমি, ডায়রিয়া, পেলভিক পেইন, অজ্ঞান হওয়া, মাথা ব্যথা, ঘুম ঘুম ভাব ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
মিসোপ্রোস্টল পরিপাকতন্ত্রীয় পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা, বদহজম, মাথাব্যথা, বমি এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য। এছাড়াও কাপুনি, হাইপারথারমিয়া, ঘুম ঘুম ভাব, জরায়ুর সংকোচনের ফলে বেথ্যা, তীব্র রক্তপাত, শক্ পেলভিক পেইন ও ইউটেরাইন রাপচার হতে পারে।
এ সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে
মিফেপ্রিস্টোন মাসিক নিয়মিতকরণের (গর্ভধারণের ৬৩ দিনের মধ্যে) জন্য নির্দেশিত এবং গর্ভকালীন সময়ে মিফেপ্রিস্টোনের অন্য কোন ব্যবহার নির্দেশিত নয়। তবে মিফেপ্রিস্টোন মাতৃদুগ্ধে নিঃসৃত হয় কিনা জানা যায় নি। যেহেতু বাচ্চাদের উপর মিফেপ্রিস্টোনের কোন প্রতিক্রিয়া আছে কিনা জানা যায় নি, সেহেতু দুগ্ধদানকারী মা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করবেন যে মিফেপ্রিস্টোন সেবনের পরবর্তী কিছু দিন তিনি দুগ্ধদান থেকে বিরত থাকবেন কি না। তবে মিসোপ্রোস্টল মাতৃদুগ্ধে নিঃসৃত হয় কিনা তা জানা যায়নি সেহেতু দুগ্ধদানকারী মায়েদের ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ মিসোপ্রোস্টল এসিডের নিঃসরণ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডায়ারিয়া ঘটাতে পারে। যকৃতের কার্যক্রমে বাধাগ্রস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে মিসোপ্রোস্টল স্বল্পমাত্রায় সেবন করতে হবে।
মাত্রাধিক্যতা
মাসিক নিয়মিতকরণের জন্য ৬০০ মি.গ্রা. এর ৩ গুণ বেশী মাত্রায় টেরিমিনেক্স গর্ভবতী নয় এমন মহিলাদের দিয়েও তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। যদি কোন রোগী মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করে তবে তার ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনাল ফেইলিওর এর লক্ষণসমূহ দেখা যায়।
মাত্রাতিরিক্ত মিসোপ্রোস্টল সেবনের ফলে সাধারণত যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায়, সেগুলো হলঃ
- ঘুম ঘুম ভাব,
- কাঁপুনি,
- খিচুনী,
- শ্বাসকষ্ট,
- ডায়ারিয়া,
- জ্বর,
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া,
- নিম্ন রক্তচাপ অথবা
- ব্রাডিকার্ডিয়া।
সাপোর্টিভ পদক্ষেপ এর মাধ্যেমে এসব লক্ষণসমূহের চিকিৎসা করা উচিত। যেহেতু টেরিমিনেক্স এর বিপাক অনেকটা ফ্যাটি এসিডের মতোই, তাই মাত্রাতিরিক্ত টেরিমিনেক্স ব্যবহারের চিকিৎসার ডায়ালাইসিস কার্যকর নাও হতে পারে।
সতর্কতা
গর্ভবতী রোগী ব্যতীত অন্য কোন রোগীকে টেরিমিনেক্স দেয়া উচিত না। মিফেপ্রিস্টোন ও মিসোপ্রোস্টলের সমন্বয় কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কারণে রোগীকে দেয়া হয়, যা অন্য রোগীর ক্ষেত্রে উপযুক্ত নাও হতে পারে। এছাড়া গর্ভবর্তী বা গর্ভবর্তী হতে চান এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে। মিফেপ্রিস্টোন দিয়ে চিকিৎসা শুরুর পূর্বে যে কোন ইনট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (IUD) অপসারণ করা উচিত। মিফেপ্রিস্টোন ও মিসোপ্রোস্টলের সমন্বয়ে যদি মাসিক নিয়মিতকরণ ঘটাতে না পারে, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ ঘটাতে হবে। টেরিমিনেক্স ব্যবহারের পর এবং চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার পর ও যদি গর্ভপাত সফল না হয় তবে সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে। এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে হবে।
সুতরাং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই নিজে থেকে এম এম কিট ট্যাবলেট সেবন করতে যাবেন না।
সংরক্ষণ
আলো থেকে দূরে, ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রাখুন। সকল ওষুধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।